সিলেট ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৩৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ৪, ২০১৮
আবু তাহের চৌধুরী :: টানা বৃষ্টি আর উজান নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। অনেক নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। মৎস্য খামারসহ ফসলি জমির ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এমন অবস্থায় পুনরায় বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে।
টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম প¬াবিত হয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা সদরের সাথে বিভিন্ন রাস্তার যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দেখা দিয়েছে রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতি। প্রায় ২ শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়া, বন্যার পানিতে ভেসে গেছে বেশ কিছু মৎস্য খামারের মাছ। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও সারি এবং পিয়াইন নদী দিয়ে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে উপজেলার অধিকাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। বিশেষ করে পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের আসামাপাড়া হাওর, সাঙ্কিভাঙ্গা হাওর, বাউরভাগ হাওর, জাফলং চা-বাগান, আলীরগাঁও ইউনিয়নের নাইন্দা হাওর, তীতকুলি¬ হাওর, বুধিগাঁও, কাকুনাখাই হাওর, কাকুনাখাই, খলা, সতিপুর, হুদপুর, উজুহাত, পাঁচসেউতি, খলাগ্রাম, নয়াখেল, খাষ মৌজা, ফুলেরগ্রাম, লাফনাউট, খমপুর, আলীর গ্রামসহ অধিকাংশ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছেন। এছাড়া, ডৌবাড়ী, পশ্চিম জাফলং, লেঙ্গুড়া, তোয়াকুল, রস্তমপুর, নন্দিরগাঁও এবং ফতেপুর ইউনিয়নের একাংশসহ বেশিরভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে দেশের বৃহত্তম বিছনাকান্দি ও জাফলং পাথর কোয়ারী দুটি বন্ধ থাকায় লক্ষাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া রোপা আউশ ও বোনা আমন ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের মধ্যে দু:শ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। অপরদিকে, কয়েক শতাধিক মৎস্য খামার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কোটি টাকার ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে।, সারী-গোয়াইনঘাট সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠায় উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন রয়েছে। মালবাহী কিছু যারবাহন ঝুঁিক নিয়ে পানির মধ্যে চলাচল করছে। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বিজিৎ কুমার পাল জানান, বন্যার সার্বিক পরিস্থিতির সার্বক্ষণিক খোঁজ নেয়া হচ্ছে। প্রতি ইউনিয়নে এক টন করে চাল দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও দেওয়া হবে। অপরদিকে, বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম চৌধুরী। তিনি উপজেলার চালিতাবাড়ী ও শিয়ালা হাওরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে জি.আর চাল বিতরণ করেন।কানাইঘাটে বন্যার আশংকা দেখা দিয়েছে। গতক মঙ্গলবার টানা ২৪ ঘন্টার বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে উপজেলার নি¤œাঞ্চলের মানুষসহ সুরমা পাড়ের লোকজন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। উপজেলার বেশ কয়েকটি সুরমা ডাইক পূর্বের বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়ায় ভাঙ্গন কবলিত এলাকার কয়েক হাজার মানুষের মাঝে নতুন করে বন্যা আতংক দেখা দিয়েছে। উপজেলার দিঘীরপাড় ইউনিয়নের দর্পনগর, সাতবাঁেকর চরিপাড়া, লক্ষ্মীপ্রসাদের গৌরিপুর, সদর ইউনিয়নের উমাগর, পৌরসভার ডালাইচর ও রাজাগঞ্জ ইউনিয়নসহ বিভিন্ন স্থানে গত বন্যায় সুরমার ডাইক ভেঙ্গে যায়। যার ফলে উপজেলার মানুষ চরম বন্যা আতংকে দিন পার করছেন। বিভিন্ন গ্রামে ইরি ধানের চারা তলিয়ে গেছে। উপজেলার মানুষের ধারণা যেভাবে মুষলধারে বৃষ্টি ও উজান থেকে ভারতের মেঘালয়ের পানি সুরমা নদীতে জোয়ার সৃষ্টি করছে তাতে পুনরায় এ উপজেলায় বন্যা দেখা দিতে পারে।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অবিরাম বৃষ্টিতে জৈন্তাপুর উপজেলার নি¤œাঞ্চল আকস্মিক প¬াবিত হয়ে পড়ছে। সারি-বড়গাং নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। শ্রীপুর কোয়ারীতে বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সারী নদীর পানি বিপদ সীমার ২১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গ্রামীণ জনপদের অনেক রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। নিজপাট ও জৈন্তাপুর, ইউনিয়নের বেশীর ভাগ মানুষের বসতবাড়িতে আংশিক পানি প্রবেশ করেছে। নি¤œাঞ্চল এলাকার মানুষকে নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নের অনেকের মৎস্য খামার পানিতে তলিয়ে গেছে। কাটাখাল এলাকায় বড়গাং নদীর উত্তরাংশে বাধ ভেঙ্গে অনেকের ফসলী জমি নষ্ট হয়ে গেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌরীন করিম জানিয়েছেন, বন্যায় নি¤œাঞ্চলের মানুষের সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। নিজপাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মঞ্জুর এলাহী স¤্রাট জানিয়েছেন, নিজপাট ইউনিয়নের গৌরিসংকর, ফুলবাড়ি, ডিবির হাওর, জাঙ্গালহাটি, ময়নাহাটি, লামাপাড়া, বন্দরহাটি, কামরাঙ্গীখেল ও বাইরাখেল গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জয়নাল আবেদীন, উপজেলা নিবার্হী অফিসার মৌরীন করিম উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। জৈন্তাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এখলাছুর রহমান জানান, বিরাইমারা, কেন্দ্রী, বাওন হাওর, শেওলারটুক, বাউরভাগ, নলজুরী, লক্ষ্মীপুর, মুক্তাপুর, কাটাখাল গ্রামের মানুষের বসতবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দরবস্ত ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বাহারুল আলম বাহার জানান, দরবস্ত ইউনিয়নের গর্দ্দনা, সেনগ্রাম, তেলিজুরী ছাত্তারখাই গ্রামের নিচু এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া চারিকাটা, ফতেপুর ও চিকনাগুল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম প¬াবিত হয়ে পড়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd