সিলেট ১১ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৭ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:২৮ অপরাহ্ণ, মে ১১, ২০১৮
আলী হোসেন, মৌলভীবাজার :: মৌলভীবাজারে ঋণের সুদ না পেয়ে তার বদলে ছয়টি হতদরিদ্র পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেছে উপজেলার দাদন কারবারি আসুক মিয়া। একই অপকর্ম করেছে মিনার মিয়া ও তুয়াহিদ মিয়া নামে দুই ব্যক্তি।
অবিশ্বাস্য এ ঘটনা ঘটে চলেছে রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নে।
একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ঋণের সুদ পরিশোধ করতে না পারায় রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের ক্ষেমসহ গ্রামের আবিদ উল্লার মেয়ে মজনু বেগমকে, শ্রীভোগ গ্রামের গনি ড্রাইভারের মেয়েকে, কেওলা গ্রামের রাজনা বেগমকে, পাঁচগাঁও গ্রামের চেরাগ মিয়ার মেয়ে নাজমা বেগমকে বিয়ে করে দাদন কারবারি আসুক মিয়া। এর বাইরে আরো ৩/৪টি বিয়ে করেছে এই আসুক।
একইভাবে সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শত্রমর্দন গ্রামের গনি মিয়ার ভাগনীকে বিয়ে করে মিনার মিয়া নামে আরেক দাদন কারবারি।
সূত্র আরো জানায়, টাকা পরিশোধ করতে না পারায় আমিরপুর গ্রামের তুতা মিয়া ও রুবিয়া বেগমের বসতবাড়ি জোরপূর্বক রেজিস্ট্রি করে নিয়েছে সুদ ব্যবসায়ী তারেক রহমান কর্ণেল।
পরিচয় গোপন রেখে আসুক মিয়ার কাছে সুদে ঋণচাইলে তিনি বলেন, “এ ব্যবসা এখন বাদ দিয়ে দিছি।” পরে পরিচয় দিয়ে বিয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে একটি বিয়ের কথা স্বীকার করে তিনি ফোন কেটে দেন।
বলা প্রয়োজন যে, মৌলভীবাজারে বেআইনি দাদন ব্যবসা এখন জমজমাট। এ কারবারিরা দরিদ্র মানুষকে ঋণ ও সুদের জালে জড়িয়ে সব রকম অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। যেমন, গত মাসে এ সংক্রান্ত বিষয়ে সদর উপজেলার পাগুড়িয়া এলাকার মুদি ব্যবসায়ী রিপন মিয়া খুন হন। দাদন ব্যবসায়ীদের দায়ের করা মামলায় অনেকেই এখন দিশেহারা। কেউ কেউ পুলিশের গ্রেফতার এড়াতে বাড়ি ঘর ছেড়ে আত্মগোপনে আছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ ব্যবসার সাথে স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক বিভিন্ন দলের নেতাকর্মী, স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও এলাকার মাতব্বরসহ কয়েক শতাধিক মানুষ জড়িত।
এবিষয়ে কয়েক মাস আগে জেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় আলোচনা হলেও এপর্যন্ত প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। যার ফলে এটা দিন দিন লাগামহীনভাবে বাড়ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার সাদুহাটি আব্দুল বারী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফরিদ মিয়া দীর্ঘ দিন যাবত প্রকাশ্যে লক্ষ লক্ষ টাকার দাদন ব্যবসা করে আসছেন। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকার কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না। দাদন ব্যবসা করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন রাজনগর উপজেলার মনিপুর গ্রামের পারভেজ আলী। টাকা দেয়ার সময় দরিদ্র মানুষের কাছ থেকে ব্ল্যাংক চেক রেখে পরবর্তী টাকা দিতে না পারায় অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও দিয়েছেন তিনি।
এব্যবসার সাথে জড়িত আছেন, সদর উপজেলার হলিমপুর গ্রামের পবলু মিয়া, জগন্নাতপুরের শামীম আহমদ, বাদে ফতেহপুরের আসাদ মিয়া, বেকামুড়ার মাহমদ মিয়া। রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের শফিক মিয়া, হাত কাটা কুটি, আজিজুল, কদর মিয়া, রুমেল, সিকদার, আব্দুল হক সেফুল, মজমিল, আসুক মিয়া, সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মুকিত, বর্তমান ইউপি সদস্য তারেক রহমান কর্ণেল, আখই মিয়া, উকুল আলী।
ঘরগাঁও এলাকার একিন মিয়া, সেঞ্চু মিয়া-১, সেঞ্চু মিয়া-২, ফরব মিয়া, শামীম মিয়া, উত্তর ঘরগাঁও এলাকার শাহিন মিয়া। টেংরা ইউনিয়নের সৈয়দ নগর গ্রামের নজির মিয়া, বদরুল মিয়া, আনর মিয়া, মন্নান, মসাহিদ, জসিম। আকুয়া গ্রামের শাহাজান, কয়েছ।
এছাড়াও জেলার বড়লেখা, জুড়ী, কুলাউড়া, রাজনগর, কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলার ছোট-বড় বাজার গুলোতে প্রকাশ্যে দাদন ব্যবসা চলছে।
দাদন ব্যবসায়ী সদর উপজেলার সাদুহাটি আব্দুল বারী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ফরিদ মিয়া বলেন, “বরাক” নামে আমার একটি সমিতি আছে। এটার মাধ্যমে সরকার বাজারের কিছু ব্যবসায়ীদের কাছে ঋণ দেই।
পরিচয় গোপন রেখে আসাদ মিয়া’র সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমার হাতে কোনো টাকা নেই। সব টাকা মাঠে। এই মুহুর্তে দিতে পারব না।
মাহমদ মিয়া বলেন, হাতে কোনো টাকা নেই। ভাই এখন দেয়া যাবে না।
রাজনগর উপজেলার মনিপুর গ্রামের দাদন ব্যবসায়ী পারভেজ আলী বলেন, সরাসরি দেখা হলে বিস্তারিত বলব।
ফখরুল ইসলাম নামে এক ঋণগ্রহিতা বলেন, ব্ল্যাংক চেক দিয়ে পারভেজ আলীর কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নেই। পরে ১০ লক্ষ টাকার মামলা দায়ের করেন। এভাবে তিনি এলাকার প্রায় ৫/৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন।
নাম গোপন রাখার শর্তে এক ব্যাক্তি বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে বিভিন্ন ঝামেলা হওয়ায় হতদরিদ্র মানুষ দাদন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা আনছে। বিষয়টি প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা দেখেও না দেখার বান করছেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd