আলোচনায় আট মনোনয়নপ্রত্যাশী

প্রকাশিত: ৫:০০ অপরাহ্ণ, মে ২২, ২০১৮

আলোচনায় আট মনোনয়নপ্রত্যাশী

ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নির্বাচনি এলাকা সিলেট-৪ আসন। সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসন। এ সংসদীয় আসনে সিলেট বিভাগের বেশিরভাগ পাথর কোয়ারির অবস্থান। জাফলং, বিছনাকান্দি, পান্তুমাই, লালাখাল, শ্রীপুর ও ভোলাগঞ্জসহ বেশিরভাগ পর্যটনকেন্দ্রের অবস্থানও এ আসনে। এ আসনের রাজস্ব আয় প্রচুর। এ কারণে আসনটির রয়েছে আলাদা গুরুত্ব।

এ আসনে আওয়ামী লীগের দুই, বিএনপির চার, জাতীয় পার্টির একজন এবং জামায়াতের একজন প্রার্থী আলোচনায় রয়েছেন।

এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ। এ আসনে পাঁচবারের এমপি তিনি। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী না থাকায় এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ফারুক আহমদ। ওই নির্বাচনে ফারুক আহমদ ২৫ হাজার আর ইমরান আহমদের প্রাপ্ত ভোট ছিল ৬২ হাজার।

এ সংসদীয় আসনে ভোলাগঞ্জ, জাফলং, বিছনাকান্দি, শাহ আরপিন, উৎমাছড়া ও শ্রীপুর পাথর কোয়ারির অবস্থান। এসব কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন ও টোল (রয়েলটি) আদায় নিয়ে স্থানীয় এমপিকে বরাবরই থাকতে হয় বেকায়দায়। একে তো ক্ষমতাসীন দল হিসেবে দলের অনেক লোক এসব কোয়ারি থেকে ফায়দা নিতে চায়, তার ওপর রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপ। অভিযোগ রয়েছে, এসব কোয়ারিতে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের ‘যথেচ্ছচারের’ বিরুদ্ধে ‘যথাযথ’ ভূমিকা নিতে পারেননি স্থানীয় এমপি। কোয়ারিসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মামলায়ও আসামি হয়েছেন তার দলের লোকজন। এ মামলায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলী আমজদ, জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি লিয়াকত আলী, যুগ্ম সম্পাদক ফয়েজ আহমদ বাবারসহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অনেকেই আসামি হয়েছেন। এ কারণে দলের অনেক লোক তার ওপর ক্ষুব্ধ।

এমপি ইমরান আহমদের স্ত্রী ড. নাসরিন আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। আমেরিকার ফ্লোরিডায় বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠানেও সরকারি প্রতিনিধি হিসেবে তিনি যোগ দেন। এরপর দেশে ফিরে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানান। সব মিলিয়ে তিনি ফের আসনে মনোনয়ন পাবেনÑ এমনটাই ভোটারদের ধারণা। নির্বাচনে বিএনপি এলে এ আসনে তার পক্ষে বিজয়ী হওয়া অনেকটা চ্যালেঞ্জিং হবে বলে ধারণা ভোটারদের। বিশেষ করে বিভিন্ন পাথর কোয়ারিতে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট ভাঙতে তার ‘ব্যর্থতা’ ভোটাররা অনেকটাই কাজে লাগাতে চাইবেন বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। এক বছর ধরে তিনি তার নির্বাচনি এলাকায় গণসংযোগ কর্মসূচি বাড়িয়ে দিয়েছেন। দলীয় সভা-সমাবেশে যোগদানের পাশাপাশি বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করছেন। এসব অনুষ্ঠানে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় বসাতে এবং নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।

এ আসনে বিএনপির প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম। তার রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। তিনি একসময় গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। পাশাপাশি সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এলাকার মানুষের সঙ্গে তার ভালো যোগাযোগ রয়েছে। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, এবারের নির্বাচনে তিনি দলের প্রার্থী হবেন। এ লক্ষ্যে তিনি নির্বাচনি এলাকায় কার্যক্রম চালাচ্ছেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গেও তার ভালো যোগাযোগ রয়েছে।

এ আসনে বিএনপির অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের পরপর দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবদুল হেকিম চৌধুরী। গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জে তিনি বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল হেকিম চৌধুরী বলেন, তৃণমূলের লোকজনের সঙ্গেই তার সব কাজ। এ কারণে এলাকার মানুষ তাকে ভালোবাসে। বন্যাসহ বিভিন্ন দুর্যোগে তিনি এলাকার মানুষের পাশে রয়েছেন। আগামীতে তিনি আরও বড় পরিসরে কাজ করতে চান বলে জানান এ বিএনপি নেতা।

সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও জেলা বারের সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট নূরুল হকও এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে চান। এর আগেও তিনি একবার এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এছাড়া সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক ও দলের কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবকবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামানও এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

সিলেট জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজ রহমানও এ আসনে দলের প্রার্থী হতে চান। এ লক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন।

২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াতও এ আসনে তাদের প্রার্থী দিতে চায়। এ আসনে তাদের পছন্দের প্রার্থী জৈন্তাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ আসনের এক জামায়াত নেতা জানান, তারা এ আসনটিকে টার্গেট করে এগোচ্ছেন।

ইমরান আহমদ ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, দলের মনোনয়ন আদায়ে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন। নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি শিগগিরই দেশে ফিরছেন। দেশে এসে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি তার প্রার্থিতা ঘোষণা করবেন বলে জানান ফারুক আহমদ।

এ আসনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমান ২৯ হাজার ২৪ ভোট বেশি পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক আহমদকে পরাজিত করেন। ’৭৯ সালে বিএনপি প্রার্থী নাজিম কামরান চৌধুরী আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবদুল হান্নানকে পরাজিত করেন ৩ হাজার ৩৬৮ ভোটে। ’৮৬ সালে নাজিম কামরান চৌধুরী আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইমরান আহমদের কাছে হেরে যান ৯ হাজার ৫৩৬ ভোটে। ’৯১ সালে আবারও এ দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামলে ইমরান জয় লাভ করেন ৮ হাজার ৫১০ ভোটে। ’৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ইমরান আহমদকে হারিয়ে বিএনপি প্রার্থী সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান জয় পান ১ হাজার ২২১ ভোটে। পরে সাইফুর রহমান আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে জয়ী হন ইমরান আহমেদ। ২০০১ সালের নির্বাচনে ইমরান আহমদকে বিএনপি প্রার্থী দিলদার হোসেন সেলিম হারান ১৪ হাজার ৭১৬ ভোটের ব্যবধানে।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

May 2018
S S M T W T F
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  

সর্বশেষ খবর

………………………..