মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ :: সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-২ আসন। দুই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের ১৪৪টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মধ্যে ভোটার হচ্ছেন ২ লাখ ৮৬ হাজার ৪০৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪৪ হাজার ৮৮১ জন ও মহিলা ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ৪১ হাজার ৫৫২ জন।
আগামী ৩০ ডিসেম্বর দুই উপজেলার ভোটাররা ১২৭টি ভোট কেন্দ্রের ৬১৪টি ভোট কক্ষে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নির্বাচিত করবেন নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে। যিনি নির্বাচিত হয়ে আগামী ৫ বছর ওই নির্বাচনী আসনের উন্নয়ন ও অগ্রগতির দায়িত্ব পালন করবেন।
তাৎপর্যপূর্ণ সিলেট-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী ২১ জন প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীদেরকে প্রথমে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া, এরপর জোট-মহাজোটের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে জোট-মহাজোটে চলছে মহাযুদ্ধ। প্রচলিত ধারাবাহিকতায় দেখা গেছে ৯১’র নির্বাচন থেকে শুরু করে সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থীরা দু’বার করে নির্বাচিত হয়েছেন। তবে কোন দল বা দলের প্রার্থীই পর পর দুবার নির্বাচিত হতে পারেননি।
এদিকে মোট ভোটারের সংখ্যায় ওসমানীনগরের চেয়ে বিশ্বনাথ উপজেলায় ভোটারের সংখ্যা বেশি। বিশ্বনাথ উপজেলা মোট ভোটার ১ লাখ ৫০ হাজার ৬০৩ জন (পুরুষ ৭৬ হাজার ৫৫৭ জন ও মহিলা ৭৪ হাজার ৪৬ জন) এবং ওসমানীনগর উপজেলা মোট ভোটার ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮০০ জন (পুরুষ ৬৮ হাজার ৩২৪ জন ও মহিলা ৬৭ হাজার ৪৭৬ জন)।
সিলেট-২ আসনে মহাজোটের প্রার্থী নির্ধারণে যেমন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে চলছে দর-কষাকষি, তেমনি ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী নির্ধারণেও চলছে বিএনপি ও খেলাফত মজলিসের মধ্যে দর-কষাকষি। এদিকে বিএনপি আবার ঐক্যফ্রন্টের সাথে যুক্ত হওয়ায় তাদের জটিলতা আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে। আবার সম্মিলিত জাতীয় জোটের মনোনীত প্রার্থীতা নিয়েও জাতীয় পার্টি ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মধ্যে চলছে চরম দর-কষাকষি।
অন্যদিকে নিজেদের দলের সাংগঠনিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য গ্রুপিং-উপগ্রুপিংয়ের উর্ধ্বে উঠে সিলেট-২ আসনে নৌকা চাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা। ‘নৌকায় মঙ্গল আর লাঙ্গলে অমঙ্গল’ দাবী করে তারা এবার আসনটি মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে নারাজ। তাছাড়া অতীতের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা গেছে ৯১ সালের নির্বাচনের পর থেকে কোন দল কিংবা কোন দলের প্রার্থীই নির্বাচন করে সিলেট-২ আসনে টানা দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হতে পারেন নি। সে হিসেবে বিগত নির্বাচনে যেহেতু জাতীয় পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়ে ছিলেন সেক্ষেত্রে এবারের নির্বাচনে তাদের বিজয়ের সম্ভাবনাও কম। আবার বিএনপির প্রার্থীর তালিকায়ও রয়েছে শক্তিশালী প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে আসনের ৬ জন নিজেদের দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তারা হলেন- সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী, উপ-দপ্তর সম্পাদক ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আখতারুজ্জামান চৌধুরী জগলু, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ও শেফিল্ড শাখার সভাপতি মোহিদ আলী মিঠু, যুক্তরাজ্য কার্ডিফ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য কাজী মোহাম্মদ শাহজাহান।
তাদের মধ্যে বিগত নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তা প্রত্যাহার করে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়াকে বিজয়ী করতে এবং এমপি না হয়েও বিগত রাজনৈতিক মাঠ ছেড়ে না গিয়ে দিনরাত দলের ও সরকারের পক্ষে কাজ করার জন্য শফিকুর রহমান চৌধুরীর দলীয় ও মহাজোটের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তাছাড়া সদ্য সম্পন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন এবং জেলার বিভিন্ন পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে নিজের নির্বাচনী আসনের পাশাপাশি সিলেট জেলার প্রত্যেক উপজেলায় দিন-রাত পরিশ্রম করেছেন শফিকুর রহমান চৌধুরী।
বিএনপির মনোনয়ন পেতে আসনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী নিজেদের দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তারা হলেন- স্থানীয় সাবেক এমপি ও বিএনপির সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ ইলিয়াস আলীর সহধর্মিনী ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা, জ্যেষ্ঠ পুত্র ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস অর্ণব, ছোট ভাই ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আছকির আলী, ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আবদুর রব মল্লিক। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে শেষ পর্যন্ত ভাই আছকির আলীর মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে কোন প্রকারের জটিলতা না আসলে তাহসিনা রুশদী লুনাই বিএনপির মনোনয়ন পাবেন।
এদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক খেলাফত মজলিস এই আসনে তাদের দলের প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রদানের দাবী দীর্ঘদিন ধরে জোটের কাছে করে আসছে। এজন্য দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলীকে নিয়ে রাজনৈতিক মাঠে সরব রয়েছে খেলাফত মজলিস। আর জোট থেকে মুনতাসির আলীকে মনোনয়ন না দেওয়া হলে দলীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে পরবর্তিতে খেলাফত মজলিস সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানা গেছে। এদিকে আবার ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সিলেট-২ আসনে ধানের শীষ নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
জাতীয় পার্টির মনোনয়ন পেতে আসনের ২ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী নিজেদের দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। তারা হলেন- আসনের বর্তমান এমপি ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া এবং জাতীয় মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক শিউলী আক্তার। এহিয়া চৌধুরী বিগত নির্বাচনে দল ও মহাজোটের প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হলেও একাধিকবার দলীয় মনোনয়ন চেয়েও না পাওয়ায় এবার এহিয়া চৌধুরীকে ছাড় দিতে নারাজ মহিলা নেত্রী শিউলী আক্তার। এদিকে সম্মিলিত জাতীয় জোটের শরিক হিসেবে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে নারাজ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। তাই বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও যুক্তরাজ্য শাখার সহ সভাপতি মাওলানা আতাউর রহমান দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে প্রচারণা শুরু করেছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এ আসনে ইমরান আহমদ সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ড. এনামুল হক সরদার রয়েছেন ব্যপক আলোচনায়। এছাড়া অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন- বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের মোশাহিদ খান, ন্যাশনাল পিপুলস পার্টির মনোয়ার হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বিশ্বনাথ উপজেলা শাখার আমির মাওলানা মুহাম্মদ আমির উদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোটের জেলা যুগ্ম সম্পাদক আ ক ম এনামুল হক মামুন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুক্তরাজ্য শাখার কোষাধ্যক্ষ হাফিজ মাওলানা হোসাইন আহমদ।
Sharing is caring!