সিলেট ২২শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৩শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৫:৪৬ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৭, ২০১৮
আবু তাহের, ছাতক থেকে :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ২টি উপজেলা, ২২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে সুনামগঞ্জ-৫ আসনে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, স্বতন্ত্র, খেলাফত মজলিস ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা। বিভিন্ন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এলাকায় নানা কৌশলে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। পাশাপাশি দলীয় মনোনয়নের জন্য দৌড় -ঝাপ শুরু করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সক্রিয় সম্ভাব্য প্রার্থীদের সমর্থকগোষ্ঠী ।
বর্তমান এমপি মুহিবুর রহমান মানিক আগামী নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী। দলের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরী মাঠে প্রচার চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের এ দুই নেতার মাঝে চলছে মনোনয়ন লড়াই।
আর প্রার্থী নিয়ে বিএনপিতে রয়েছে হতাশা। আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য কলিম উদ্দিন আহমদ মিলনের নাম শোনা গেলেও বিএনপির অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মাঠে ব্যাপক সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন আইয়ূব করম আলী। জাতীয় পার্টির দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং করছেন জাপা’র কেন্দ্রীয় সদস্য আ.ন.ম কনা মিয়া ও কেন্দ্রীয় সদস্য রুহুল আমিন। অপর দিকে খেলাফত মজলিশের কেন্দ্রীয় যুগ্ন মহা সচিব মাওলানা শফিক উদ্দিন ও নিরবে কাজ করছেন জামাতের মাওলানা আব্দুস সালাম আল মাদানী।
বিগত ১০টি সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী ৩বার ও উপনির্বাচনে ১বার, বিএনপির প্রার্থী ২বার, জাসদের প্রার্থী ১বার, জাপা প্রার্থী ১বার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ৩বার করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। অপর দিকে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাপা ও খেলাফত মজলিশ ছাড়া অন্য কোন দলের তৎপরতা নেই এ আসনে। আ’লীগ চায় আসনটি ধরে রাখতে আর বিএনপি আসন উদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কিন্ত আ’লীগ ও বিএনপির মধ্যে দলিয় কোন্দল দীর্ঘ দিনের। এ দ্বিধা-বিভক্তি কাটিয়ে উঠতে পারছেন না শীর্ষ নেতারা। বরং অন্তর্দ্ব›দ্ব ও কোন্দল দিন দিন বাড়ছে। সূত্রে জানা যায়, আ’লীগ দীর্ঘ ২০ বছর ধরে দুই বলয়ে বিভক্ত। এক পক্ষে রয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা আ’লীগের সহ- সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক। অপরপক্ষে রয়েছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরী’র ভাই ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী। ১৯৯৭ সালে ডা. হারিছ আলীকে সভাপতি ও ছানাউর রহমান ছানাকে সাধারণ স¤পাদক এবং অপর পক্ষে আবরু মিয়া তালুকদারকে সভাপতি ও ফারুক আহমদকে সাধারণ স¤পাদক করে সে সময় উপজেলা আ’লীগের একটি পাল্টা পালটি কমিটি গঠন করা হয়। দলীয় সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০০ সালে উভয় গ্রæপকে ঢাকায় ডেকে নিয়ে উভয় কমিটি ভেঙে দিয়ে ডা. হারিছ আলীকে আহŸায়ক ও লুৎফুর রহমান সরকুমকে যুগ্ম আহŸায়ক করে একটি আহŸায়ক কমিটি গঠন করে দেন। কিন্তু প্রায় ২০ বছরে গ্রæপিং কোন্দলের অবসান না হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। ডা. হারিছ আলী মৃত্যুর পর লুৎফুর রহমান সরকুম আহবায়ক পদে আসীন হন। ২০১৬ সালের শেষের দিকে দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে লুৎফুর রহমান সরকুম মৃত্যু বরণ করেন। এরিই মধ্যে উপজেলা আ’লীগের আরেকটি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়। এমপি মানিক বলয়ে ছানাউর রহমান ছানাকে আহবায়ক ও সৈয়দ আহমদকে যুগ্ম আহবায়ক এবং মেয়র কালাম বলয় থেকে আবররু মিয়া তালুকদারকে আহŸায়ক ও কল্যাণব্রত দাসকে যুগ্ম আহŸায়ক করে পৃথক ভাবে ছাতক উপজেলা আ’লীগের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এ দিকে গত জানুয়ারী মাসের শেষের দিকে এমপি মানিক বলয়ের ছাতক উপজেলা আওয়ামীলীগের আহবায়ক ছানাউর রহমান ছানা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে (৬২) বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। বিশেষ সুত্রে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর (রোববার) এমপি মানিক বলয়ে ছাতক উপজেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভায় সভার সভাপতিত্ব নিয়ে তুমুল হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে হাতাহাতি ও চেয়ার ছোড়াছুড়ির ঘটনা ঘটে সভায়। পরে সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকের হস্থক্ষেপে বিষয়টির সমাধান হলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ স¤পাদক ফজলুর রহমানের সভাপতিত্বে বর্ধিত সভা অনুষ্টিত হয়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপে
জানা যায়, আপাতত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে আগামী নির্বাচনে সরকারের উন্নয়ন জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে এ আসনে কোন্দল ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে পুনরায় নির্বাচিত হওয়া কঠিন হবে না। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন হতে পারে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হবেন জানিয়ে মুহিবুর রহমান মানিক বলেন, ছাতক-দোয়ারা উন্নয়নের তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। এ উন্নয়ন ধরে রাখতে দল নেত্রী শেখ হাসিনা তাকেই মনোনয়ন দেবেন। জেলা আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষনা বিষয়ক সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরী জানান, দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ি তিনি মাঠে কাজ করছেন। দলীয় মনোনয়ন তাকেই দেয়া হবে। সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন জানান, দেশে নির্বাচনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে এ আসন থেকে তিনি বিএনপির মনোনয়ন পাবেন। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, দল নির্বাচনে অংশ নিলে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার আশাবাদী তিনি। কথা হয় আয়ুব করম আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, ৮ বছর ধরে আমি ছাতক-দোয়ারায় কাজ করছি। দু’বার আ’লীগের মনোনয়ন চেয়ে না পাওয়ায় এবার স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবো। এ আসনে মানুষ পরিবর্তন চায়। তার অনুসারীরা বলছেন, আগামী নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আয়ুব করম আলী ব্যাপক গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। খেলাফতে মজলিশের কেন্দ্রীয় যুগ্ন মহা সচিব মাওলানা শফিক উদ্দিন জানান, ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে মনোনয়ন চাইবেন তিনি। জাপার কেন্দ্রীয় সদস্য আ.ন.ম ওহিদ কনা মিয়া ও কেন্দ্রীয় সদস্য রুহুল আমিন জানান, এ আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে পার্টির চেয়ারম্যান মহাজোটের কাছে অনুরোধ করেছেন। জাতীয় পার্টি এ আসন পেলে আ.ন.ম. ওহিদ কনা মিয়া এ আসনে প্রার্থী হবেন বলে জানান। এদিকে রুহুল আমিন জানান, দলের চেয়ারম্যান তাকেই মনোনয়ন দেবেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd