সিলেট ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:২৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০১৮
শিক্ষকতা একটা মহান পেশা। শিক্ষক হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। তারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত। তাদের হাত ধরেই মূলত আমরা জ্ঞানের মহাসাগর পাড়ি দেই। শিক্ষার আলো মানুষের মনকে আলোকিত করে এবং মানুষের গুণাবলিকে বিকশিত করে। শিক্ষকরা তাদের জ্ঞান, মেধা, দূরদর্শিতা, ধৈর্যশীলতা ও সততার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তিলে তিলে গড়ে তোলেন। তারাই পারেন একটি জাতিকে গড়ে তুলে সমাজকে পাল্টে দিতে। মানসিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা জীবনের সব ক্ষেত্রে তাদের অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষকরা শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষা দেন তা কিন্তু নয়। তারা জীবনের সর্বক্ষেত্রে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেন।
তবে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর ভাগ্যোন্নয়ন ঘটেনি। দুঃখ-দুর্দশা, সীমাহীন বৈষম্য প্রতিনিয়ত শিক্ষক-কর্মচারীদেরকে ক্ষত বিক্ষত করে তুলেছে। জনগণ তথা জাতির আশা আকাঙ্খা ও প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটিয়ে তৈরি করা হয়েছে- জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০। কিন্তু শিক্ষানীতি বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের সুবিধা বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। অনেকেরই অজানা যে, আট বছর পূর্তিতে বেসরকারি কলেজের একজন শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক হতে না পারলে তাকে একটি টাইম-স্কেল দিয়ে সপ্তম গ্রেডে বেতন দেয়া হতো। বেসরকারি কলেজে আত্মঘাতী রেশিও প্রথার কারণে সেটি ভোগ করতে হতো দেশের ৮০ ভাগ বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের। দুঃখের বিষয় হলো, বেশির ভাগ বেসরকারি শিক্ষকদের প্রভাষক হিসেবেই অবসরে যেতে হয় এখনো; তখন সারা জীবনের একটি টাইম-স্কেলই ছিল তাদের শেষ ভরসা। এখন এটা তুলে দেয়া হলো।
উপরন্তো শিক্ষক-কর্মচারীদের নেই বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বৈশাখী ভাতা, পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা ভাতা, পূর্ণাঙ্গা বাড়ি ভাড়া। অথচ বেসরকারি শিক্ষকগণ দেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে শতকরা ৯৭ ভাগ শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে থাকেন। দেশে সর্বক্ষেত্রে অভাবনীয় পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় বৈষম্য এখনও দূর করা হয়নি, যা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে অপরিহার্য দাবি।
এদিকে, এমপিওভুক্ত প্রায় ৫ লক্ষ শিক্ষক-কর্মচারীর অবসরকালীন সুবিধা প্রদানের জন্য গঠিত ‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড’ এবং ‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট’ নামক দুইটি প্রতিষ্ঠানই অর্থাভাবে শিক্ষকদের সময়মত ভাতার দাবি মিটাইতে অপারগ। বেসরকারি স্কুল-কলেজ মাদ্রাসার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ও কর্মচারীদের অবসরকালীন ভাতা পাইতে যে অবিশ্বাস্য বিড়ম্বনা পোহাইতে হয় উহার কি কোনোই প্রতিকার নাই? বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের শিক্ষক ও কর্মচারীরা অবসর গ্রহণের পর চার/পাঁচ বৎসর কাটিয়া গেলেও তাহাদের ঐ পাওনা টাকা পান না।
বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস) ও অপরাপর বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন দীর্ঘ দিন থেকে বেসরকারি শিক্ষকদের নায্য দাবী দাওয়া নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম করে আসলেও এগুলো বাস্তবায়নে আজও কোন পদক্ষেপ নেওয়া হযনি। শিক্ষানীতি ২০১০ এর আলোকে এমপিওভূক্ত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, জাতীয় বেতন স্কেলের ৫% বার্ষিক প্রবৃদ্ধি, বৈশাখী ভাতা, বেতনস্কেল অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ও উৎসব ভাতা প্রদানের মত নায্য দাবী নিয়ে আমরা শিক্ষক সমাজ আর কতকাল অপেক্ষায় থাকতে হবে।
তবে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে সরকারের যে প্রচেষ্টা একেবারে নেই তাও কিন্তু বলা যাবে না। আমরা ইতোমধ্যে দেখেছি, প্রতি উপজেলায় একটি করে স্কুল-কলেজ জাতীয়করণ করা হয়েছে। বিষয়টিকে আমরা খুবই ইতিবাচক বলে মনে করি। তবে প্রশ্ন হলো শুধু প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে কেন অথবা মন্ত্রী/এমপিদের বিশেষ প্রতিষ্ঠান কেন? দেশের এমপিওভুক্ত ও উপযুক্ত সব বেসরকারি স্কুল-কলেজকে জাতীয়করণ করা হোক। আমাদের মনে হচ্ছে এর শুভ সূচনা প্রধানমন্ত্রী সম্পন্ন করে রেখেছেন, ইতোপূর্বে প্রাথমিক স্কুলকে জাতীয়করণের শুভ সূচনার মধ্য দিয়ে। তিনি পথ দেখিয়ে দিয়েছেন, নিশ্চয়ই এই পথে আবারো হাঁটবেন।
এ দেশে স্বাধীনতার পর প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান; সেহেতু জাতির জনকের অসমাপ্ত কাজ বেসরকারি স্কুল-কলেজ জাতীয়করণ এটিও প্রধানন্ত্রীকেই করতে হবে।
তবে জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা দেশনেত্রী শেখ হাসিনার ওপর শিক্ষকদের আস্থা বেড়েছে বইকি কমেনি। একটি জাতির আস্থা ও প্রত্যাশার শেষ জায়গা প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঠিক সিদ্ধান্তই পারে এ দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগপৎ পাল্টে দিতে এবং তা ঘটছেও বলতে দ্বিধা করি না। তবে শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের প্রচেষ্টা আরো গতিশীল করা দরকার।
দেশের ৯৭ ভাগ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের সরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষকদের চেয়ে কম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে দেশের কাঙ্খিত শিক্ষার অগ্রযাত্রা সম্ভব নয়। তাই বেসরকারি শিক্ষকদের মূল বেতন স্কেলের সঙ্গে ৫ ভাগ বেতন প্রতি বছর বাড়ানো হোক। কারণ যেহেতু এটা একটা স্থায়ী বেতন কাঠামো এবং বেসরকারি কলেজের শিক্ষকরা সারা জীবনে যে একটি টাইম-স্কেল পেতেন সেটি বহাল রাখার জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি জানাই। দ্বিতীয়ত, সম্মানজনক বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতার ব্যবস্থা করা হোক। বিভাগীয় পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হলে বেসরকারি চাকরিতেও মেধাবীরা আসবে এবং সরকারি-বেসরকারি বৈষম্য দূর হতে থাকবে, শিক্ষার অগ্রযাত্রাকে কেউ আর থামিয়ে রাখতে পাবে না।
কেউ কেউ বলতে পারেন সরকারের পক্ষে এত বিশাল অর্থ জোগান দেয়া সম্ভব নাও হতে পারে। আমরা মনে করি বেসরকারি স্কুল-কলেজ জাতীয়করণ করা হলে সরকার উপকৃত হবে। এ দেশে এমনো বেসরকারি স্কুল-কলেজ আছে যাদের আয় বছরে কোটি কোটি টাকা। সব স্কুল-কলেজের আয় সরকার রাজস্বে নিয়ে গেলেই পারেন; বিনিময়ে শিক্ষকদের ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করা হোক। এতে দেখা যাবে সরকার এতসব শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন-ভাতা দেয়ার পরও সরকারি ফান্ডে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব রয়ে গেছে।
লেখক: কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাংগঠনিক সম্পাদক,
বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি (বাকবিশিস) সিলেট মহানগর শাখা।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd