জলমগ্ন দুর্ভোগের নগরী

প্রকাশিত: ১১:১৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০১৮

জলমগ্ন দুর্ভোগের নগরী

ডেস্ক নিউজ :: ভারী বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানিতে নগরীর নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে পানিতে। এ সময় বাসাবাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনায় পানি ঢোকে। এতে করে অসহনীয় দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। এছাড়া ব্যস্ততম কয়েকটি সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় আজ বুধবার সকাল ১১টা পর্যন্ত ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এতে করে ভূমি ধসের আশংকায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন।

গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১২১ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়া কর্মকর্তা মাহমুদুল হক। পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ডিউটি সহকারী প্রদীপ কান্তি রায় বলেন, মঙ্গলবার ভোর ৪টা ৪১ মিনিটে প্রথম জোয়ার শুরু হয় এবং সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে প্রথম ভাটা হয়। একই দিন দ্বিতীয় জোয়ার শুরু হয় বিকাল ৫টা ২০ মিনিটে এবং দ্বিতীয় ভাটা শুরু হয় রাত ১১টা ১৫ মিনিটে। ফলে গতকাল ভোররাত থেকে শুরু হয়ে দিনের অধিকাংশ সময় জলাবদ্ধতার মধ্যে ছিল নগরীর অনেক এলাকা। ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে জোয়ারের পানি মিলে যাওয়ায় খুব কম সময়ের মধ্যেই নগরীর নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। বিশেষ করে আগ্রাবাদ এঙেস রোড,সিডিএ আবাসিক এলাকা, হালিশহর, পোর্ট কানেক্টিং রোড, মুহুরী পাড়া, প্রবর্তক মোড়, চকবাজার, ফুলতলা বাজার, ডিসি রোড, রসুলবাগ আবাসিক এলাকা, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, বহদ্দারহাট, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, চান্দগাঁওসহ বাকলিয়ার নিম্নাঞ্চল হাঁটু ও কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে।

ওইসব এলাকায় ভবনগুলোর নিচতলায়, বিভিন্ন বাসা–বাড়িতে পানি ঢোকে। এছাড়া দোকানপাট, মার্কেট থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থাপনাও পানির নিচে তলিয়ে যায়। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। পানির মধ্যেই দিনভর কাটাতে হয়েছে তাদের। এ সময় বেশির ভাগ দোকানপাট বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। যেগুলো খোলা ছিল দোকান মালিকদের পানিতে দাঁড়িয়ে ব্যবসা করতে দেখা যায়।

নগরীর চকবাজার থানাধীন চক সুপার মার্কেটের নিচতলা কোমর সমান পানিতে তলিয়ে যায়। আশপাশে বিভিন্ন দোকানপাট ও মার্কেটগুলোতেও ছিল একই অবস্থা। আধুনিক চক সুপার মার্কেটের সভাপতি মোহাম্মদ খোরশেদ আলম গতকাল আজাদীকে বলেন, মার্কেটটির নিচতলায় কোমর সমান পানি উঠেছে। এ সময় পানিতে পনেরো থেকে বিশ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে।

বিকালে ধীরে ধীরে পানি নামতে থাকে। এছাড়া বিভিন্ন নালার উপর অস্থায়ীভাবে নির্মিত সাঁকোগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বাকলিয়াবাসী। এ সময় অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে ওইসব সাঁকো পার হন। এলাকাগুলোর অলিগলি তলিয়ে যাওয়ায় কাজে বের হওয়া মানুষজনকে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়।

এদিকে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, প্রবর্তক মোড়, আগ্রাবাদ এঙেস রোড, ছোটপুল, পোর্ট কানেক্টিং রোড পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দিনের কিছু সময় ওইসব সড়কে যানবাহন চলাচল একপ্রকার বন্ধ থাকে। এতে নগরবাসীর দুর্ভোগ আরো বাড়ে। স্কুল ও কলেজ পড়ুয়াদের পাশাপাশি কর্মজীবীদের বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বেশিরভাগই পায়ে হেঁটে কর্মক্ষেত্রে যান। সেখানে সচল ছিল রিকশা। তবে সিএনজি টেঙি, মিনিবাসসহ কোনো কোনো যানবাহন পানির মধ্যে চলতে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। কিছু সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি ও গণপরিবহন হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করে। কোনো কোনো সড়কে মারাত্মক যানজট দেখা যায়।

বৃষ্টির সাথে হালকা ও মাঝারি ঝড়ো হাওয়া থাকায় ছাতা থাকার পরও বৃষ্টি থেকে রেহাই পায়নি বলে জানিয়েছেন আব্দুল মোতালেব নামে চকবাজারের এক বাসিন্দা।

সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একনাগাড়ে হালকা ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে চট্টগ্রাম কলেজ, মহসিন কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল কম। রাস্তাঘাটে লোকজনের উপস্থিতিও তুলনামূলক ছিল কম।

পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের ডিউটি সহকারী প্রদীপ কান্তি রায় বলেন, আজ সকাল ১১টা পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার পাশাপাশি আকাশ আংশিক মেঘলা থেকে আবহাওয়া প্রধানত মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সেই সাথে ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী বৃষ্টিপাতের সাথে কোথাও কোথাও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে, যা সর্বোচ্চ ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

এদিকে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় গতকাল থেকে আজ বুধবার সকাল ১১টা পর্যন্ত ভারী বর্ষণের সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। এতে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমি ধসের আশঙ্কার কথা জানানো হয়। এমন সর্তকতা পাওয়ার পর গতকাল সকাল থেকে জেলা প্রশাসনের কয়েকটি টিম পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে উদ্যোগ নেয়।

অতিরিক্তি জেলা প্রশাসক (সার্বিক) হাবিবুর রহমান আজাদীকে বলেন, সকাল থেকেই ৪/৫টি পয়েন্টে মাইকিং করে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের কয়েকটি টিম ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলোতে গিয়ে ওখানকার লোকজনকে বুঝানোর চেষ্টা চালাচ্ছে; যাতে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় তারা কিছু সময়ের জন্য পাহাড় থেকে সরে যায়। পাশাপাশি স্থানীয় কাউন্সিলর ও ওখানকার বিভিন্ন সমিতি/সংগঠনগুকেও এ ব্যাপারে বুঝানো হচ্ছে। পাহাড়ে বসবাস করা অনেকেই জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখেছেন। রাতে দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা দেখলে তারা সরে যাবেন।

ইতোমধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পাশাপাশি ফায়ার ব্রিগেড ও অন্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান হাবিবুর রহমান।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..