ক্রাইম ডেস্ক :: ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অসদাচরণের প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এ ঘটনায় পুলিশসহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রায় দু’শ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্যের চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়।
রোববার পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর কাছে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। এদিকে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার বিষয়টি যুগান্তরের কাছে স্বীকার করেন কমিটির আহ্বায়ক পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত আইজিপি (অর্থ) মইনুর রহমান চৌধুরী। তবে এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, নিয়মানুযায়ী এই তদন্ত প্রতিবেদন মতামতসহ পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী। ক্যাডার নিয়ন্ত্রকারী মন্ত্রণালয় হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব চাকরিবিধি অনুযায়ী অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার শুনানি গ্রহণ করবেন। তিনি যদি অভিযুক্তের দেয়া জবাবে সন্তুষ্ট হন তাহলে শাস্তি ছাড়াই বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে পারেন। জবাব সন্তোষজনক না হলে শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডের জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা তথা বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে। এতে দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তি পেতে হবে। অসদাচরণের কারণে গুরুদণ্ড হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে চাকরিচ্যুতির বিধান রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগের তথ্যপ্রমাণ সন্নিবেশ করা হয়েছে তাতে বিভাগীয় মামলায় গুরুদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনের উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ হিসেবে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ডিআইজি মিজানের দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়ম আক্তার ইকো ও তার মা কুইন তালুকদারের বিরুদ্ধে মগবাজার চৌরাস্তা এলাকার কাজী মাওলানা সেলিম রেজা যে মামলা করেছেন সেটি সিআইডির মাধ্যমে তদন্তের সুপারিশ করা হয়। কারণ মামলা দায়েরের পর কাজী সেলিম রেজা নিজেই ১ জানুয়ারি আদালত থেকে ইকোকে জামিনে ছাড়িয়ে আনেন। তদন্ত কমিটির কাছে বিষয়টি রহস্যজনক মনে হয়েছে। এছাড়া মরিয়ম আক্তার ইকো যে রেজিস্ট্রারে ডিআইজি মিজানুর রহমানের সঙ্গে তার বিয়ে নিবন্ধন করার কথা বলেছেন সেটিও জব্দ করে পুলিশ। ইকোর মায়ের হাতে বিয়ে নিবন্ধনের যে ফি প্রাপ্তির রসিদ দেয়া হয় সেখানে বালাম নং ১১৩ ও পৃষ্ঠা ৭৮ উল্লেখ রয়েছে।
গত বছরের ১৭ জুলাই ৫০ লাখ টাকা কাবিনে এই বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার তথ্য রয়েছে। ইকোর দেয়া ফি প্রাপ্তির রসিদ পেয়ে বিয়ে নিবন্ধনের বালাম বইটি তলব করে তদন্ত কমিটি। সেখানে এক হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করে লায়েক হাসান ও উম্মে হানি সিদ্দিকী দম্পতির বিয়ে নিবন্ধনের পাতা দেখতে পান। ওই দম্পতির গ্রামের বাড়িও বগুড়ায়। কিন্তু অন্য পৃষ্ঠাগুলোর সঙ্গে এই দম্পতির বিয়ে নিবন্ধনের পৃষ্ঠাটির কোনো মিল পায়নি তদন্ত কমিটি। শত শত পৃষ্ঠার বালামটিতে ওই একটি পাতার রং তুলনামূলক একটু অন্যরকম। ধারণা করা হচ্ছে, এখান থেকে পাতা সরিয়ে আর একটি কাবিননামা ঢুকিয়ে নতুন করে বাঁধাই করা হয়েছে।
এদিকে মরিয়ম আক্তার ইকো ও একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকার সঙ্গে ডিআইজি মিজানের আলাপচারিতার যে অডিও-ভিডিও রেকর্ড জমা দেয়া হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে কিছু মন্তব্য জুড়ে দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। একাধিক অডিওতে টিভি উপস্থাপিকা ডিআইজি মিজানকে তুমি সম্বোধন করে কথা বলেন। ডিআইজি মিজানও উপস্থাপিকাকে ‘জান’ সম্বোধন করেন। একইভাবে মরিয়ম আক্তার ইকো তার জবানবন্দিতে মিজানের বিরুদ্ধে সবিস্তারে লিখিত অভিযোগ দেন। যার উল্লেখযোগ্য অংশ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে ইকোকে নির্যাতন করার অডিও সংযুক্ত করা হয়েছে।
নির্ভরযোগ্য একজন পুলিশ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, প্রতিটি অভিযোগ খণ্ডন করে এমনভাবে প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে যা পরবর্তী তদন্তের জন্য সহায়ক হবে। এ জন্য সবিস্তারে তথ্য-উপাত্তসহ সবকিছু তদন্ত রিপোর্টের সঙ্গে সংযুক্তি হিসেবে দেয়া হয়েছে।