হত্যা মামলা প্রত্যাহার করতে বাদীকে হুমকি

প্রকাশিত: ৬:৫৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৮

হত্যা মামলা প্রত্যাহার করতে বাদীকে হুমকি

Manual3 Ad Code

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : কুমিল্লার তিতাস উপজেলার কালিপুরে যৌতুকের বলি গৃহবধূ ফারজানা হত্যা মামলার আসামী মিঠনের ঘরের সমস্ত মূল্যবান মালামাল দুই দফা গতকাল ২৯ সেপ্টেম্বর এবং আজ ৩০ সেপ্টেম্বর একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীবাহিনী লুটপাট করে নিয়ে যায় ।

গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় এবং আজ সকাল ১১টায় কালিপুর গ্রামের ফারজানা হত্যার আসামী মো. মুকবুল মিয়ার ছেলে মিঠন মিয়ার ঘরে আসমানিয়া গ্রামের আরিফুজ্জামান খোকার নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী ঘরের সমস্ত মূলবান জিনিসপত্র লুটপাট করে নিয়ে যায়। সাথে আসামী মিঠনের বোন আকলিমা ও ভাই ইব্রাহিমের বউ রোজিনাও ছিল।
নিহত ফারজানার ভাই ফয়সাল জানায় দুপুরের দিকে আসমানিয়ার খোকার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কাউকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে মিঠনের ঘরে ভাংচুর চালায়। পরে তালা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে ফারজানা হত্যার সমস্ত আলামত নষ্ট করে এবং নিয়ে যায়। ঘরের সমস্ত মূল্যবান জিনিসপত্র বস্তায় ভরে নিয়ে যায়। ঘরের সব জিনিসপত্র তছনছ করে ভিডিও করে নিয়ে যায়। এবং হুমকি দেয় থানায় মামলা করবে।
নিহত ফারজানার মা বকুল বেগম জানান, যারা ডাকাতি করেছে আমি তাদের কয়েকজনকে চিনতে পেরেছি এর মধ্যে ছিল তিতাস উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নারান্দিয়ার কামাল পারভেজ, চকের বাড়ির আলী আক্কাস, জুলফিকার, খলিলাবাদের শাহজালাল ও ছবিরসহ ২৫-৩০ জনের একটি দল। তারা প্রথমে এসেই তিন জন তিন জন করে চর্তুরপাশে দা, ছেনি,লাঠি ও রিভলবার নিয়ে দাড়িয়ে যায়, যাতে কেউ সামনে এগুতে না পারে। তাছড়া ঐ সময় বাড়িতে কোন পুরুষ মানুষ ছিল। আমার ভাসুরের ছেলে আনিস বাঁধা দিলে তাকে মেরে হাত ভেঙ্গে দেয়। আমার ঝাঁ দেলোয়ারা বেগম বাঁধা দিলে তাকেও ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় এবং গলায় থাকা স্বর্ণের এক ভরি ওজনের চেইনটি নিয়ে যায়।
নিহত ফারজানার বাবা ফজর আলী বলেন, তিতাস থানার এসআই আব্দুর রহমানকে (মামলার তদন্ত কর্মকর্তা) ফোন দিলে তিনি বলেন আমার কি করার আছে, আমি কি করব। থানা থেকে কোন সহযোগিতা পাই নি। পরে থানায় গেলে তিনি বলেন আমি বিষয়টি দেখতেছি।
ঘরের চাবিটি ছিল মহিলা মেম্বার সুমী বেগমের কাছে। গত কিছু দিন যাবত চাবিটি দেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে আমাদেরকে চাপ দিচ্ছিল। একবার তিতাস থানার ওসি (তদন্ত) মনজুর কাদের ভূইয়ার কথা বলে নিতে চেয়েছিল। পরে আমাদের সন্দেহ হলে স্যারকে ফোন দেই এবং তিনি বলেন আমি বলিনি। ঘরে এমন কোন আলামত ছিল যা নেবার জন্য আসামী পক্ষ হন্যে হয়ে ঘরে ঢুকেতে চেয়েছিল। আজ তাদের সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে।

এর কিছু দিন আগ থেকেই যৌতুকের বলি গৃহবধূ ফারজানা হত্যার মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বাদী পক্ষকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী ফজর আলী।

তিনি সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, মামলার মূল আসামীসহ অন্য আসামীরা প্রায়ই আমাকে ও আমার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদেরকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল। তারা বিভিন্ন মোবাইল নম্বর থেকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে আমার পরিবারের সকল সদস্যকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিচ্ছে। যেসব নম্বরে হুমকি দিচ্ছে সেগুলো হলো: ০১৮৩৩৮০৩১৩১/ ০১৮১৮৬৪১৯৩৪/০১৮১১৫৭১৩২৮/০১৮৩৯৪৬১১৭৯/ ০১৮১৯১১৪৬৫৪/ ০১৮৩৬৭০৫৪১৮/০১৮৭৫৬৩৫৫৯৯।

এছাড়াও মামলার মূল আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদেরকে গ্রেফতার করছে না বলে অভিযোগ করেন বাদী পক্ষ। পুলিশকে বললে পুলিশ বলে কই আমরা তো খুজে পাচ্ছি না।

ফারজানা হত্যার তদন্ত কর্মকর্তা তিতাস থানার এসআই আবদুর রহমান বলেন, আমরা আসামীদের গ্রেফতারের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কেউ যদি আসামীদের অবস্থান জানতে পারেন, আমাদেরকে বললে অবশ্যই আমরা ধরার চেষ্টা করব।

এই বিষয়ে ভিটিকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোল্লাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমি জানি। আমার কাছে বাদী পক্ষ অভিযোগ করেছে। মামলা চলছে এখন আদালতের এখতিয়ার। আমি বলব ন্যায় বিচারের স্বার্থে পুলিশ তার দায়িত্ব পালন করবে।

Manual2 Ad Code

অভিযুক্ত কামাল পারভেজ বলেন, আমি গিয়েছিলাম সেখানে ডাকাতি করতে নয়। ছেলের আত্মীয় স্বজনকে নাকি ঘরে ঢুকতে দিচ্ছে না, সেটা দেখতে। তারা তাদের ঘরে ঢুকবে তাতে অন্য কারো সমস্যা হওয়ার তো কথা না।

Manual4 Ad Code

উল্লেখ্য গত ২৬ আগস্ট ২০১৮ইং কুমিল্লার তিতাসে যৌতুকের টাকা না পেয়ে গৃহবধূ ফারজানা আক্তারকে (১৭) কুপিয়ে-পিটিয়ে হত্যার পর বসত ঘরের বারান্দায় লাশ ঝুলিয়ে রেখে পরিবারের লোকজন পালিয়ে যায়। পরে লোকমূখে খবর পেয়ে ভিকটিমের পরিবার লাশ উদ্ধার করে দাউদকান্দির গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তবে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার ওই গৃহবধূকে মৃত ঘোষনা করে। উপজেলার ভিটিকান্দি ইউনিয়নের কালিপুর গ্রামে ঘটে এ ঘটনা। নিহত গৃহবধূ ওই গ্রামের মোঃ ফজর আলীর মেয়ে ও একই গ্রামের মকবুল মিয়ার ছেলে মিঠুন মিয়ার স্ত্রী। এই ঘটনায় স্বামী মিঠুন মিয়া, দজ্জাল ননস শিল্পী আক্তার ও শ্বশুর মুকবুল মিয়াসহ ৬ জনকে আসামী করে তিতাস থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিল।

এদিকে এলাকাবাসীসহ পরিবারের লোকজন অভিযোগ করে বলেন, লাশ নিয়ে পুলিশ বহু নাটক করে এরপর মামলা নেয়। খুনিরা প্রভাবশালী এক নেতার মাধ্যমে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ারও চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেন তারা।

Manual8 Ad Code

পরিবার ও এলাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় বছর দেড়েক পূর্বে উপজেলার ভিটিকান্দি ইউনিয়নের কালিপুর গ্রামের মুকবুল মিয়ার ছেলে মিঠুনের সাথে একই গ্রামের প্রতিবেশী মটর মেকানিক মো. ফজর আলীর মেয়ে ফারজানা আক্তারের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের পর প্রায় আড়াই লাখ টাকার আসবাবপত্র দিলেও পাঁচ লাখ টাকা নগদ যৌতুকের জন্য প্রতিনিয়তই চাপ সৃষ্টি ও মানষিক নির্যাতন করতো ফারজানাকে।

এই নির্যাতনের খবর পেয়ে স্বামী মিঠুন মিয়া কিছুদিন পূর্বে প্রবাস থেকে দেশে চলে আসে। আর এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে গত ২৫ আগস্ট থেকে কয়েক দফা গৃহবধূ ফারজানাকে বর্বর নির্যাতন করা হয়। সবশেষ ফারজানার মা তার মেয়েকে নিতে আসলেও শ্বশুর পরিবারের লোকজনকে যৌতুকের পাঁচ লাখ টাকা না দেয়ায় মেয়েকে নিতে দেয়নি পাষন্ড শ^শুর পরিবারের লোকজন। এরপর পরিকল্পিতভাবে ২৬ আগস্ট দিবাগত রাতের কোন এক প্রহরে ফারজানাকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করে লাশ ঘরের বারান্দায় কাঠের সাথে ঝুলিয়ে রাখে। এরপর কৌশলে স্বামীর পরিবারের লোকজন দিনের বেলায় একে একে আত্মগোপনে চলে যায়।

Manual5 Ad Code

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

September 2018
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

সর্বশেষ খবর

………………………..