ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে :: ওরা ৫ জন। চিহ্নিত ছিনতাইকারী। কয়েকদিন ধরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল সিলেট নগর। প্রতিদিন গড়ে দুই থেকে তিনটি ছিনতাই করে ওরা। সঙ্গে কালো পালসার মোটরসাইকেল। যেদিকে যায় জাপটে ধরে যাত্রীদের।
ছিনিয়ে নেয় সর্বস্ব। ছিনতাইয়ের বেশ কয়েকটি অভিযোগ আসে সিলেট মহানগর পুলিশের কাছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তারা অভিযান শুরু করে। কিন্তু ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করা যাচ্ছে না। অপরদিকে ওই সিন্ডিকেটের ঝাপটাও বন্ধ হচ্ছে না। তাদের নিয়ে পুলিশের ঘুম হারাম। অবশেষে সিলেট মহানগর পুলিশের একটি টিম প্রযুক্তিগত ও গোয়েন্দা অনুসন্ধান শুরু করে। এর মধ্যে তারা নির্ণয় করে ৫ ছিনতাইকারীকে। তারা নতুন একটি গ্রুপ। এই গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছে কয়েকজন চিহ্নিত ছিনতাইকারী। পুলিশ তাদের শনাক্ত করার পর কয়েকটি গ্রুপ এক সঙ্গে অভিযান শুরু করে। বৃহস্পতিবার ভোররাত পর্যন্ত তারা অভিযান চালিয়ে ওই ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। আর গ্রেপ্তার হওয়া ওই ছিনতাইকারীরা সাম্প্রতিক কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। এদিকে- ৫ জনের ওই ছিনতাইকারী দল গ্রেপ্তার হওয়ার পর সিলেট নগরীতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। গত দুইদিন নগরের কোথাও কোনো ছিনতাইয়ের খবর পাওয়া যায়নি। সিলেট মহানগর পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) আবদুল ওয়াহাব জানিয়েছেন- ওই ছিনতাই সিন্ডিকেটের সঙ্গে কারা কারা জড়িত সেটি পেয়েছি। জবানবন্দিতেও তাদের সহযোগীদের নাম বলেছে। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে। তিনি বলেন- সিলেটে ছিনতাই রোধে পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে সব কর্মকর্তারা জিরো টলারেন্সে রয়েছে। আসন্ন রমজানকে সামনে রেখে যাতে ছিনতাই না বাড়ে পুলিশ সে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে জানান তিনি। ৭ই মে বিকাল পৌনে ৪টায় সিলেট-কানাইঘাট সড়কের মুরাদপুর পয়েন্টের কাছাকাছি একটি ছিনতাই হয়। নগরীর লালাদিঘীরপাড়স্থ একটি ব্যাংকের শাখা থেকে এক লাখ ৯০ হাজার টাকা তুলে সিএনজি অটোরিকশাযোগে যাচ্ছিলেন ল্যান্স কর্পোরাল মো. ময়নুল ইসলাম (৩২)। ওই পয়েন্টের কাছে দুটি মোটরসাইকেলযোগে পাঁচ ছিনতাইকারী এসে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর ল্যান্স কর্পোরাল ময়নুল ইসলাম শাহপরান থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের করেন। এরপর মাঠে নামে পুলিশ। শুরু হয় ছিনতাইকারীদের অবস্থান শনাক্ত করার মিশন। টানা দুইদিন চেষ্টার পর বৃহস্পতিবার ভোররাত পর্যন্ত পৃথক স্থান থেকে পাঁচ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে একটি কালো রঙের পালসার মোটরসাইকেল, একটি অ্যাপাচি ছাই কালারের মোটরসাইকেল, একটি ছোরা ও নগদ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানার চরশিহারী শাইল গ্রামের মৃত মো. আলীর ছেলে নাসির উদ্দিন (৩৫), তিনি কোম্পানিগঞ্জ থানার পূর্ব ইসলামপুরের নতুন জীবনপুরের রিয়াজ উদ্দিন ওরফে খোকার ছেলে শফিকুল ইসলাম ওরফে কালা শফিক ওরফে শফিক খন্দকার (৩৩), মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার মনরাজ মাহমুদপুরের মৃত আজমান আহমদের ছেলে রাহেল আহমদ (২৭), সিলেট শাহপরান থানার খাদিমপাড়ার কল্লগ্রামের আবদুর রশীদের ছেলে মুক্তার হোসেন (৩৫) ও মেজরটিলা পশ্চিম ভাটপাড়ার হাবিবুর রহমান কালা মিয়ার ছেলে দিলোয়ার হোসেন আলম (৩৫)। নাসির উদ্দিনকে সিলেট শাহপরান থানাধীন খাদিমপাড়ার মাহমুদপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানা ও দক্ষিণ সুরমা থানায় দুটি মামলা রয়েছে। গোলাপগঞ্জ থানার মামলায় তিনি ১০ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত ও ৫ হাজার টাকা জরিমানায় দণ্ডিত। শফিকুল ইসলামকে সিলেট নগরীর বন্দরবাজার ফয়েজ বোর্ডিং থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি ও শাহপরান থানায় দুটি মামলা রয়েছে। রাহেল আহমদকে সিলেট বিমানবন্দর থানার লাখাউড়া থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে নগরীর কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা রয়েছে। মুক্তার হোসেনকেও ফয়েজ বোর্ডিং থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে শাহপরান থানা ও কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা রয়েছে। দিলোয়ার হোসেন আলমকে খাদিমপাড়া মাহমুদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে শাহপরান থানায় একটি মামলা রয়েছে। ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার অভিযানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (অপরাধ, দক্ষিণ) জ্যোতির্ময় সরকার। সাংবাদিকদের তিনি জানিয়েছেন- ‘গোয়েন্দা তথ্যকে কাজে লাগিয়ে এই পাঁচ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে তারা সঙ্গীদের নামও প্রকাশ করেছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘পুলিশ ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করছে না। তাদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।’ সূত্র : মানবজমিন
Sharing is caring!