সিলেট ১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৮ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৩:৪০ অপরাহ্ণ, জুন ১২, ২০১৮
মো.নাঈমুল ইসলাম : বছরে একটি মাস হলো পবিত্র রমজান মাস। যেটি সবাই চায় একটু হলেও ভালো করে যাপন করতে। একদিকে যেমন গরমের প্রচন্ড দাবদাহ। অন্যদিকে গত কয়েকদিন ধরে সিলেট নগরবাসী ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও লোডশেডিংয়ের ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। গ্রাহকের নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়ার কথা থাকলেও তা যেন এখন প্রতারণার শামিল হচ্ছে বলে মনে করছে ভোগান্তিকারীরা।
দিনের মধ্য পর্যায়ে লোডশেডিং হলে সাধারণ জনগণ কোনোভাবে ব্যবস্থা করে নিলেও এখন সেই বিদ্যুত বিভ্রাটের শিকার হতে হচ্ছে ইফতার করার সময়ও। বিদ্যুতবিহীন তার উপর প্রচন্ড গরম। দারিদ্র, অসহায় পরিবার যেখানে বিদ্যুতের উপর ভরসা করে অর্থাৎ যাদের বাসায় জেনারেটর বা ইউপিএস নেই তাদেরকেই সেই ভোগান্তি বেশিই পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যুতবিহীন ইফতার যেনো এখন তাদেও নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। এমনকি এই বিদ্যুত বিভ্রাট কখনও প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে দাড়ায় মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্যও।
গতকাল ছিলো ২৩ রমজান। রহমত, মাগফিরাত শেষে নাজাতের ৩য় দিন। এরকমই অসংখ্য অসহায় পরিবারের গত কয়েকদিনের ইফতার যেন ছিলো খিচুড়ী, চানা, পিয়াজু, রোহ আফজা আর মোমবাতির আলোয় সীমাবদ্ধ। এদের মধ্যে এরকমও পরিবারও আছে যে পরিবারে উপর্জনক্ষম ব্যক্তি মহিলা এমনকি ইফতার পাক করাও মহিলার দায়দায়িত্ব। যেখানে মহিলারা বিভিন্ন বাসায় কাজ করে, অফিসে কাজ করে অল্প টাকার বেতন নিয়ে তাদের গোটা পরিবারের ভরণ-পোষণ করেন।
তাদের মধ্যে এমনি একটি পরিবার হলো দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বরইকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আমিনা বেগম। তিন মেয়ে নিয়ে তার সংসার। প্রত্যেকেই স্কুলে পড়–য়া। মায়ের আয়-উপার্জনেই বেশ ভালোই চলে তাদের পরিবার। দিন শেষে বিভিন্ন বাসায় কাজ শেষ করে এসে আমিনা বেগম ইফতার তৈরির কাজে লেগে পড়েন নিজের জন্য এবং মেয়েদের জন্য। তার এই উপার্জন দিয়েই ঘর ভাড়া, বিদ্যুত বিল, গ্যাস বিল, তিন মেয়ের পড়ালেখার খরচ বহন করতে হয়। চলছে পবিত্র রমজান মাস। পরিবার যেমনই হোক সবাই চায় ইফতারটুকু অন্তত শান্তিতে সম্পন্ন করতে। কিন্তু তাদের গত কয়েকদিনের ইফতারি আনন্দের মধ্যে যেন ঘনঘটা হয়ে দাড়িয়েছে বিদ্যুত বিভ্রাট।
আমিনা বেগম এবং তার পরিবারকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন, আমার তিন মেয়েসহ চার সদস্যের পরিবার। প্রতিদিন কাজ শেষে নিজেকে অনেক ক্লান্ত মনে হয়। তারপরও এসে মেয়েদের জন্য এবং নিজের জন্য ইফতার তৈরি করতে হয়। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে যে পরিমাণে বিদ্যুত বিভ্রাট হচ্ছে তা এখন সহ্যের বাইরে চলে গেছে। কখনো সকালে বিদ্যুত নেই, গরমে একবারে ঘুম হয় না। আবার কখনো সন্ধ্যাবেলা। এমনকি গতকাল আমরা মোমবাতি জ্বালিয়ে ইফতার করেছি। আমাদের গরিব পরিবার যেন অসহায় হয়ে পড়েছে।
এদিকে গত ৩১ মে বুধবার বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছিলেন, দেশে কোনো লোডশেডিং নেই। এই কথার জের ধরেও অনেক অসহায় পরিবার সদস্যদের মনে প্রকাশ পেয়েছে ক্ষোভ।
শুধু আমিনা বেগমের পরিবার বলে নয় সিলেট নগরীতে অল্প হলেও গ্রামাঞ্চলে রয়েছে সহস্রাধিক এরকম অসহায় পরিবার। যাদেরকে প্রতিদিনই এরকম বিদ্যুত বিভ্রাটের শিকার হতে হচ্ছে। যার ফলে তাদের আয়-রোজগার, ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা এবং দৈনন্দিন কার্যক্রম হয়ে দাড়িয়েছে কঠিন থেকেও কঠিনতর।
পরিবার ছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসার উন্নতিটা কখনো অবনতির দিকে বেশি হারেই ধাবিত হয়। নগরীর থান কাপড়, স্বর্ণ ব্যবসায়ী জানান, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও লোড শেডিংয়ের কারণে খরিদদার আসবে তো দূরের কথা আমরাই দোকানে বসে থাকতে পারছি না গরমের কারণে। আইপিএসও ঠিকমতো কাজ করছে না। আটা-গম, মিল মালিকরা জানান, বিদ্যুতের অভাবে মিল বন্ধ থাকছে, উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। শ্রমিকরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বেকার বসে থাকে।
সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, সিলেট জোনে প্রতিদিন ২১০ থেকে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। কিন্তু গরমে এই চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫০ থেকে ২৮০ মেগাওয়াটে। সিলেট শহরতলির কুমারগাঁও ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলাসহ পিডিবির নিজস্ব তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে প্রায় ৭শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। সিলেটের চাহিদা মিটিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় জাতীয় গ্রিডে। কিন্তু সিলেটের চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরও কেন লোডশেডিং, এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠছে।
গত সপ্তাহ ধরে সিলেটবাসীর উপর যেন গরমের দাবদাহটা একটু বেশিই চলছে। গত সপ্তাহের সবোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ছিলো ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সিলেট বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী সরদার আজমের কাছে বিদ্যুত বিভ্রাট সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘জাতীয় গ্রিডে ও পাওয়ার স্টেশনে কিছু সমস্যা থাকায় লোডশেডিং হয়েছে। ইতোমধ্যেই এগুলোর সমাধান করা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে চারখাই গ্রিড চালু হবে। তখন সমস্যা থাকবে না।’
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd