সিলেট ২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ৯ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ৯:০৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩, ২০১৮
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে অনুমতি ছাড়া তাবলিগে যাওয়ায় স্বামীর হাতে খুন হয়েছেন সরুফা বেগম (৩০) নামে এক গৃহবধূ। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার ভোররাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে গৃহবধূ সরুফার লাশ ভোরেই বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় গোপনে দাফনের জন্য।
সরুফা উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের কলাগাঁও পূর্বপাড় উত্তর হাঁটির কাপড় ব্যবসায়ী ফারুক মিয়ার স্ত্রী। এ ঘটনায় পুলিশ ফারুক মিয়াকে (৩৭) আটক করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের কলাগাঁও পূর্বপাড়ের উত্তর হাঁটির হাসিম মুন্সীর ছেলে কাপড় ব্যবসায়ী ফারুক মিয়ার সঙ্গে বেশ কয়েক বছর পূর্বে বিয়ে হয় পার্শ্ববর্তী চারাগাঁও মাইজ হাঁটির আবদুল মালেকের মেয়ে সরুফা খাতুনের। বিয়ের পর ফারুক ও সরুফা দম্পতির কোলজুড়ে জন্ম নেয় এক ছেলে ও এক মেয়ে।
অনুমতি ছাড়া অন্যান্য মহিলাদের সঙ্গে সরুফা তাবলিগের দাওয়াতি কাজে চলে যাওয়ায় ও সময়মতো কাপড় না কাটার জের ধরে স্বামী ফারুক কাপড় কাটার কাচি (কেঞ্চি) দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে সরুফার হাতে ও তলপেটের একাধিক স্থানে আহত করে। পরে স্থানীয়ভাবে প্রথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়ে। এতে শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হলে ফের শুক্রবার বিকালে পরিবার ও স্বজনরা সরুফাকে চিকিৎসার জন্য সরকারি হাসপাতালে না নিয়ে উপজেলার বাদাঘাট বাজারের স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসক দম্পতির কাছে নিয়ে যায়। সেখানে রাতভর চিকিৎসাসেবার একপর্যায়ে শনিবার ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে সরুফার মৃত্যু হয়। পরে লোক জানাজানির আশঙ্কায় অতিগোপনে ভোরেই নিহতের লাশ বাবা আবদুল মালেকের চারাগাঁও মাইজহাঁটির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় লাশ দাফনের জন্য। কিন্তু লাশ বাড়ি পৌঁছার পর পেটের ব্যথায় সরুফার মৃত্যু হয়েছে এমন কথা ছড়িয়ে দিয়ে দাফনের আয়োজন করার পূর্বে সকাল ৮টার দিকে আশপাশের গ্রামের লোকজন আবদুল মালেকের বাড়িতে জড়ো হয়ে বাদ সাধলে সরুফার খুনের বিষয়টি চাউর হতে থাকে।
অভিযুক্ত ফারুকের ভাই উসমান মিয়া শনিবার সকালে যুগান্তরকে বলেন, উপজেলার বাদাঘাটে পল্লী চিকিৎসক দম্পতির তত্ত্বাবধানে তাদের চেম্বারে সরুফাকে শুক্রবার রাতভর চিকিৎসা দেয়ার এক পর্যায়ে ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে সরুফা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। কী কারণে সরুফার মৃত্যু হয়েছে জানতে চাইলে উসমান কিছুক্ষণ নিরোত্তর থাকার একপর্যায়ে বলেন পেটের ব্যথায় ভাবি মারা গেছেন।
নিহত সরুফার এক মেয়ে প্রতিবেশীদের জানান, তাবলিগে চলে যাওয়ায় তার বাবা ফারুক মায়ের সঙ্গে বৃহস্পতিবার ঝগড়া করে ঘরে থাকা কাপড় কাটার কাচি দিয়ে প্রাণে মেরে ফেলার জন্য তাদের সামনেই মায়ের তলপেটে ও হাতে একাধিকবার ঘা দিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলেন।
উপজেলার বাদাঘাটের মহিলা পল্লী চিকিৎসক সেলিনা বেগম শনিবার সকালে যুগান্তরের কাছে সরুফাকে নিজ বাসায় রেখে রাতে চিকিৎসাসেবা দেয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বাম হাতে ৭টি সেলাই দিয়েছি, আর তলপেটে সামান্য কাচির আঘাত ছিল।রোগীর প্রশ্রাব বন্ধ ছিল। প্রশ্রাব করার ব্যবস্থার পর ব্যথার জন্য ইনজেশন পুশ করেছিলাম।
তাহিরপুর থানার ওসি শ্রী নন্দন কান্তি ধর শনিবার যুগান্তরকে বলেন, পল্লী চিকিৎসক কোনো অবস্থাতেই এ ধরনের জখমি রোগী চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে পারেন না। পল্লী চিকিৎসক দম্পতি এ রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক জেনেও সরকারি হাসপাতালে ভিকটিমকে না পাঠিয়ে বেআইনি কর্মকাণ্ড করেছেন। এলাকার লোকজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক লাশ উদ্ধারের পর অভিযুক্ত স্বামী ফারুককে আটক করা হয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd