সিলেট ১২ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২০শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:৩০ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৬, ২০১৮
গোলাম সরওয়ার বেলাল, জৈন্তাপুর :: সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ঐতিহ্যের পরিচিতি রয়েছে বিশ্বখ্যাত ভাবে। পান-সুপারি, স্বচ্ছ পানি, চা-বাগান, সারী নদীর সৌন্দর্য্য, তেল-গ্যাস, শ্রীপুর পাথর কোয়ারি, পিকনিক সেন্টার, গবেষণা কেন্দ্র গুলো পর্যটকদের মুগ্ধ করে। এছাড়া জৈন্তাপুরে রয়েছে প্রাচীন রাজপরিবারের দর্শনীয় স্থান, রয়েছে হাওর ও বিল। সেসব বিলে শীত মওসুমে আগমন ঘটে অতিথি পাখির। ভাদ্র মাস থেকে এখানে শীত মওসুমের পাখির আগমন শুরু হয়। ভোরে ও সোনালী সকালে দেখা মিলে কুয়াশার। শীত মওসুমকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর মানুষ তখন মেতে ওঠে অতিথি পাখি নিধনে। শীত শুরুর আগেই জৈন্তাপুর গোয়াইনঘাট ও কানাইঘাটের বিভিন্ন হাওর এলাকায় ফাঁদ পেতে মানুষের মধ্যে বন্য প্রাণী ও অতিথি পাখি শিকার উৎসব শুরু হয়। শিকারিরা পাখি শিকার করে বাজারে এনে চড়া দামে বিক্রি করে থাকে।
সরেজমিন জৈন্তাপুর উপজেলা দরবস্ত, হরিপুর, চিকনাগুল, চতুল, গোয়াইনঘাট জেলার বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা যায় অতিথি পাখি শিকার করে চোখ বেঁধে বা অন্ধ করে বিক্রি করতে বাজারে নিয়ে আসা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জনের সাথে আলাপকালে জানাযায় প্রতিনিয়তই বিভিন্ন ভাবে তারা ফাঁদ পেতে, কিংবা ছোট মাছের মধ্যে পটাশ মিশিয়ে ঝোপ-জঙ্গলে রেখে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি শিকার করা হচ্ছে। এলাকাবাসী জানান, শীত মওসুমের মাস খানেক পূর্ব হতে জৈন্তার বিভিন্ন বিলে অতিথি পাখির আগমন ঘটে সুযোগ সন্ধানী পাখি শিকারীরা যেন উৎসবে মেতে ওঠে। বিল এলাকায় ঘুরে কয়েকজন পাখি শিকারীর সাথে আলাপকালে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিবেদককে বলেন, শহর থেকে শখের নেশায় পাখি শিকার করতে আসে আর শখ বলে কথা। তাই মাঝে মধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ঝামেলা এড়াতে কোনো না কোনো ভাবে লিয়াজোঁ করে পাখি শিকার করেন তারা। এছাড়া তারা আরো বলেন, স্থানীয় পাখি শিকারীদের কারণে অনেক সময় তারা পাখি শিকার করতে পারে না শহরের শিকারীরা। জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বিলে গুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি সহ আঞ্চলিক পাখি পাওয়া যায়। জৈন্তাপুরের ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত, হরিপুর ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নে রয়েছে বেশ কয়েকটি হাওর। এগুলোর মধ্যে কেন্দ্রী হাওর, ডিবির হাওর, বেদু হাওর, বড় হাওর, বুজি হাওর, ডেঙ্গার হাওর, চাতলারপাড় হাওর, গোয়ালজুরি, পুটিজুরি, বড়জুরি, ফাবিজুরি, গাছজুরি হাওর উলেখযোগ্য। শীত শুরুর আগে থেকে এই হাওর গুলোতে আগমন ঘটে বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির। তার মধ্যে পাতিহাঁস, বালিহাঁস, ডাউক পাখি, অখা, সাদাবক ও কানাবকের বেশি আগমন ঘটে।
হরিপুর, চিকনাগুল ও দরবস্তের বাসিন্দারা বলেন- আমাদের এলাকায় বিভিন্ন উৎসবে, বিয়ে সাদিতে, এমনকি ছোট খাটো অনুষ্ঠানে পাখি না খাওয়ালে যেন উৎসবের অনন্দের ঘাটতি থেকে যায়। তাই এ অঞ্চলে পাখির চাহিদা একটু বেশি, এছাড়া বড় বড় ধরনে পাখি পাওয়া যায়। এসব বাজারে পাখির চাহিদা থাকায় শিকারীরা পাখি গুলো বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে এবং চড়া দামে বিক্রির জন্য কিছু অসাধু ব্যবসায়ী শিকারিদের কাছ থেকে অল্প দামে পাখি সংগ্রহ করে এনে বাজারে বিক্রি করে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন(বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কিম বলেন- সিলেটে শীতকালে মূলত পাখি শিকার হয়। এগুলো সিলেট মহানগরী সহ আশপাশের উপজেলার বাজার গুলোতে বিক্রি করা হয়। অনেক সময় প্রশাসনের নাকের ডগাতেই করা হয়। পাখি শিকারের আইন কার্যকর করতে প্রশাসনকে এগিয়ে আসতে হবে। যেসব এলাকায় পাখি শিকার করা হয় সেসব এলাকার তরুণ ও যুবসমাজকে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অতিথি পাখি শিকার বন্ধ করতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
এবিষয়ে জানতে সারী বিট কর্মকর্তা আক্তার হোসেন প্রতিবেদককে জানান- পাখী শিকার ও বন্ধের বিষয় পরিবেশ অধিদপ্তরের। আমাদের কাজ নয়। তার পরেও আমাদের চোঁখের সামনে পড়লে আমরা ব্যবস্থা গ্রহন করি। অর্থের বিনিময়ে আপনারা শিকারীদের কোন বাঁধা কিংবা অভিযার করছেন না প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রতিবেদকে জানান আপনাদের কাছে তথ্য থাকলে লেখা লেখি করেন। আমাদের জনবল কম থাকায় বিশেষ করে আমরা অভিযান পরিচালনা করি না।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd