সিলেট ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:২৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২২, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় বাসর রাতে এক নববধূর সন্তান প্রসব করেছেন। গত রোববার রাতে লাকসাম উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের এ ঘটনার পর এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
বিয়ের আগে পাশের বাড়ির পারভেজের সাথে দৈহিক সম্পর্ক, বিয়ের দিন থেকে পলাতক থাকায় কন্যাসন্তান নিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে ওই গৃহবধূ। প্রতারণার শিকার ওই অসহায় গৃহবধূ তার সন্তানের পিতৃত্ব দাবি করেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার মেয়েটির (১৮) সাথে আড়াই লাখ টাকা দেনমোহরে আমদুয়ার গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে দেলোয়ার হোসেনের (২০) বিয়ে হয়। বিয়ের পরদিন ছেলের বাড়িতে বৌভাত অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। এতে কনে পক্ষের শতাধিক অতিথি যোগ দেয়।
বিয়ের দুদিন পর শনিবার রাতে ফুলশয্যার আয়োজন করে বরের বন্ধুরা। বাসর ঘরেই নববধূর পেট ব্যাথা শুরু হলে তাকে পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য স্বামীর বাড়ির লোকজনকে চাপ সৃষ্টি করে নববধূ। ভোরে ঘরের পাশে টয়লেটে গেলে নববধূ ফারজানা হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে। এ সময় বাড়ির লোকজন ছুটে এলে নবজাতকের কান্নার শব্দ পায়। পরে পরিবারের লোকজন টয়লেট থেকে নববধূ ও নবজাতককে উদ্ধারকরে ঘরে নিয়ে যায়।
নববধূর শাশুড়ি বলেন, প্রসবের পর নবজাতককে হত্যার চেষ্টা করেছিল ফারজানা। প্রসবের পর টয়লেটের কমোডে ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করায় নবজাতকের মাথায় সামান্য আঘাতের চিহ্ন ও ময়লা লেগেছিল। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে নববধূর পিতার বাড়ির লোকজনকে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে কৃষ্ণপুর গ্রামের ওয়ার্ড মেম্বার তোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন এসে নবজাতক ও নববধূ ফারজানাকে পিত্রালয়ে নিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় আমাদের সামাজিক মর্যাদাহানি হয়েছে। বিয়েতে আমাদের অনেক টাকা-পয়সা নষ্ট হয়েছে। যারা আমাদের এ ক্ষতি করেছে তাদের উপযুক্ত বিচার চাই।’
তিনি আরো জানান, এ বিয়েতে ঘটকালি করেছে পার্শ্ববর্তী লোলাই গ্রামের শামীমসহ আরো দু’জন।
সূত্র জানায়, কণেপক্ষের লোকজন নববধূ ও নবজাতককে নিয়ে যাওয়াকালে বিয়ের সময় বরপক্ষের দেয়া গয়নাগুলো ফেরত দিয়ে বিয়ের খরচ বাবদ ৫৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার আশ্বাস দেয়।
সোমবার উপজেলার কৃষ্ণপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নবজাতকের মা বাড়ির ওঠানে একটি বিচানায় শিশুকন্যা নিয়ে বসে আছে। চারদিকে থেকে লোকজন ওই নববধূ ও সন্তানকে দেখার জন্য ভিড় জমায়।
এ সময় গৃহবধূ বলেন, আমি লেখাপড়া করছিলাম। পাশের বাড়ির সৌদি প্রবাসী মাহবুবুল আলম দুলালের ছেলে মেহেদী হাসান পারভেজের সঙ্গে দীর্ঘদিন আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে পারভেজ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দৈহিক সম্পর্ক সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে গর্ভবতী হয়ে পড়লে কাউকে না জানিয়ে পারভেজকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করি। বিয়ের কথা বলে কালক্ষেপন করতে থাকে সে। আমার পেটে তার সন্তান রয়েছে জেনে পারভেজ আমার অজান্তেই বিদেশে পাড়ি দেয়ার আয়োজন করে। পরে জানতে পারি প্রথম দফায় ফ্লাইট মিস হলেও গত বৃহস্পতিবার বিয়ের দিন সে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায়।
কান্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমি এখন নবজাতক এ কন্যা সন্তান নিয়ে কোথায় যাব। আমি না পেলাম স্ত্রীর মর্যাদা, আর এ কন্যাশিশুটি পেল না পিতার অধিকার। আমার বাবা রিকশা চালিয়ে কোনো রকমে পরিবারের মুখে অন্ন যোগাড় করে। টানাপোড়েনের সংবারে আমরা অসহায়। গরিব হওয়ায় লোকজন আমাদেরকে টিটকারি করে। আমি সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে এ প্রতারণার বিচার চাই।
এদিকে ফারজানাকে বিয়ে থেকে রেহাই পেতে পারভেজ গা-ঢাকা দিয়েছে। ছেলের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় চাপে পড়ে ফারজানার পিতা দিনমজুর দুলাল মিয়া মেয়েকে অন্যত্রে বিয়ে দেয়ার আয়োজন করে। মেয়ের অসম্মতিতেই গত বৃহস্পতিবার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাও শেষ হয়। তবে ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে একটি মহল তৎপর থাকার অভিযোগ উঠেছে বলে এলাকাবাসী জানায়।
ওয়ার্ড মেম্বার তোফাজ্জল হোসেনের সাথে ফোনে আলাপকালে তিনি বলেন,খবর শুনে ফারজানা ও কন্যাসন্তানটিকে শ্বশুরবাড়ী থেকে নিয়ে আসি।
আজগরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন জানান, এ ঘটনাটি দুঃখজনক। মেয়ের পরিবার আইনি সহায়তা চাইলে সব রকম সহায়তা করবো।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd