সিলেট ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ, মে ২১, ২০১৯
চলছে মাহে রমজান। আরো দিন পনেরো পরেই ঈদ। চলমান রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। বাসা-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরি, রাস্তাঘাটে ছিনতাই, ঈদকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি ও অজ্ঞান-মলমপার্টির তৎপরতা অনেক বেড়ে যায়। এছাড়া জাল নোটের কারবারিরা সক্রিয় হয়ে ওঠে রমজানের সময়। এ কারণে এই ধরণের অপরাধ ঠেকাতে পুলিশ কৌশলী তৎপরতা শুরু করেছে।
এসএমপির পাশাপাশি সারাদেশেও এসব অপরাধ ঠেকাতে পুলিশ সদর দফতর থেকে দেশের সব রেঞ্জ ডিআইজি ও পুলিশ সুপারদেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. জেদান আল মুসা বলেন, ‘রমজানকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়েছে। বিশেষ করে চুরি-ছিনতাই-চাঁদাবাজি ও অজ্ঞান-মলমপার্টি প্রতিরোধে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি পোশাকি পুলিশের তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। জাল নোটের কারবারিদের ধরতেও অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’
সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, রমজানের প্রথম দিন থেকেই সাধারণত চুরি ও ছিনতাই বেড়ে যায়। গ্রিল কাটা চোরের উৎপাত ও পথে-ঘাটে ছিনতাইয়ের ঘটনাও আগের তুলনায় বেশি ঘটে থাকে। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের কাছ থেকে নগদ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে বেশি। এছাড়া ঈদকেন্দ্রিক বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার রাজনৈতিক ক্যাডার থেকে শুরু করে সন্ত্রাসীদের নামে-বেনামে চাঁদাবাজি করা হয়। টার্মিনাল এলাকায় যাত্রীদের অজ্ঞান করে সর্বস্ব নিয়ে যায় অজ্ঞান-মলম পার্টির সদস্যরা। মানুষের কাছে ঈদের কেনাকাটার জন্য নগদ টাকা থাকায় দুর্বৃত্তরা এই সময়ে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে।
এসএমপি’র পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এসব প্রতিরোধের জন্য সিলেট নগরীর প্রতিটি এলাকায় চেকপোস্ট ও পেট্রোলিং বৃদ্ধি করা হয়েছে। চোর ও ছিনতাইকারীদের ধরতে সাঁড়াশি অভিযান, ব্লক রেইড পরিচালনা করা হবে। এছাড়া জাল নোট কারবারিদের ধরতেও গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। চাঁদাবাজির কোনও অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাকে শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। বিশেষ করে মার্কেট ও শপিং মলগুলোয় পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা নজরদারি করবেন।
সূত্র জানায়, জাল নোট শনাক্তের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মলে শনাক্তকরণ মেশিন সরবরাহ করা হবে। বাস ও ট্রেন স্টেশনেও ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা রোধে সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা কাজ করবেন। ইফতারের সময় রাস্তা-ঘাট ফাঁকা হওয়ার সুবাধে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এছাড়া সেহরির সময় অনেকেই রেস্টুরেন্টে খেতে যায়। তারা যেন ছিনতাইকারীদের কবলে না পরে সেজন্য নাইট পেট্রোল বাড়ানো হবে।
এসএমপি সূত্রে জানা যায়, রমজানের প্রথম দিন থেকেই ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনায় জেলা প্রশাসনকে সহযোগীতা করছে এসএমপি। একইসঙ্গে কোনও ব্যবসায়ী কারসাজি করে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে কিনা, তাও নজরদারি করবেন গোয়েন্দারা। এসএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে ভেজালবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, অগ্রীম টিকিট বিক্রির সময় কালোবাজারি ঠেকাতেও অভিযান চালানো হবে।
রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বাড়তি নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। বিশেষ করে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা উত্তোলনের পর কেউ পুলিশি এসকর্ট চাইলে তাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া হবে। বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ ছাড়াও মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর এজেন্টরাও বড় অঙ্কের টাকা এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় নেওয়ার প্রয়োজন হলে পুলিশের বিশেষ এসকর্ট দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এসএমপির কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। এবং নিরাপত্তার ঘাটতিগুলো নির্ণয় করে তা পূরণ করা হবে।
নারকীয় জঙ্গি হামলার ঘটনা মাথায় রেখে কাজ করবে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। রমজান ও ঈদের এই সময়ে জঙ্গিরা আবারও হামলার চেষ্টা করতে পারে, এই বিষয়টি মাথায় রেখে জঙ্গি হামলা প্রতিরোধে কাজ করবে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধে সিটিটিসি’র নির্দেশনায় কাজ করবে বলে জানান এসএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মো. জেদান আল মুসা। তিনি বলেন জঙ্গিদের নতুন করে হামলা করার মতো সক্ষমতা এখন আর নেই। তারপরও বিশেষ গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যেন কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে।
সিলেট মহানগর পুলিশের (ট্রাফিক) উপ পুলিশ কমিশনার ফয়সাল মাহমুদ বলেন, রমজান ও ঈদকে কেন্দ্র করে নগরবাসী যেন নিরাপদ ও নিশ্চিন্তে নিজ নিজ গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন, সেজন্য সড়কে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি এসএমপির প্রতিটি ক্রাইম ইউনিট কাজ করবে। পুরো রমজান মাসেই ইফতারের আগে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এই যানজট ঠেকাতে ট্রাফিক পুলিশদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে সিলেট থেকে যেসব গাড়ি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়বে সেসব গাড়ির কাগজ, ফিটনেস, চালকের ড্রাইভিং লাইন্সেস পরিক্ষা করার জন্য কদমতলী বাসস্টেশন এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রাস্তায় যেখানে-সেখানে পার্কিং, উল্টো পথে গাড়ি চলাচল বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে রমজান মাসে নগরীর কোনও সড়কে যেন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো খোঁড়াখুঁড়ির কাজ না করে, সেজন্য সিলেট সিটি করপোরেশনসহ অন্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে পুলিশ।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd