সিলেট ১৭ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৮ই শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:০৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৯, ২০১৮
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের প্রকল্প কমিটির সভাপতি (পিআইসি) ও যুবলীঘ নেতা আবদুল অদুদের বর্বরতার শিকার প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া সাত বছরের শিশু ইয়াহিনের চিকিৎসার যাবতীয় দায়িত্ব নিলেন সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. বরকতুল্লাহ খাঁন।
ক্রাইম সিলেট সহ কয়েকটি পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর রোববার রাত ৮টার দিকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ওই শিশুর চিকিৎসার খোঁজ-খবর নিতে ও তাকে দেখতে হাসপাতালে ছুঁটে যান পুলিশ সুপার।
মানসিক বিপর্যস্ত মায়ের পাশে হাসপাতাল বেডে শয্যাশায়ী শিশু ইয়াহিনের মুখে পুলিশ সুপার শনিবার তার উপর চালানো নির্যাতনের ঘটনা শুনেন। এখনও আতংক কাটেনি তার।
শিশু ইয়াহিন জানায়, শনিবার বিকেলে হাওর রক্ষা বাঁধে খেলার ছলে সহপাঠিদের নিয়ে গড়াগড়ি দিচ্ছিল। এ ঘটনা দেখে ফেলেন অদুদ। তখন শিশুদের ধাওয়া করার এক পর্যায়ে অন্যরা দৌড়ে পালাতে পরলেও তাকে (ইয়াহিনকে) ধরে ফেলে মদ্যপ অবস্থায় অদুদ প্রথমে কয়েকবার মাটিতে আছড়ে ফেলেন। এরপর গলায় ধান কাটার কাস্তে (কাঁচি) ধরে তাকে জবাই করে মেরে ফেলার ভয় -ভীতি দেখান।
প্রাণভয়ে তখন ইয়াহিন অদুদের হাত-পা ধরে কান্নাকাটি করে ক্ষমা চাইলেও মন গলেনি তার। এরপর কাস্তে দিয়ে তার ডান হাতের একে একে তিনটি আঙুল কেটে দেন পাষন্ড অদুদ। অবুঝ শিশুর মুখে এমন বর্বর নির্যাতনের ঘটনা শুনে হাসপাতালে থাকা অন্য রোগী, তাদের স্বজন, গণমাধ্যমকর্মী এমনকি পুলিশ সুপার ও তার সহকর্মীরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।
এ সময় পুলিশ সুপার শিশু ইয়াহিন সুস্থ্য না হওয়া পর্য্যন্ত তার চিকিৎসার যাবতীয় ব্যায়ভার বহন ও আইনি সহায়তার ঘোষণা দিয়ে তার মা দিলরাজ বেগমের হাতে প্রাথমিক অনুদান হিসাবে নগদ ২০ হাজার টাকা, নতুন জামা কাপড় ও ফলের ব্যাগ তুলে দেন।
এ নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা যুগান্তরের অনলাইন ভার্সনে শনিবার রাতে শিশুর ছবিসহ ‘যুবলীগ নেতার এ কেমন বর্বরতা!’ এবং পরদিন রোববার পত্রিকাটির প্রিন্টিং ভার্সনের দ্বিতীয় পাতায় ‘সাত বছরের শিশুর আঙুল কেটে দিলেন যুবলীগ নেতা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে পুলিশ সুপার ও তাহিরপুর থানার ওসির মাধ্যমে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি , পুলিশের আইজিপি ড. জাভেদ হোসেন পাটোয়ারী, সিলেটের ডিআইজি কামরুল আহসান পিপিএম ও একাধিক মানবাধিকার সংস্থার দায়িত্বশীলরা খোঁজ-খবর নেন।
পুলিশ সুপার বলেন, এ ঘটনায় অন্য সবার মতো পুলিশ প্রশাসনের লোকজনও মর্মাহত। অদুদ যে লীগই হওক আর যতবড় প্রভাবশালীই হওক না কেন তাকে খুব দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের হাতে সোপর্দ করা হবে।
রোববার রাতে জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসনের একাধিক কালেক্টর, পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন সংস্থা, পরিবেশ ও মানবাধিকার উন্নয়ন সোসাইটির নেতৃবৃন্দ, ব্র্যাকসহ বিভিন্ন এনজি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও সদর হাসপাতালে শিশু ইয়াহিনকে দেখতে যান এবং তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন।
উল্ল্যেখ, জেলার তাহিরপুরের সুলেমান পুরের জমির উদ্দিনের ছেলে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি ও যুবলীগ নেতা আবদুল অদুদের মহালিয়া হাওরের ময়নাখালী নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধে একই গ্রামের শাহনুরের সাত বছরের শিশু সন্তান ইয়াহিন সহপাঠিদের নিয়ে গড়াগড়ি দিলে শনিবার বিকেল তাকে ধরে মাটিতে আছড়ে ফেলে কাস্তে (ধান কাটার কাঁচি) দিয়ে একে একে ডান হাতের তিনটি আঙুল কেটে দেন ওই যুবলীগ নেতা।
স্থানীয়রা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হতদরিদ্র শাহনুর ঘটনার পর , বেড়িবাঁধে গড়াগড়ি দেয়ার অপরাধে আমার শিশু সন্তানের তিনটি আঙুল কেটে দিল যুবলীগ নেতা অদুদ। এখন কী করে আমার ছেলে লেখাপড়া করবে? আমি গরিব মানুষ, ওর চিকিৎসা করাব কীভাবে?
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd