সিলেট ১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১০ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:৫৯ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৫, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : মৌলভীবাজারের বড়লেখায় এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। চিকিৎসকের অবহেলায় স্ত্রী মারা গেছেন বলে দাবি করে স্বামী প্রতিবাদ করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডেকে এনে তাকে ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ ওঠেছে। ওই নারীর নাম হালিমা বেগম (৩৫)। তিনি পৌরসভার আহমদপুর এলাকার ফারুকুল ইসলামের স্ত্রী।
এই ঘটনার খবর পেয়ে স্বজন ও এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতাল ঘেরাও করেন। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। বুধবার (১৪ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এই ঘটনাটি ঘটে।
নিহতের স্বজন, পুলিশ, হাসপাতাল ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে পৌরসভার আহমদপুর এলাকার ফারুকুল ইসলামের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী হালিমা বেগমের প্রসব ব্যথা ওঠে। এসময় স্বামী ফারুকুল ইসলাম তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে মারা যান ওই নারী। এই সময় দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার ডা. শারমিন আক্তার হাসপাতালে ছিলেন না। তিনি বাইরে রোগী দেখছিলেন বলে নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন। চিকিৎসক আসতে দেরি ও অবহেলার কারণে স্ত্রী মারা গেছেন দাবি করে স্বামী ফারুকুল ইসলাম এর প্রতিবাদ করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশ ডেকে এনে তাকে ধরিয়ে দেয়।
এই ঘটনার খবর পেয়ে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতাল ঘেরাও করেন। পরে পুলিশ তাকে (ফারুকুল) ছেড়ে দেয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সুহেল মাহমুদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার উদ্দিন, থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ সহিদুর রহমান, পৌরসভার মেয়র আবুল ইমাম মো. কামরান চৌধুরী, প্যানেল মেয়র তাজ উদ্দিন ও উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি তানিমুল ইসলাম তানিম প্রমুখ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।নিহতের স্বামী ফারুকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রায় আধঘণ্টা জরুরী বিভাগে অপেক্ষা করেও কোন ডাক্তার পাইনি। বিনা চিকিৎসায় আমার স্ত্রী মারা গেছেন। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক বাইরে ছিলেন। আমার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর
হাসপাতালে আসেন ডা. শারমিন। এ সময় আমি চিকিৎসকের চরম অবহেলার প্রতিবাদ করি। এতে হাসপাতালের লোকজন আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। প্রায় আধঘন্টা থানায় আটক থাকার পর আমাকে ছাড়া হয়।’
এ ব্যাপারে মেডিকেল অফিসার ডা. শারমিন আক্তার বলেন, ‘রোগীর উচ্চ ব্লাড প্রেসার ছিল। সিএনজি থেকে নামার সময় তিনি প্রচুর ঘামছিলেন। বেডে নেওয়ার পর অক্সিজেন দেওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসা শুরুর আগেই তিনি মারা যান। এতে
তাঁর স্বামী ডাক্তারদের উপর চড়াও হন। মারাত্মক দুর্ব্যবহার করেন। নিরাপত্তা জনিত কারণে ওসি সাহেবকে কল করেছি। মারমুখী আচরণের কারণে পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।’
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ সহিদুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তখন উত্তেজনা চলছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে ওই নারীর স্বামীকে সেখান থেকে সরিয়ে আনা হয়। পরিস্থিতি শান্ত হলে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে (নিহতের স্বামীকে) হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সুহেল মাহমুদ বুধবার রাত ১০টায় বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। স্থানীয় জনপ্রিতিনিধি ও পুলিশকে নিয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ওই ঘটনায় সমবেদনা ও দুঃখ প্রকাশ করছি এবং নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। দায়িত্ব পালনে কেউ যদি অবহেলা করে থাকেন অথবা দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনে ব্যর্থ হয়, সেক্ষেত্রে সিভিল সার্জন মহোদয়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। তাছাড়া জরুরী ভিত্তিতে উপজেলা স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির সভাপতি মাননীয় হুইপকে সভা আহবান করে হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কে আলোচনা করার অনুরোধ করা হয়েছে।’
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd