নির্বাচনী হাওয়া : প্রার্থিতায় সিলেট-৪ আসনে আসতে পারে নতুন চমক

প্রকাশিত: ৫:৩৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৮

নির্বাচনী হাওয়া : প্রার্থিতায় সিলেট-৪ আসনে আসতে পারে নতুন চমক

নুরুল হক শিপু :: চলতি মেয়াদসহ পাঁচবার সিলেট-৪ আসন ধরে রেখেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আর এই পাঁচবারই এ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইমরান আহমদ। পাঁচবার আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে থাকায় এ আসনটি আওয়ামী লীগের আসন হিসেবেই বিবেচিত। তবে এবার আওয়ামী লীগকে পৃথকভাবে ঠেকাতে চায় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং তিনবার ক্ষমতায় থাকা বিএনপি। আসনটিতে এখন পর্যন্ত জাপার একক প্রার্থীর নাম শোনা গেলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক।

প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যময় পাথররাজ্য হিসেবে পরিচিত সীমান্তবর্তী তিন উপজেলা গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ। এই তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৪ আসন। বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইমরান আহমদ এ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে এ আসন থেকে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি নেতা প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এই আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ২০০১ সালে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম এ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। অবশ্য ২০০৮ সালে বিএনপি নেতা দিলদার হোসেন সেলিমকে পরাজিত করে আসনটি পুনরুদ্ধার করেন আওয়ামী লীগ নেতা ইমরান আহমদ।

সূত্রমতে, এবার আওয়ামী লীগের আরো দু’জন প্রার্থী এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন। আর এ কারণে অনেকটাই বেকায়দায় রয়েছেন বর্তমান এমপি ইমরান আহমদ।

জানা গেছে, এবারো বর্তমান এমপি ইমরান আহমদ দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তাঁর সাথে মানোনয়ন প্রতিযোগীতায় নেমেছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুক আহমদ নির্বাচনে পরাজিত হন।

আর সিলেট জজ কোর্টের অ্যাডিশনাল পিপি, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে রাজপথ কাঁপানো ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান বর্তমান এমপি ইমরান আহমদের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ স্থানীয় সকল কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ এবং দলের জন্য নিবেদিত কাজ করায় দল তাঁকে মনোনয়ন দেবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস দেশরতœ শেখ হাসিনা আমার উপর আস্তা রাখবেন।’

অপরদিকে, এ আসনে আওয়ামী লীগকে ঠেকাতে জাতীয় পার্টি এবং বিএনপি পৃথকভাবে কাজ করছে। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সিলেট জেলার আহ্বায়ক এটিইউ তাজ রহমান এ আসন থেকে নির্বাচন করবেন-যা অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন।

আর বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী দু’জন। তারা হলেন এ আসনের সাবেক এমপি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম ও গোয়াইনঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবদুল হাকিম চৌধুরী। তবে বিএনপি নির্বাচনে আসলে এ আসন থেকে দিলদার হোসেন সেলিমই মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বর্তমান এমপি ইমরান আহমদ বলেন, ‘জাতির পিতার আদর্শ ধারণ ও লালন করে প্রথম কাজ হিসেবে এই আসনে আমি আওয়ামী লীগকে জনপ্রিয় করার কাজ হাতে নেই। আমার শুভাকাক্সিক্ষদের সহযোগীতায় এই কাজে আমি সফল হয়েছি। এরপর জননেত্রী ও দেশের সফল প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় আমি পাঁচবার এ আসনের এমপি নির্বাচিত হই। নেত্রী আমাকে মূল্যায়ন করায় জনতার রায় আমার এবং নৌকার পক্ষে এসেছে বার বার। তিনি বলেন, আমি ইমরান আহমদ আওয়ামী লীগের একজন নগন্য কর্মী। দেশরতœ শেখ হাসিনার হাত ধরে এ আসনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আমার বিশ্বাস আমি এবারো এ আসন থেকে মনোনয়ন পাবো।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম জানিয়েছেন, দলের দুর্দিনে তিনি মাঠ ছেড়ে যাননি। এখনও দলের জন্যই কাজ করে চলেছেন। তিনি বলেছেন, এমপি থাকার সময় তিনি এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এ জন্য নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটাররাও তাকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছেন। মানুষের সেবা ও এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আবারও দলের মনোনয়ন চাইবেন তিনি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও তাকেই মনোনয়ন দেবেন বলে তিনি মনে করছেন। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশ্বর্ত মুক্তি চেয়েছেন।

সিলেট জেলা বিএনপির সহসভাপতি আবদুল হাকিম চৌধুরী জানান, তিনি পরপর দু’বার আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বর্তমানে এ আসনের ভোটাররা তাদের সেবা করার জন্য তাকে দলীয় মনোনয়ন চাওয়ার প্রেরণা জোগাচ্ছেন। কেন্দ্র থেকেও তাকে এই আসনে কাজ করার কথা জানানো হয়েছে। তাই তিনি জনগণ ও কেন্দ্রের প্রত্যাশা পূরণের জন্য আবারও মনোনয়ন চাইবেন। তাঁর বিশ্বাস, তিনি মনোনয়ন পাবেন। বিএনপি তাকে নিরাশ করবে না।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, সিলেট-৪ আসনে মোট ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৯ ভোটারের মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৮৪ হাজার ৬২ এবং নারী ভোটার এক লাখ ৭৪ হাজার ৪১৭ জন।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন


আর্কাইভ

September 2018
S S M T W T F
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  

সর্বশেষ খবর

………………………..