সিলেট ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:১৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : যশোরে ‘পলিথিনে মোড়ানো লাশ’ উদ্ধার ও দাফনের ১১ দিন পর সেই সাথী খাতুনকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ।
রোববার সকালে সদর উপজেলার জলকর গ্রামের আজিজ লস্করের বাড়ি থেকে পুলিশ তাকে জীবিত উদ্ধার করেছে।
সাথী খাতুন চৌগাছার নয়ড়া গ্রামের আমজেদ আলীর মেয়ে ও একই উপজেলা চাঁদপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফার স্ত্রী। তাদের এহসান নামে ছয় বছরের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে।
সাথীর ভাই বিপ্লব হোসেন বলেন, সাথী গত ১৪ জুলাই ‘বাইরে কাজে যাচ্ছি, বিকালে ফিরে আসবো’ বলে স্বামীর বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর থেকে তার কোনো সন্ধান ছিল না। এ ব্যাপারে তার পিতা আমজাদ আলী বাদী হয়ে চৌগাছা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছিলেন।
এরপর গত ২৯ আগস্ট রাতে যশোরে সরকারি সিটি কলেজ এলাকা থেকে পলিথিন মোড়ানো অজ্ঞাতপরিচয় এক তরুণীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই লাশ উদ্ধারের খবরে পরদিন ৩০ আগস্ট যশোর কোতোয়ালি থানায় ছুটে যান চৌগাছার নয়ড়া গ্রামের আমজেদ আলী। তিনি ‘অজ্ঞাতপরিচয় লাশটি’ তার মেয়ে সাথী খাতুনের বলে শনাক্ত করেন।
বিপ্লব হোসেন দাবি করেন, তার পিতা লাশ দেখে হত-বিহ্বল হয়ে তাৎক্ষণিক লাশটি তার মেয়ের বলে শনাক্ত করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে এ নিয়ে তদন্ত হলে তিনি জানতে পারেন তার ভুল হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া সাথী খাতুন যুগান্তরকে বলেন, স্বামী নির্যাতর করত। তাই নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে ১৪ জুলাই স্বামীর বাড়ি ছেড়ে যশোরে চলে আসি। শহরের নিউ মার্কেটে বাসে নেমে এক ঘণ্টা বসেছিলাম। এক পর্যায়ে মালেশিয়া প্রবাসী প্রতিবেশি মান্নুকে ফোন দিই। তিনি সাথীকে ধৈর্য্য ধরতে বলেন। যেন আত্মহত্যা না করে, সেই পরামর্শ দেন। যদিও মান্নুর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক পাঁচ মাস আগে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
সাথী আরও বলেন, এক পর্যায়ে সদরের ফতেপুর ইউনিয়নের জলকর গ্রামে যাই। যাওয়ার পথে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ভেঙে পানিতে ফেলে দিই। এরপর ওই গ্রামের আজিজ লস্করের বাড়িতে আশ্রয় নিই।
সাথী বলেন,গত শুক্রবার আজিজ লস্কর পত্রিকার পাতায় আমার মৃত্যুর সংবাদ দেখেন। তারপর থেকে তিনি আমাকে আর আশ্রয় দিতে রাজি হননি। এরপর বাড়িতে বাবার মোবাইল নম্বরে (মুখস্থ ছিল) কল করি। এরপর পুলিশকেও জানাই। পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করেছে।
যদিও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিরুজ্জামান বলছেন ভিন্ন কথা। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে তিনি খুঁজে পান অন্যযোগ সূত্র। থানার এসআই আমিরুজ্জামান বলেন, মেয়েটির সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিক ছেলের সম্পর্ক ছিল বিভিন্ন সময়ে। তদন্ত করতে গিয়ে পরিবারের লোকজন জানালো গত ১৬ মার্চ সাথী খাতুন ভারতে গিয়েছিল চিকিৎসার জন্য। এক মাস ১১ দিন পর চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরে। তবে সাথী একাই গিয়েছিল ভারতে। বিষয়টি আমার সন্দেহ হয়। এরপর সাথীর পাসপোর্ট বইটি যাচাই করি। এতে দেখা যায়, সাথী ১৬ মার্চ-২৪ মার্চ ভারতে ছিল। কিন্তু পরিবারের লোকজন বলছে ১ মাস ১১ দিন। তাহলে বাকি দিন কোথায় ছিল। এগুতে থাকে তদন্ত।
তবে ভারতে থাকাকালীন সাথী ভারতের একজনের মোবাইল নম্বর থেকে কথা বলেছিল। সেই নম্বর জোগাড় করি। কথা বলে জানতে পারি, সাথী ভারতে প্রবেশ করার এক ঘন্টা আগে মালেশিয়া প্রবাসী চাঁদপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মান্নু ওপারে (ভারতে) হাজির হয়। সেখান থেকে তারা দুজন ভারতে চিকিৎসার জন্য যায়। পরে চিকিৎসা শেষে ২৪ মার্চ সাথী ও মান্নু দেশে আসে।
আমিরুজ্জামান আরও বলেন, তবে মান্নু মালেশিয়া থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে ঢুকলেও পরিবারের কেউ জানতো না। ২৪ মার্চ থেকে এক মাসের বেশি সময় সাথী ও মান্নু যশোর সদর উপজেলার জলকর গ্রামের আজিজ লস্করের বাড়িতে অবস্থান করেন। যদিও মান্নুর সঙ্গে আজিজ লস্করের পরিবারের পরিচয় ২০১২ সালে। মালেশিয়া থেকে রং নাম্বারে আজিজ
লস্করের পরিবারের সঙ্গে মান্নুর পরিচয় হয়। আর আজিজ দম্পতির কোনো সন্তান না থাকায় মান্নু তাদের ধর্ম পিতা মাতা বলেন। সেই থেকে তাদের সম্পর্ক। এপ্রিল মাসের শেষের দিকে মান্নু মালেয়িশায় ফিরে যান। আর সাথী বাড়িতে। বাড়ির সবাই জানে সাথী চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে।
সর্বশেষ গত ১৪ জুলাই সাথী স্বামীর বাড়ি থেকে পালিয়ে চলে যান। এরপর সদর উপজেলার জলকর গ্রামে পূর্ব পরিচিত আজিজ লস্করের বাড়িতে আশ্রয় নেন। রোববার সকালে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তাহলে যে লাশ দাফন করা হয়েছে, সেটি কার?- এমন প্রশ্নের জবাবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আমিরুজ্জামান বলেন, ধরে নিয়েছিলাম ওই লাশটি সাথীর। কিন্তু তদন্ত করতে গিয়ে আসল রহস্য উন্মোচন হয়েছে। এবার ওই লাশটি আসলে কার, সেই রহস্য উদঘাটনে কাজ করব।
Sharing is caring!


………………………..

Design and developed by best-bd