সিলেট ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৭ই জিলহজ, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৩৯ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০১৯
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় প্রকাশ্যে প্রবাসীর বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রীকে (৩৫) অর্ধনগ্ন করে ব্যাপক লাঠিপেটা ও নির্যাতন করা হয়েছে। সেই নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে।
গত ১৩ মে সোমবার উপজেলার বরমচাল ইউনিয়নের উজান পাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। প্রবাসীর স্ত্রীকে লাঠিপেটাকারী ওই ব্যক্তি একই ইউনিয়নের উজানপাড়া গ্রামের মৃত সরল খানের ছেলে মোলাইম খান।
স্থানীয় ও অভিযোগের সূত্রে জানা যায়, নির্যাতনের শিকার ওই প্রবাসীর স্ত্রী তিন কন্যার জননী। বড় কন্যার কিছুদিন আগে বিয়ে দেয়া হয়। বাড়িতে ওই নারী তার দুই মেয়েকে নিয়ে থাকতেন। গত সোমবার দুপুরে প্রবাসীর স্ত্রী স্থানীয় ফুলেরতল বাজার থেকে মোবাইল ব্যাংকিকের ‘বিকাশ’ এজেন্ট থেকে নগদ টাকা উত্তোলন করে বাড়িতে আসেন। এ সময় ওই নারীর পিছু ধরে মোলাইম খাঁ ওই প্রবাসীর বাড়িতে যান। এ সময় প্রবাসীর স্ত্রীকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে আনেন তিনি। পরে ওই নারীর দুই মেয়ের সামনে অর্ধনগ্ন করে প্রকাশ্যে বেধড়ক লাঠিপেটা শুরু করেন। মারধর শেষে মোলাইম খান ঘটনাস্থল থেকে চলে যান।
এদিকে মোলাইম খান ওই নারীকে নিজের বিবাহিত স্ত্রী দাবি করছেন এবং স্ত্রীর আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে তাকে মারধর করেছেন বলে দাবি করেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
নির্যাতনের শিকার ওই নারী বলেন, ‘আমার শ্বশুর-শাশুড়ি মারা গেছেন। ভাশুর (স্বামীর বড় ভাই) অন্যত্র থাকেন। আমার স্বামী ওমান প্রবাসী এবং আমার তিন মেয়ে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। আমি আমার দুই মেয়েকে নিয়ে একা বাড়িতে থাকি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার চাচাশ্বশুরের সঙ্গে জমি-সংক্রান্ত বিষয়ে কোর্টে মামলা রয়েছে। মোলাইম খান আমার দূরসম্পর্কের আত্মীয়। আমি মহিলা তাই চাচা শ্বশুরের সঙ্গে জমি-সংক্রান্ত মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেই তাকে। এর জন্য মাঝেমধ্যে আমার বাড়িতে আসতেন তিনি। মামলা পরিচালনার জন্য ২০১৫ সালের ২৩ মার্চ একই তারিখের কয়েকটি সাদা (লেখাবিহীন) স্ট্যাম্প কাগজে স্বাক্ষর নিতে আসেন মোলাইম। আমি জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজে দস্তখত দিতে হবে।’
‘আমি সরল বিশ্বাসে সেই সাদা স্ট্যাম্প কাগজে দস্তখত দেই। কিছুদিন পর মোলাইম আমার স্বামীর কাছে মোবাইলের হোয়াটস্অ্যাপে স্বামীকে তালাকের হলফনামার এবং ‘কোর্টম্যারেজের’ কাগজের ছবি পাঠান। আমার স্বামী বিদেশ থেকে ওই হলফনামা কাগজের কথা আমাকে জানান। এ বিষয়টি আমি মোলাইমকে জিজ্ঞেস করি। পরে ২০১৫ সালের ২৩ মার্চ একই তারিখের দুটি স্ট্যাম্প কাগজে সে প্রতারণার মাধ্যমে আমার দস্তখত নিয়ে (রেজিনং ৭৫৭) কাগজে ‘তালাকনামা’ এবং (রেজিনং ৭৫৮) কাগজে ‘কোর্ট ম্যারেজ’ হলফনামা দেখিয়ে আমাকে তার স্ত্রী দাবি করে। তখন সে স্বামী হিসেবে মেনে নিতে আমাকে বিভিন্ন সময় হয়রানি করে ও আমাকে একদিন মারধরও করে।’
‘পরবর্তীতে ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ সালে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে কোর্ট ম্যারেজ এবং তালাকনামা বাতিলের জন্য এফিডেবিটের (রেজি নং-৪৮২৪) মাধ্যমে আদালতে আবেদন করি। এরপরও প্রায় সে আমাকে উত্যক্ত করতে থাকে।
তিনি আরো বলেন, ঘটনার দিন সোমবার দুপুরের দিকে আমি ফুলতালা বাজারে যাই এবং সেখান থেকে বিকাশে ক্যাশ আউট করে বাড়িতে ফিরে আসি। মোলাইম আমার পিছু নিয়ে আমার বাড়িতে আসে এবং ঘরে ঢুকে আমার গলায় শ্বাসরোধ করে রাখে।’
‘পরে আমার শাড়ি জোরপূর্বক খুলে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে এবং টেনেহিঁচড়ে ঘরের বাইরে নিয়ে এসে আমাকে কাঠের লাঠি দিয়ে ব্যাপক মারধর করতে থাকে। এ সময় আমার মেয়েরা এগিয়ে এলে তাদের উপর চড়াও হয় মোলাইম। মোলাইম খান এ সময় আমার গলায় থাকা এক ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার চেইন নিয়ে যায়। পরে আমার আত্মীয় স্বজন এসে আমাকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। আমার সমস্ত শরীরে মারাত্মক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। থানায় আমি মোলাইম খানকে আসামি করে অভিযোগ দায়ের করেছি। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই’,- বলছিলেন নির্যাতনের শিকার ওই নারী।
এ ব্যাপারে মোলাইম খানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার দুই স্ত্রী আছে এবং ওই নারীও আমার স্ত্রী। আমি তাকে কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে বিয়ে করেছি। আগের স্বামীর সঙ্গে তার তালাক হয়ে গেছে। ঘটনার দিন তার বাড়িতে গেলে প্রথমে সে আমার ওপরে হামলা চালায়। একপর্যায়ে আমি আত্মরক্ষার্থে তাকে মারধর করি। আপসের জন্য তার সঙ্গে বিয়ের সব কাগজপত্র স্থানীয় ফুলেরতল মসজিদ পঞ্চায়েতের (কমিটির) সাবেক সভাপতি আনারউদ্দিনসহ কমিটির সদস্যদের কাছে দেয়া আছে।
ফুলেরতল মসজিদ পঞ্চায়েতের (কমিটির) সাবেক সভাপতি আনারউদ্দিনের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কেউ কিছু জানায়নি। আমি পরস্পরের মাধ্যমে মারধরের ঘটনাটি জানতে পেরেছি।
কুলাউড়া থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, নারীর ওপর এমন অমানবিক নির্যাতন কোনোভাবেই কাম্য নয়। মোলাইম খান ওই নারীকে পাশবিকভাবে লাঠিপেটা ও নির্যাতন করেছেন। ধর্ষণচেষ্টা ও মারধরের ঘটনায় প্রবাসীর স্ত্রী বাদী হয়ে মামলা করেছেন। আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd