একাধিক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক রাখায় উজ্জলকে খুন করে হবিগঞ্জের ফারজানা

প্রকাশিত: ১২:০২ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৪, ২০১৯

একাধিক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক রাখায় উজ্জলকে খুন করে হবিগঞ্জের ফারজানা

Manual3 Ad Code

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি :: লাখাইয়ে প্রেমিকার হাতে প্রেমিক খুন হওয়ার ঘটনায় আটক প্রেমিকা ও তার পিতাকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী শেষে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজেস্ট্রিট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে দীর্ঘ ৬ ঘন্টা স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী শেষে পিতা ও কন্যাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

Manual1 Ad Code

এরআগে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা দিয়ে ঘাতক প্রেমিকা কলেজ ছাত্রী ফারজানা আক্তার ও তার পিতা মঞ্জু মিয়াকে আদালতে নিয়ে আসা হয়।

Manual2 Ad Code

এদিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ফারজানার মা লাখাই থানায় আটক রয়েছে। অন্যদিকে নিহত উজ্জলের পিতা শাহ আলম বাদী হয়ে উল্লেখিতসহ আরো ৪-৫ জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আমিনুল ইসলাম জানান, ঘাতকরা বিজ্ঞ আদালতে ঘটনার কথা স্বীকার করে লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে।

তিনি আরো জানান একাধিক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক রাখায় ফারজানা আক্তার উজ্জল মিয়াকে (২২) নামে ওই কলেজছাত্র খুন করে তার ঘরের খাটের নিচে মাটি খুড়ে পুতে রাখে। পরদিন ফারজানা ঢাকা তার পিতা মাতার কাছে চলে যায় সেখানে গিয়ে এ হত্যার ঘটনা জানায়। ১০-১২ দিন পর তার পিতা মাতা বাড়িতে এসে অন্যান্য আসামিদেরকে নিয়ে লাশ তুলে বস্তার ভিতরে ভরে বাড়ি থেকে ১ কিলোমিটার দুরে মেদি বিলে কচুরিফানার নিচে রেখে আসে।

কেন কলেজ ছাত্র উজ্জলকে হত্যা করা হল?
উজ্জল সঈদ উদ্দিন বিশ্ব বিদ্যালয় কলেজের ডিগ্রি ৩য় বর্ষের ছাত্র। অন্যদিকে ফারজানা আক্তার হবিগঞ্জ সরকারী বৃন্দাবন কলেজের এইচএসসি ২য় বর্ষের ছাত্রী। এক বছর ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। ফারাজানা হাওরের মধ্যেখানে তার বাড়িতে একা বসবাস করত। পিতা-মাতা ও তার ছোট দুই বোন ঢাকাতে থাকতো। এই সুবাদে উজ্জল প্রায়ই ফারজানার বাড়িতে এসে তার সাথে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। কোন-কোন দিন উজ্জল রাতে আসতো আর সকালে বাড়ী ফিরত। ২০শে ফেব্রুয়ারী যখন তারা আমোদ ফুর্তিতে লিপ্ত ছিল। উজ্জলের মোবাইলে অন্য নারীর একটি ফোন আসে কথা বলার সময় ফারজানা বুঝতে পারে উজ্জলের আরো একাদিক মেয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হয়। এক পর্যায়ে হাতা-হাতির ঘটনা ও ঘটে। কিছুক্ষণ পর ফারজানা উজ্জলকে বিয়ের কথা বললে, তখন সে হেসে-হেসে কৌতুক করে বলে ‘আমি যদিও তোমাকে বিয়ে না করি, তখন আমার বাবা তোমাকে বিয়ে করবে’। এতে ফারজানা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে, নিজেকে শেষ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তার মন ঘুরে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় ভন্ড প্রেমিককে হত্যা করবে।

পরিকল্পনা মোতাবেক প্রথমে শারিরিক সম্পর্ক করে উজ্জলকে দূর্বল করে ওই দিন গভীর রাতে শীল পাঠার পোতাইল দিয়ে নিমজ্জিত উজ্জলের মাথায় ও লজ্জাস্থানে আঘাত করে। এতে তার মৃত্যু নিশ্চিত না হলে বঠি দা দিয়ে হাত পায়ের রগ কর্তন করে শ্বাস রোদ্ধ করে হত্যা করে এবং তার এক চাচাকে এন লাশ ঘরের মাঠি খুড়ে লুকিয়ে রাখে। পরের দিন তার পিতা মাতার কাছে চলে যায়।

Manual2 Ad Code

ফারজানার পিতা মঞ্জু মিয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দীতে জানায়, ‘আমি হত্যাকা-ের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলাম না। আমার মেয়েকে বাচাঁতে হত্যাকা-ের প্রমাণ লুপাট করতে আমি আমার মৃত দেহ বস্তাবন্দি করে কাঁেদ করে মেদি বিলে কচুরী ফানার নিচে রেখে আসি।

উল্লেখ্য, গত ২০ ফেব্রুয়ারি লাখাই উপজেলার মুড়াকড়ি গ্রামের শাহ্ আলমের পুত্র সৈয়দ সঈদ উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ২য় বর্ষের ছাত্র উজ্জল মিয়া নিখোঁজ হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি লাখাই থানায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে একটি জিডি করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে এবং নিখোঁজ উজ্জলের মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে তারা নিশ্চিত হয় মোড়াকড়ি ইউনিয়নের ধর্মপুর গ্রামের মঞ্জু মিয়ার মেয়ে কলেজছাত্রী ফারজানা আক্তারের সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহর নির্দেশে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম ও ওসি এমরান হোসেন এবং এসআই আমিনুল ইসলামসহ একদল পুলিশ রবিবার সকালে ধর্মপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে ফারজানা ও তার পিতাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।

দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করার পর সোমবার সকালে ফারাজানা ঘটনার কথা স্বীকার করে। সোমবার দুপুরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ধর্মপুর গ্রাম থেকে ১ কিলোমিটার দূরে মেদি বিলের কচুরিপানার নিচ থেকে উজ্জলের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এ সময় লাশের দুর্গন্ধে এলাকার মানুষ নাক টিপে ধরে। উৎসুক জনতাকে সামাল দিতে হিমশিম খায় পুলিশ।

আটককৃত ফারজানার বরাত দিয়ে পুলিশ সুপার জানান, উজ্জল ও ফারজানার মাঝে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলছিল। চাকুরির কারণে ফারজানার মা-বাবা ঢাকায় থাকেন। ফারজানা বাড়িতে একা থাকে। এ সুযোগে প্রায়ই তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক চলে আসছিল। আটক ফারজানা ধর্মপুর গ্রামের মঞ্জু মিয়ার কন্যা ও নিহত উজ্জল মোড়াকড়ি গ্রামের শাহ আলমের পুত্র।

Manual1 Ad Code

লাখাই থানার ওসি এমরান হোসেন জানান, বাকী আসামীদের গ্রেফতার করতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। এবং ফারজানার মাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আরো ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

April 2019
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  

সর্বশেষ খবর

………………………..