সিলেট ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৯শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৬:৫০ অপরাহ্ণ, মে ৬, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : চলন্ত ট্রেনে ছোড়া পাথরের আঘাতে ৩০ এপ্রিল আহত টিআই শিকদার বায়েজিদের জ্ঞান ফেরেনি এখনও। রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাকে। স্বজনরা তাকে বিদেশে নেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ভয়াবহতা নিয়ে শুক্রবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় যুগান্তরে। তা আমলে নিয়ে এদিন থেকেই কাজ শুরু করেছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।
যুগান্তরকে তারা জানিয়েছেন, পাথর নিক্ষেপ প্রতিরোধে শিগগিরই বিশেষ অভিযান শুরু হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পাহারা বসানোর কথা জানিয়েছে রেলওয়ে শ্রমিক লীগও। বায়েজিদের চিকিৎসা তত্ত্বাবধান করছেন নিউরো সার্জন ডা. রেজাউল সাত্তার।
জানতে চাইলে শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘কোনো অবস্থাতেই তাকে শঙ্কামুক্ত বলতে পারছি না। তার জ্ঞান এখনও ফেরেনি। তবে আমরা মনে করছি, তার অবস্থা আগের চেয়ে সামান্য উন্নতি হয়েছে। যে অবস্থা রয়েছে সুস্থ হয়ে উঠতে দুই-তিন মাস সময় লাগতে পারে।’
বিদেশে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. রেজাউল বলেন, ‘এটি পরিবারের সিদ্ধান্তের বিষয়। তবে আমরা মনে করছি না এ মুহূর্তে তাকে বিদেশে নেয়ার প্রয়োজন আছে।’ তিনি দেশবাসীর কাছে বায়েজিদের জন্য দোয়া চান।
রেল সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা বহুবার উদ্যোগ নিয়েছি, স্থানীয় পর্যায়ে বারবার বৈঠক করেছি। সচেতনতামূলক প্রচারপত্র বিলি করেছি, মাইকিং করেছি। এরপরও চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ বন্ধ হচ্ছে না। আমরা এখন অ্যাকশনে যাচ্ছি।
যে কোনো মূল্যে অপরাধীদের আটক করা হবে। লাইনঘেঁষা এলাকায় প্রতিরোধ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে পাথর নিক্ষেপকারীদের ধরতে বিশেষ টিম মাঠে নামানো হচ্ছে।’
সকালে শিকদার বায়েজিদকে দেখতে গিয়েছিলেন বলে জানান রেল সচিব। তিনি বলেন, সামনে ঈদ। এর আগে-পরে ট্রেনে চাপ থাকবে বেশি। এর আগেই আমরা এ আতঙ্ক দূর করতে চাই।
মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, অপরাধীদের চিহ্নিত করতে প্রয়োজনে বেসরকারি পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অস্থায়ীভাবে লোক নিয়োগ দেয়া হবে। লাইনঘেঁষা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সচেতনতা বাড়ানো ও শিক্ষার্থীরা যাতে প্রচারে নামে তার উদ্যোগ নেয়া হবে।
রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) কাজী মো. রফিকুল আলম যুগান্তরকে জানান, অপরাধীদের ধরতে বিশেষ কৌশল নেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে সম্মিলিত উদ্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। ঢাকা রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, যাত্রীদের আতঙ্ক দূর করতে পাথর নিক্ষেপকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
অতিরিক্ত মহাপুলিশ পরির্দশক (রেলওয়ে পুলিশ) মো. আবুল কাশেম যুগান্তরকে জানান, যে কোনো মূল্যে পাথর নিক্ষেপ প্রতিরোধসহ অপরাধীদের আটক করা হবে। এ নিয়ে সম্মিলিত টিম মাঠে নেমেছে।
রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন যুগান্তরকে জানান, এমন বর্বরতা প্রতিরোধে সমাজের প্রতিটি মানুষকে সোচ্চার হতে হবে। কারণ রেল জাতীয় সম্পদ, সাধারণ মানুষের সম্পদ।
তিনি বলেন, যখন রাজনীতির নামে রেলে জ্বালাওপোড়াও চলছিল তখন অতিরিক্ত ৯ হাজার আনসার সদস্য মোতায়েন করে তা বন্ধ করা হয়েছিল। আমরা পাথর নিক্ষেপ প্রতিরোধ ও অপরাধীদের ধরতে যা যা প্রয়োজন করব।
রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবির শুক্রবার যুগান্তরকে জানান, দেশবিরোধী ও সরকারবিরোধীরাই এ বর্বরতা চালাচ্ছে। এর আগে তারা জ্বালাওপোড়াও করে রেলের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। পাথর নিক্ষেপকারীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আমাদের ৬০টি শাখার নেতাকর্মীরা মাঠে নামছেন। কমিটির সদস্যদের চিহ্নিত জায়গায় কৌশলে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ঘুরে দেখা যায়, সাধারণ যাত্রীদের মধ্যেও ছিল ট্রেনে পাথর নিক্ষেপ নিয়ে আলোচনা। চট্টগ্রামগামী সিরাজুল ইসলাম ও কহিনূর আক্তার কমলাপুর স্টেশনে এ নিয়ে শঙ্কার কথা জানাচ্ছিলেন। হাতে থাকা যুগান্তর দেখিয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ সংবাদ আমাদের আরও সতর্ক করল।
স্কয়ার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, বায়েজিদের স্ত্রী খুশি আক্তার স্বামীর জন্য কাঁদছেন। খুশি জানান, চিকিৎসকরা বলেছেন, তার অবস্থা ভালো নয়, সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। তার চিকিৎসার সব দায়দায়িত্ব যেন সরকার নেয়। প্রয়োজনে বিদেশে পাঠিয়ে তার চিকিৎসা করার দাবিও জানান তিনি।
বায়েজিদের ভাই পপিদুর রহমান যুগান্তরকে জানান, তারা দরিদ্র পরিবারের মানুষ। এ পর্যন্ত ধার-দেনা করে প্রায় ৫ লাখ টাকা খরচ করেছেন। স্কয়ার হাসপাতালে শুক্রবার পর্যন্ত সাড়ে ৩ লাখেরও বেশি টাকা লেগেছে।
রেলপথমন্ত্রী ৫০ হাজার টাকা ও পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ১ লাখ টাকা দিয়ে সহায়তা করেছেন। তিনি বলেন, তার চিকিৎসায় এত টাকা কোথায় পাব। ডাক্তার বলেছেন, তাকে হাসপাতালে দীর্ঘদিন রাখতে হবে।
চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের প্রতিবাদে কাল সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করবেন রেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে সবাইকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক (গণসংযোগ) রশিদা সুলতানা গণি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd