সিলেট ১৭ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৬ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:১৮ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০১৮
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার ছাতক সিমেন্ট কারখানা থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের সিমেন্ট উত্তোলন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জালিয়াতির অপরাধে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া রুবেল মিয়া নামের এক ডিলারকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এক দিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার তাকে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়।
এর আগে বৃহস্পতিবার(১৯জুলাই) সুনামগঞ্জের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম মজুমদারের আদালতে ছাতক থানার ওসি (অপারেশন) কাজী গোলাম মোস্তফা ৩দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করলে আদালত তার ১দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জানা যায়,রূপালী ব্যাংক ঢাকা কাপ্তান বাজার শাখার ২কোটি টাকার ভুয়া ব্যাংক গ্যারান্টি ও পূবালী ব্যাংক ছাতক শাখার ৮টি জাল ক্রেডিট ভাউচার দিয়ে মেসার্স সম্পা এন্ড সন্স এবং হানিফ এন্টাপ্রাইজের নামে সত্ত্বাধিকারী ছাতক শহরের ফকিরটিলা এলাকার মৃত কালা মিয়ার পূত্র রুবেল মিয়া প্রায় এক বছর আগে আড়াই কোটি টাকার সিমেন্ট উত্তোলন করে জালিয়াতির মাধ্যমে। জালিয়াতির এ বিষয়টি নিয়ে কারখানার শ্রমিক-কর্মচারী মধ্যে তোলপাড় শুরু হলে তৎকালীন সময় জালিয়াতির বিষয়টি বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিকে ফলাও আকারে ছাপা হয়। এ ঘটনায় কারখানার কিছু উর্ধতন কর্মকর্তা,সিবিএ নেতা ও কয়েকজন রাঘব বোয়ালের নাম উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
সম্প্রতি কারখানায় এসে দুর্নীতি দমন কমিশনের লোকজন বিষয়টি তদন্ত করে গেছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। গত রোববার (১৫জুলাই) মধ্যরাতে তাকে নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের একটি টিম। পরে জালিয়াতির অভিযোগে রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে এসব মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। অত্যন্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করে থানা পুলিশ সোমবার ডিলার রুবেল মিয়াকে ওই দুটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সুনামগঞ্জ জেল-হাজতে পাঠানো হয়। এসব মামলায় রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে ২কোটি ৫৩লাখ ৪৫হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। জানা যায়,মেসার্স সম্পা এন্ড সন্স এবং হানিফ এন্টাপ্রাইজ নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধীকারী রুবেল মিয়া ২০১৭সালের ২নভেম্বর থেকে ৯ডিসেম্বর পর্যন্ত পূবালী ব্যাংক কারখানা শাখার কর্মকর্তার স্বাক্ষর জাল করে ৮টি ভূয়া ক্রেডিট ভাউচারের মাধ্যমে সিমেন্ট উত্তোলনের জন্য কারখানায় সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেন। জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরী ওই ক্রেডিট ভাউচারের বিপরীতে রুবেল মিয়া ৯২লাখ ৫০হাজার টাকার সিমেন্ট উত্তোলন করেন। পরবর্তী সময়ে ব্যাংক স্টেটমেন্ট সংগ্রহ করা হলে হিসেবের আকাশ-পাতাল গড়মিল ধরা পড়ে। এছাড়াও জালিয়াত রুবেল মিয়া রাজধানী ঢাকা রূপালী ব্যাংক কাপ্তান বাজার শাখার সাবেক ম্যানেজার মাসুদুর রহমান ও কর্মকর্তা বিকাশ দত্তের যোগসাজসে ২কোটি টাকার ভূয়া ব্যাংক গ্যারান্টি সনদ জালিয়াতির মাধ্যমে ১কোটি ৬০লাখ ৯৫হাজার টাকার সিমেন্ট উত্তোলন করেছেন। সিমেন্ট ডিলার রুবেল মিয়ার জালিয়াতির ঘটনার প্রায় ৯মাস পর কারখানার অতিরিক্ত ব্যবস্থাপক,প্রশাসনের বিভাগীয় প্রধান রেজাউল করিম বাদী হয়ে থানায় ওই দুটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলা দুটির একটিতে সিমেন্ট ডিলার রুবেল মিয়া ছাড়াও রূপালী ব্যাংক রাজধানী ঢাকা’র কাপ্তান বাজার শাখার সাবেক ম্যানেজার মাসুদুর রহমান ও একই শাখার সাবেক সিনিয়র কর্মকর্তা বিকাশ দত্তকেও আসামী করা হয়েছে।
ছাতক সিমেন্ট কারখানার সূত্রে জানাযায়,জালিয়াতির বিষয়টির ব্যাপারে ২০১৭সালের ২৫ডিসেম্বর ছাতক সিমেন্ট কারখানা থেকে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি)বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত ভাবে জানানো হয়। গত ৩জানুয়ারী ৩৭৭তম সিসিসিএল এন্টারপ্রাইজ বোর্ড সভায় অর্থ আত্মসাৎ ও জালিয়াতির বিষয়টি উপস্থাপন করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ওই সভায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের একজন উপ-সচিব ও বিসিআইসি প্রধান কার্যালয়ের দু’জন কর্মকর্তা সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। পরবর্তীতে ওই গঠিত তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে জালিয়াতির বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করা হয়।
ব্যাংক গ্যারান্টি ও ক্রেডিট ভাউচার জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়লে অভিযুক্ত সিমেন্ট ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা আত্মসাতের দায় স্বীকার করে ৩শ’ টাকার নন-জুডিশিয়াল ষ্ট্যাম্পে একটি অঙ্গিকার নামায় স্বাক্ষর করেন।
জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ হওয়া মোট ২কোটি ৫৩লাখ ৪৫হাজার টাকা ফেরত দেয়ার জন্য রুবেল মিয়া তিনটি ব্যাংকের নিজ একাউন্টের ২৭টি চেক স্বাক্ষর করে কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন। কিন্তু এতবড় জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়ার পরও কারখানা কর্তৃপক্ষ রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে কোন আইনী ব্যবস্থা নেয় নি। জালিয়াতির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর কারখানার সংশ্লিষ্ট শাখায় ৭লাখ ৪০হাজার টাকা জামা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।স্থানীয় একাধিক ব্যবসায়ীর অভিযোগ,এক সময়ের খেয়া নৌকার মাঝি নিরক্ষর রুবেল মিয়ার সাথে জালিয়াতি কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কারখানার কিছু কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতারা জড়িত রয়েছেন। কারখানার এসব কর্মকর্তা ও শ্রমিক নেতাদের খুটির জোরেই রুবেল মিয়া এতবড় জালিয়াতি করেও ৯মাস আইনী ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিল।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছাতক থানার ওসি (অপারেশন) কাজী গোলাম মোস্তাফা জানান,রিমান্ড শেষে আসামী রুবেল মিয়াকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd