সিলেট ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৪ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৫৬ পূর্বাহ্ণ, মে ২৯, ২০১৮
গোলাপগঞ্জ প্রতিনিধি ::
গোলাপগঞ্জের শরীফগঞ্জে কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী ও বালু উত্তোলনকারীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এভাবে অবৈধভাবেবালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকাও করছেন অনেকে।
এদিকে এমন সম্ভাবনা সৃষ্টি হলে সোমবার (২৮ মে) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ড্রেজার না চালানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে নির্বাহী অফিসার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা যায়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় , গোলাপগঞ্জ উপজেলার ভাদেশ্বর ইউনিয়ন ও শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যবর্তী মুসলীমগঞ্জ বাজার সংলগ্ন কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ড্রেজার স্থাপন করা হয়েছে। এ লক্ষে পার্শ্ববর্তী কাদিপুর (মুসলিমগঞ্জ) বাজার স্ট্যান্ডের পাশে বালু জমা রাখার জন্য বালু উত্তোলন কারীরা এক্সেলেটর দিয়ে ঘের তৈরি করেছে।
তবে বালু উত্তোলন কারীদের বক্তব্য হচ্ছে, আশুগঞ্জ থেকে ভারতের করিমগঞ্জে নৌ-পথে মালামাল পরিবহনের জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় কুশিয়ারা নদী খননের উদ্যোগ নিয়েছে। এরই আলোকে তারা উক্ত স্থানে খনন কাজের জন্য ড্রেজার স্থাপন করেন।
অন্যদিকে এলাকাবাসীর অভিযোগ হচ্ছে এমনিতেই কুশিয়ারা নদীর এই এলাকাটি ভয়াবহ ভাঙ্গনের শিকার। এরই মধ্যে ড্রেজার দিয়ে খননের নামে বালু উত্তোলন করলে আশপাশের জনপদ গুলো নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এতে ভিটামাটি হারা হবে এলাকার হাজার হাজার মানুষ।
সম্প্রতি বালু উত্তোলনের জন্য (কাদিপুর) মুসলিমগঞ্জ বাজার সংলগ্ন ঘাটে ড্রেজার এনে পাইপ লাইন টানানো হলে এলাকার লোকজনের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।
এদিকে বালু উত্তোলনকারীরা ফের ড্রেজার চালু করতে চাইলে সোমবার দুপুরে নদীর দুইপারে হাজারও জনতা উপস্থিত হয়ে প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করে এর প্রতিবাদ জানায়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম ও গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (প্রশাসন) একেএম ফজলুল হক শিবলী একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম জানান, বালু উত্তোলন কারীরা নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন আছে মর্মে একটি কাগজ দেখালেও এলাকার লোকজন তা মানতে রাজি নয়। তাদের বক্তব্য কাগজটি সঠিক নয়, বর্তমানে এলাকার মানুষ যেভাবে উত্তেজিত এ অবস্থায় বালু উত্তোলন না করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিষেধ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম ফজলুল হক শিবলী এ ব্যাপারে জানান, বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ। এ অবস্থায় ড্রেজার চালু করা ঠিক হবে না। তাই পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু উত্তোলনকারীদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।
বিশেষ সূত্রে জানা যায়, এখানে বালু উত্তোলনের জন্য যে ড্রেজার স্থাপন করা হয়েছে তার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে এ জাতীয় ড্রেজার দিয়ে কখনো বালু উত্তোলন করা হয়নি। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বা বড় বড় নদী গুলোতে এ জাতীয় ড্রেজার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রশাসনসহ সর্ব মহলের বক্তব্য কুশিয়ারার মত নদীতে এত ক্ষমতা সম্পন্ন ড্রেজার ব্যবহার করা হলে দু’পারের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
প্রশাসন ও নদীর দু’পারের জনগণের নিষেধ উপেক্ষা করে বালু উত্তোলন করা হলে যে কোন সময়ে বড় ধরণের অঘটন ঘটতে পারে বলে আশংকা করছেন অনেকেই। এদিকে দুপুরে হাজারও জনতা নদী পারে প্রতিবাদ সভা করেছে।
শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মতিলাল দাসের সভাপতিত্বে ও আফজল হোসেনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন শরীফগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি লুৎফুর রহমান লুতি, সাবেক ইউপি সদস্য সোহরাব আলী, মীরগঞ্জ বাজার বণিক সমিতির সভাপতি নাছির উদ্দিন, শেখপুর গ্রামের বিশিষ্ট সমাজ সেবী নূরুল আম্বিয়া, ফতেহপুর গ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব নাজমুল ইসলাম, সিরাজ উদ্দিন মেম্বার, জায়েদুল ইসলাম মেম্বার, এনামুল হক এনাম, জেলা যুবলীগ নেতা জুয়েল আহমদ খান, আওয়ামীলীগ নেতা এসএম শায়েস্তা, সাবেক ইউপি সদস্য দুদু মিয়া, সুরুজ আলী মেম্বার, মহিলা মেম্বার লাইলি বেগম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রঞ্জু মিয়া প্রমুখ।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd