বাবুল নয়’ স্বাক্ষী ময়নাই বিউটি হত্যাকারী

প্রকাশিত: ৫:৫৬ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ৭, ২০১৮

বাবুল নয়’ স্বাক্ষী ময়নাই বিউটি হত্যাকারী

ক্রাইম ডেস্ক :: নতুন মোড় নিয়েছে শায়েস্তাগঞ্জের চাঞ্চল্যকর বিউটি হত্যা মামলা। বাবুল নয়, মালার স্বাক্ষী স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ময়নাই হত্যাকারী। ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে এমন তথ্যই নিশ্চিত করেছে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র। শুধু তাই নয়, হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানায় ওই সূত্র। সূত্র মতে, শেষমেষ ভিলেজ পলিটিক্সের বলি হয়েছেন বিউটি। এদিকে, নিহত বিউটির পিতা-মাতাও রয়েছেন সন্দেহের তালিকায়। তাদের রাখা হয়েছে পুলিশী নজরদারিতে। এ অবস্থায় আলোচিত এ হত্যাকান্ডটি নিয়ে এখন নতুন করে শুরু হয়েছে তোলপাড়। যদিও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ আইন শৃংঙ্খলা বাহীনি। সূত্র জানায়, আলোচিত ওই হত্যার ঘটনায় ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও ধর্ষণ মামলার স্বাক্ষী ময়না মিয়া। গতকাল শুক্রবার বিকাল ৩ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। হত্যার ঘটনায় নিজে জড়িত থাকার বিষয়ে জবানবন্দিতে তিনি লোমহর্ষক স্বীকারোক্তি দেন। এদিকে, এ ঘটনায় গ্রেফতার আলোচিত বাবুল মিয়া বিউটিকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে একই আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তবে হত্যাকান্ডে তার সংশ্লিষ্ঠতা নেই বলে সে জানায়। জানা যায়, দ্বিতীয় দফায় চাঞ্চল্যকর এ মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পান শায়েস্তাগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) মানিকুল ইসলাম। দায়িত্ব নেয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি মোটিভ উদঘাটনে সক্ষম হন। বাবুল ও তার মা কলম চান বিবিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বিউটির বাবা, মা, মামা, নানিসহ স্বজন ও নিকটাত্মীয়দের। অবশেষে বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় দায়েরকৃত ধর্ষণ মামলার সাক্ষী ময়না মিয়াকে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসব জিজ্ঞাসাবাদেই বেরিয়ে আসে নতুন তথ্য। শেষ পর্যন্ত ময়না মিয়া হত্যাকাণ্ডে নিজের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন ময়না। প্রকাশ করেন জড়িত অন্যান্যদের নামও। হত্যার ঘটনায় বিউটির নানী ফাতেমা বেগম সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এরপর রাতে একই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন গ্রেফতারকৃত বাবুল মিয়া। তিনি প্রথম দফায় বিউটিকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে হত্যাকাণ্ডে তার সংশ্লিষ্টতা নেই বলে আদালতকে জানিয়েছেন।

অপরদিকে, বাবুলের মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে দুইদিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার রাতে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আদালতে বিউটির নানী ফাতেমা বেগম তার জবানবন্দিতে- ‘বিউটিকে রাতে কে নিয়ে এসেছে, কি ভাবে নিয়ে এসেছে ও তাকে কি বলে নিয়ে এসেছে’- এসব বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণাণা দিয়েছেন বলেও নিশ্চিত করেছেন সূত্রটি।

অপর একটি সূত্র জানায়, বিগত ইউপি নির্বাচনে ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড থেকে সংরক্ষিত নারী আসনের মেম্বার পদে নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন আওয়ামীলীগ নেতা ময়না মিয়ার স্ত্রী আসমা আক্তার ও বাবুলের মা কলম চান বিবি। নির্বাচনে বাবুলের মা কলম চান বিবির কাছে পরাজিত হয় ময়না মিয়ার স্ত্রী আসমা আক্তার। এর পর থেকেই উভয় পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ চলে আসছে। এরই জেরধরে বিউটিকে অপহরণের পর ধর্ষণের ঘটনায় মামলায় স্বাক্ষী হয় ময়না মিয়া। মামলায় আসামী করা হয় বিজয়ী মেম্বার কলম চান বিবি ও তার পুত্র বাবুল মিয়াকে। পরে এ সুযোগে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে এবং বিউটিকে ঘৃণ্য ভিলেজ পলিটিক্সের বলি বানাতে হত্যাকান্ডটি সংঘটিত হয়েছে বলে সূত্রের দাবি।

পুলিশ জানায়, রিমান্ড শেষে বাবুলের মা কলম চান বিবি, বাবুল মিয়া ও ময়না মিয়াকে রাতেই কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আজ শনিবার প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিস্তারিত জানানো হতে পারে।

উল্লেখ্য, শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের সায়েদ আলীর মেয়ে বিউটি আক্তারকে (১৬) কে অপহরণ করে ধর্ষণ করে একই গ্রামের ইউপি মেম্বার কলম চান বিবির ছেলে বাবুল মিয়া। এ ঘটনায় ৪ মার্চ হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে বাবুল ও তার মা কলম চান বিবির বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন সায়েদ আলী। ওই মামলায় স্বাক্ষী করা হয় সায়েদ আলীর ঘনিষ্ট আত্মীয় ময়না মিয়াকে। এ ঘটনার পরই বিউটিকে পাঠিয়ে দেয়া হয় লাখাই উপজেলার গুণিপুর গ্রামে তার নানী ফাতেমা বেগমের বাড়িতে । গত ১৬ মার্চ রাতে সেখান থেকে নিখোঁজ হয় বিউটি। পরদিন ১৭ মার্চ গুণিপুর গ্রাম থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে শায়েস্তাগঞ্জের হাওরে তার লাশ পাওয়া যায়। এসময় তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায় পুলিশ। পরে এ ঘটনায় ১৮ মার্চ বিউটির বাবা সায়েদ আলী বাদী হয়ে একই গ্রামের বাবুল মিয়া (৩২) ও তার মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে (৪৫) আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে কলম চান বিবিকে শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ এবং বাবুলের বন্ধু ইসমাইল মিয়াকে অলিপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়। ধর্ষণের পর হত্যাকান্ডের ঘটনাটি এবং হাওরে বিউটির রক্তাক্ত লাশের ছবি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকসহ সর্বত্র ভাইরাল হয়ে যায়। দেশ বিদের গণমাধ্যমে আলোচিত এ সংবাদটি প্রচার হলে গত ৩০ মার্চ সিলেট থেকে বাবুল মিয়া কে গ্রেফতার করে র‌্যাব। বাবুলকে গ্রেফতারের পর প্রতিবাদের ঝড় উঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে। ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠে সারাদেশ। পুলিশও হত্যার মোটিভ উদঘাটনে মরিয়া হয়ে ওঠে। এদিকে, প্রথম দফায় তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হয়। পরে বদল করা হয় তদন্তকারী কর্মকর্তা।

Sharing is caring!

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..