সিলেট ১৩ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৯শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১২ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৫৭ অপরাহ্ণ, জুন ৭, ২০১৯
কানাইঘাট উপজেলার ৯নং রাজাগঞ্জ ইউনিয়নে গত মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে গরীব দুস্থ্যদের জন্য সরকার কর্তৃক বরাদ্ধকৃত ভিজিএফ চাল আটকের ঘটনা নিয়ে চলছে তোলপাড়। আটককারী ব্যক্তিদের দাবী চাল গুলো কালোবাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়ার পথিমধ্যে তারা আটক করে। অপর দিকে স্থানীয় পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ৯ মেম্বার ও ৩ মহিলা মেম্বারের দাবী ঈদের পূর্বের দিন আর বৃষ্টির কারনে সুবিধা ভোগীদের মাঝে দ্রুত পৌঁছে দিতে ইউনিয়নের নয়াবাজারে এবং পরিষদে চালগুলো বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মোবাইল ফোনে বিষয় অবগত করেন চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মৌখিক নির্দেশেই ইউনিয়নের ১ থেকে ৫ নং ওয়ার্ডের সুবিধাভোগীদের চাল ইউনিয়ন পরিষদে এবং ৬-৯ নং ওয়ার্ডের চালগুলো স্থানীয় নয়াবাজারে বিতরণের জন্য সিদ্ধান্ত মোতাবেক নিয়ে যাওয়ার পথে খালোপার ময়ূরমাটি নামক স্থানে চালবাহী গাড়ীর গতিরোধ করে এলাকার দুষ্কৃতিকারীরা। সে সময় তারা ৭ বস্তা চাউল নিয়ে যায় এবং চাউলবাহী ট্রাক্টরটি আটক করে রাখে। চালবাহি ট্রাক্টরের সাথে থাকা সংশ্লিষ্ট ৪টি ওয়ার্ডের মেম্বার ও ৪ জন গ্রাম পুলিশকে নাজেহাল করার চেষ্টা করে তারা। অপর দিকে ভিজিএফ এর চাল নিতে আসা সুবিধাভোগীরা চাল নিতে স্থানীয় নয়াবাজারে ভিড় করেন বিকেল ৩টা থেকেই। চাল না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয় তাদের। ভিজিএফ এর ৫০ বস্তা চালবাহী গাড়ী রাস্তায় আটক করে কালোবাজারে বিক্রির নাটক সাজানোর ঘটনা ও ইউপি সদস্য মিনহাজ উদ্দিনকে মারধর করে আওয়ামী নামধারী সন্ত্রাসী লুৎফুর রহমান, শহিদুল ইসলাম, দুদু মিয়া, মুসলেহ উদ্দিন, ছালিম আহমদ, জাহেদ আহমদ, শিব্বির আহমদ, গোলাম আলীসহ সঙ্গবদ্ধ একটি চক্র। চাল আটকের বিষয়টি জানতে পেরে চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানিয়া সুলতানাকে অবহিত করলে তিনি উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা (এসিল্যান্ড) কে ঘটনাস্থলে প্রেরণ করেন। পাশাপাশি থানার ওসিকে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি থানার এসআই কাউসারকে ঘটনাস্থলে পাঠান। এসিল্যান্ড ও এসআই কাউসার ঘটনাস্থলে এসে চাল আটকের বিষয়টি সত্যতা পাওয়ার পর। চালগুলো সুবিধাভোগীর মাঝে বিতরনের চেষ্টা করলে এতেও বাধা হয়ে দাড়ায় উল্লেখিত দুস্কৃতিকারীরা। পরে বাধ্য হয়ে সুবিধাভোগীদের জন্য বরাদ্ধকৃত চালগুলো বিতরণ না করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। নয়াবাজার থেকে খালিহাতে বাড়ি ফিরেন সহস্রাধিক অসহায় দুস্থ্য সুবিধাভোগীরা। এঘটনায় রাজাগঞ্জ ইউপির চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বাদী হয়ে কানাইঘাট থানায় গত মঙ্গলবার রাত অনুমান ১০টার দিকে ৭ দুস্কৃতিকারীদের নাম উল্লেখ ও ১০/১২ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অপর দিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শীর্ষন্দু পুরকায়স্থ বাদী হয়ে কাউকে আসামী না করে ভিজিএফ এর চাল বিতরণে অব্যাবস্থাপনার দায় ও সঠিক তদন্তদাবী করে একটি এজাহার দাখিল করেন। কিন্তু পরে অদৃশ্য চাপের মুখে সেই এজাহারটি থানা থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে নতুন করে শুক্রবার রাতে আবার আরেকটি কল্পিত এজাহার দাখিল করেন তিনি। স্থানীয় জনসাধারণের অভিযোগ, চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের ফাঁসানোর জন্য বিতরনের জন্য নিয়ে যাওয়া ভিজিএফ এর চাল আটক করে কালোবাজারে বিক্রির চেষ্টার অভিযোগের নাটক সাজিয়েছে কতিপয় এইসব ব্যক্তিরা। ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য মিনহাজের সাথে পূর্ব শত্রুতার জেরেই নাটকটি মঞ্চস্থ করা করা হয়। কিন্তু যারা চাল আটক করেছিলেন তাদের পক্ষ থেকে কেউই এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করেননি। এদিকে আটককৃতদের দাবী অনুযায়ী ৫০ বস্তা চাল আটকের কথা বলা হলেও থানায় আটককৃত চালের পরিমান এখন ৪৩ বস্তা বলে জানিয়েছেন এসআই কাউসার আহমদ। প্রশ্ন হচ্ছে ৫০ বস্তা চাল আটক করা হলে বাকি ৭ বস্তা চাল গেলো কোথায় ? মঙ্গলবার রাতে পিআইও শীর্ষন্দু পুরকায়স্থ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, উপজেলা প্রশাসন থেকে দেওয়া অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বা কোন ইউপি সদস্যদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। তদন্ত পূর্বক চাল বিক্রির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অথবা চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের ফাঁসানোর জন্য ভিজিএফ এর চাল যদি আটক করা হয়ে থাকে তাহলে যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু ৩ দিনের নাটকীয়তার পর শুক্রবার নতুন এজাহারে চেয়ারম্যান-মেম্বারদের আসামী করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে এলাকায়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের জনসাধারণের অভিযোগ গরিবের চাল যারা আটক করে কালোবাজারের বিক্রির নাটক সাজিয়েছে তারা এলাকার চিহ্নিত খারাপ লোক, তাদের বিরুদ্ধে কানাইঘাট থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। ভিজিএফ এর চাল আটকের ঘটনায় উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হওয়ায় তারা এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় সংসদ সদস্য হাফিজ মজুমদারসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে দেখা করে নাটকের বিষয়টি তুলে ধরেন। ৯টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় মেম্বারগণ বলেন, চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম সহ ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে ভিজিএফ এর চাল আত্মসাতের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এ ভাবে যদি প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে জনপ্রতিনিধিদের হেনস্থা করা হয় তাহলে চেয়ারম্যানরা কোন অবস্থাতেই মেনে নেবেন না। প্রয়োজনে উপজেলা পরিষদে বয়কট করা হবে। স্থানীয় জনসাধারণ জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান মেম্বারদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি প্রত্যাহারের দাবীতে শনিবার স্থানীয় নয়াবাজারে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়েছে। প্রয়োজনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পরে ডিসি অফিস ঘেরাও কর্মসূচী দেওয়া হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd