লন্ডনী কইন্যা ফাতেমা রুনি’র বিয়ে বাণিজ্য ও প্রতারনা : তোলপাড়

প্রকাশিত: ৬:৩৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৫, ২০১৮

লন্ডনী কইন্যা ফাতেমা রুনি’র বিয়ে বাণিজ্য ও প্রতারনা : তোলপাড়

খলিলুর রহমান :: সিলেটে আঁচল ভিসা’র বানিজ্য অনেকটা হ্রাস পেলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এ বানিজ্য এখনো রয়ে গেছে। কোন কোন লন্ডনী কইন্যা বিয়ের নামে এ বানিজ্য ও প্রতারনা অব্যাহত রখে চলেছেন। তাদেরই একজন লন্ডনী কইন্যা ফাতেমা বেগম রুনি। মাত্র ২২ বছর বয়সে এ লন্ডনী কইন্যা একাধিক বিয়ে বাণিজ্য করে ইংল্যান্ড গমণেচ্ছু যুবকদের সর্বস্বান্ত করে চলেছেন। স্বামীর বিছনায় থেকে গোপনে বিয়ে করে চলেছেন অন্যদের। মাত্র কয়েকদিনের জন্য বিয়ে ও দেহ দানের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন লন্ডনী কইন্যা রুনি ও তার পরিবার। ফাতেমা বেগম রুনি সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার ধারনবাজার এলাকাধীন নয়া রাজারগাঁওয়ের ইংল্যান্ড প্রবাসী মিয়াজান আলীর মেয়ে ও নিজেও যুক্তরাজ্য প্রবাসী। যুক্তরাজ্যের নাগরিকত্ব লাভের সুযোগে পিতা মিয়াজান ও মাতা নেওয়ারুন বিবি আপন মেয়ে ফাতেমা বেগম রুনির শরীর দিয়ে শুরু করেছেন জমজমাট আঁচল বিয়ে বানিজ্য। স্পাউডস ভিসায় যুক্তরাজ্যে যাওয়ার ও বসবাসের সুযোগ রয়েছে এমন ধোঁয়া তুলে তারা তাদের দেহপসারিনী মেয়ে ফাতেমা বেগম রুনিকে দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন অনেক পরিবারের জায়গা-জমি ও সোনা গহণা-সহ লাখো-কোটি টাকা। লন্ডনী কইন্যার এসব বিয়ে বানিজ্যে সিলেট ও যুক্তরাজ্যের বাঙ্গালী কমিউনিটিতে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

মাত্র ২২ বছর বয়েসী লন্ডনী কইন্যা ফাতেমা বেগম রুনির বিয়ে ও আঁচল ভিসা প্রতারনার অনেক তথ্য রয়েছে মিডিয়া কর্মীদের কাছে। এগুলোর মধ্যে যে কয়েকটি বিয়ে বাণিজ্যের তথ্য এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হচ্ছে, আর তা হচ্ছে, গত ২০১৬ সালের ফেব্রæয়ারিতে পিতা-মাতা রুনিকে প্রতারনার মাধ্যমে বিয়ে দেন যুক্তরাজ্যে অবৈধ বসবাসরত এক বাংলাদেশী যুবকের সাথে। তাকে যুক্তরাজ্যে সেটেল করে দেয়ার লোভ দেখিয়ে রুনি ও তার পরিবার ওই যুবকের কাছ থেকে ১০হাজার পাউন্ড সমান বাংলাদেশী ১২ লাখ টাকা। এছাড়াও বিয়ের খরচ হাউজরেন্ট এবং অন্যান্য খরচ বাবদ হাতিয়ে নেয় আরো কয়েক লাখ টাকা। বিয়ের তিনমাস যেতে না যেতেই লন্ডৈনী কইন্যা ফাতেমা বেগম রনি পরকীয় প্রেমে জড়ে পড়েন অন্য এক যুবকের সাথে। পরকীয়া ও অন্য যুবকের সাথে তার দৈহিক দহরম-মহরমের অনেক ছবি ও ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ পায় তখনকার সময়ের সোস্যাল মিডিয়ায়। অনলাইন জগতে তোলপাড় চলতে থাকে কিছুদিন।

এর কিছুদিন যেতে না যেতেই লন্ডনী কইন্যা ফাতেমা রুনি’র প্রতারণার জালে বন্দী হন লন্ডন গমনেচ্ছু যুবক ছালেহ আহমদ। ছালেহ আহমদ সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার গহরপুর এলাকার সুলতানপুর গ্রামের মরহুম চান মিয়ার পুত্র। প্রতারনার উদ্দেশ্যে মেয়ের জন্য বাংলাদেশী জামাই খোঁজতে থাকেন ‘লন্ডনী ভাইছাব’ মিয়াজান ও তার লন্ডনীবধূ নেওয়ারুন বিবি। তারা গোপন রাখেন মেয়ে ফাতেমা রুনির আগের বিয়ে ও পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক। এক পর্যায়ে তাদের প্রতারনার ফাঁদে আটকা পড়েন ছালেহ আহমদের পরিবার। বিয়ে ও লন্ডন নেয়ার নামে ছালেহ আহমদ পরিবারের কাছ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে বিয়ের খরচ ও মোহরানা বাবদ ১০ হাজার পাউন্ড গ্রহন করেন রুনি ও তার পিতা-মাতা। বিবাহিত ও আইনত অন্য যুবকের স্ত্রী হওয়া সত্বেও লন্ডনী কইন্যা ফাতেমা বেগম রুনিকে ‘কুমারী’ সাজিয়ে দেশে নিয়ে আসেন পিতা-মাতাসহ ভাই-বোন। ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই ছালেহ আহমদের সাথে বিয়ে পড়ান রুনির। বিয়ের কাবিন নামায় রুনিকে উল্লেখ করা হয় ‘কুমারী’।

বিয়ের পর ছালেহ আহমদের সাথে কয়েকদিন ঘরবাস করার পর রুনি আবার ইংল্যান্ড চলে যায় ।লন্ডন যাওয়ার প্রহর গুনতে থাকেন স্বামী ছালেহ আহমদ । স্বামী ছালেহ আহমদকে ভিসা প্রসেস করে লন্ডন নিয়ে যাওয়ার কথা বলে আবার এ বছরের (২০১৮ সালের) অক্টোবরে দেশে ফিরেন। দেশে ফেরার পর স্বামী ছালেহ আহমদের সাথে ঘরবাস করতে থাকাবস্থায় নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) সিলেট-এর সাধারণ সম্পাদক শাহ লোকমান আলীর সাথে গোপনে বিয়ের কাবিননামা সম্পাদন করে ফেলেন লন্ডনী কইন্যা রুনি। শরাহ-শরীয়তের কোন তোয়াক্কা না করে মাত্র একজনকে সাক্ষী করে এ নিকাহনামা রেজিষ্ট্রি করে নের সিলেট নগরীর ১২ নং ওয়ার্ডের কাজী মাজেদ খান হেলালী ওরফে এম কে হেলালী। এ কোবিননামার মাধ্যমে শাহ লোকমান আলীর ১১ লাখ টাকা মোহরানার মধ্যে ৫ লাখ টাকার সোনা গহনা হাতিয়ে নেয় রুনি ও তার পারিবার। গত ১২ অক্টোবর শাহ লোকমান আলীর সাথে লন্ডনী আঁচল কইন্যা রনির বিয়ের এ কাবিননামাকে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারনা বলে মামলা হয়েছে আদালতে। সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ৫ম আদালতে মামলা করেন রুনির স্বামী ছালেহ আহমদ। মামলায় লন্ডনী কইন্যা ফাতেমা বেগম রুনি,কথিত বর শাহ লোকমান আলী ও নিকাহ রেজিষ্ট্রার কাজী এমকে হেলালী-সহ ৮ জনকে আসামী করা হয়। কাবিন জালিয়াতি-সহ প্রতারনার মামলার প্রধান আসামী শাহ লোকমান আলী সিলেট নগরীর সুবিদবাজার লন্ডনীরোডস্থ অগ্রণী ১২০ শাহী ভিলার শাহ আহমদ আলীর পুত্র ও নিরাপদ সড়ক চাই নিসচা সিলেট-এর সাধারণ সম্পাদক । তার গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার করিমপুর বলে কাবিননামায় উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার পর স্বামী দাবিদার ছালেহ আহমদ গত ২৯ নভেম্বও প্রেস কনফারেন্স করে জালিয়াত ও প্রতারক চক্রের সুষ্টু বিচার দাবি করেছেন।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..