সিলেট ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৩ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৪:৫৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ৮, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : বাবার হাত ধরে ক্রিকেটের মাঠে এসে শুধু খেলোয়াড়ই হননি, এখন তিনি রীতিমতো ক্রিকেট কোচ। খেলা শেখাচ্ছেন মেয়েদের। যশোরসহ দেশে ক্লেমনের ৮টি ক্রিকেট একাডেমি আছে তার মধ্যে তিন্নিই প্রথম নারী কোচ।
শত বাধা পেরিয়ে সুরাইয়া জান্নাতী তিন্নি নিজে এখন অন্যের জন্য অনুসরণীয় হয়ে উঠেছেন। সমাজের অন্য মায়েদের মতো তার মাও একসময় বিরোধীতা করেছে বাইরে এসে খেলা শেখার জন্য। তাও আবার ক্রিকেট। একি ভাবা যায়!।
২০১৩ সালেই অনুশীলন করতে করতে বাচ্চাদের নিয়ে কাজ শুরু করেন সুরাইয়া জান্নাতী তিন্নি।
তিনি বলেন, কাজ করতে করতে একসময় ভালো লেগে যায়। পরে সুমন ভাই ও বিপ্লব ভাই (ক্লেমন আছিয়া ক্রিকেট ইন্সটিটিউটের সিনিয়র কোচ (আসাদুল্লাহ খান বিপ্লব) কোচ হিসেবে কাজ করার সুযোগ করে দেন। কোচ হিসেবে এই দুজনকে আদর্শ মানেন তিন্নি।
এখন পর্যন্ত ক্রিকেট কোচিং কোর্সের জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ নেয়া হয়নি। তবে বিএ শেষ হলে এই কাজটা সম্পন্ন করবেন বলে জানান। বড় কোনো টুর্নামেন্ট বা লিগে এখনো কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা হয়নি।
তবে একদিন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা দলের কোচ হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
নিজে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ না পেলেও তার হাত দিয়ে গড়ে উঠা কোনো ক্রিকেটের এই অভাব পূরণ করবে এটাই তার স্বপ্ন। সর্বোপরি মেয়েদের ক্রিকেট এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্নে নিজেকে কোচ হিসেবে প্রস্তুত করছেন তিন্নি। তিন্নির এই স্বপ্ন পূরণ হওয়া মানে যশোর তথা পুরো বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলেরই লাভ।
যশোরের ক্লেমন আছিয়া ক্রিকেট ইন্সটিটিউটের প্রধান কোচ এহসানুল হক সুমন বলেন, ছেলেদের কাছে মেয়েরা কোচিং করতে চাই না। মেয়েদের কোচ দরকার। আর যশোর ক্রিকেটে নতুন কিছু হবে।
সে চিন্তা থেকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়া। বর্তমানে বাচ্চাদের কাছে সে অনেক জনপ্রিয়। কোচ হিসেবে তার সুনাম এখন শুধুমাত্র একাডেমিতে সীমাবদ্ধ নেই। তা ছড়িয়ে পড়েছে যশোরের সর্বত্রই।
মধুসূদন তারা প্রসন্ন (এমএসটিপি) বালিকা বিদ্যালয়ের ক্রিকেট দলের দায়িত্ব পাওয়া তারই প্রমাণ বহন করে। আন্তঃবিদ্যালয় ক্রিকেট প্রতিযোগিতার জন্য তিন মাস আগে এমএসটিপি বিদ্যালয় তিন্নিকে কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বিদ্যালয়টি।
বর্তমানে এই বিদ্যালয়ের ৩০জন ছাত্রীকে ক্রিকেটের তালিম দিচ্ছেন যশোরের ধর্মতলায় জন্ম নেয়া এই নারী ক্রিকেটার।
তিন্নি বলে চলেন, তবে এই মেয়েদের বাড়ি থেকে ক্রিকেট খেলতে দেয় না। স্কুল টাইমে চুরি করে আমার কাছে অনুশীলন করে। তবে চেষ্টা করছি এসকল মেয়ের বাসায় গিয়ে তাদের বাবা মাকে উদ্বুদ্ধ করার।
যাতে পড়াশোনার পাশাপাশি মেয়েদেরকে ক্রিকেটে খেলতে বাধা না দেয়। বাবা ক্রিকেট অনুশীলনের জন্য সুমন ভায়ের কাছে দিয়ে গেলেও মেয়ে ক্রিকেটার হোক মা এটা পছন্দ করতেন না।
একবছর পর্যন্ত মায়ের বাধা এসেছে। আস্তে আস্তে যখন ভালো করলাম, বাইরে খেলতে গেলাম, তখন আম্মুও রাজি হয়ে গেল।
শুরুর দিনগুলোর কথা মনে করে বলেন, ‘প্রথম দিকে অনেকে উত্ত্যক্ত করত। রাস্তায় এমন সব বাজে কথা শুনেছি যে হেডফোন কানে লাগিয়ে যাতায়াত করতাম। এখন সেটা কম হয়ে গেছে। ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার প্রতি ছিল দারুণ টান।
সেবা সংঘ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের হ্যান্ডবল দলের হয়ে খেলোয়াড়ি জীবন শুরু তিন্নির। যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত হ্যান্ডবল লিগে খেলেছেন। তবে ২০১২ সাল থেকে বদলে যায় তার খেলোয়াড়ি জীবন। হ্যান্ডবল ছেড়ে শুরু হয় ব্যাট বলের সাথের পরিচয়।
তিনি আরো বলেন, বাবা ২০১২ সালে সুমন ভায়ের কাছে প্রাকটিসের জন্য দিয়ে যাই। প্রাকটিসে ভালো করার সুবাদে পরের বছরই ঢাকা প্রিমিয়িার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে খেলার সুযোগ পেয়ে যাই।
ওই বছরই বরিশাল বিভাগীয় দলে খেলার সুযোগ পায়। যদিও খুব বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি। পরে আরো দুই বছর খেলেছেন বরিশাল বিভাগীয় দলের হয়ে।
১৫ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া নারী বিভাগ ক্রিকেট প্রতিযোগিতা এবারও বরিশাল বিভাগীয় দলের স্কোয়াডে আছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটার। তবে ক্রিকেট থেকে বড় কোন সাফল্য আসেনি। ৫৭ রান এখন পর্যন্ত তার সেরা ইনিংস।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd