সিলেট ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২রা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ৮:৪৫ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক :: আরেফিন তানজীব: জন্ম সূত্রে নাম তার আরিফ, সমাজে এখন তিনি পরিচিত আরিফা ইয়াসমিন ময়ূরী নামে। জামালপুরের হিজড়াদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ও ভিক্ষাবৃত্তি থেকে ফিরিয়ে আনতে ২০১৩ সালে জামালপুর সদরে ‘সিঁড়ি সমাজকল্যাণ সংস্থা’ নামের একটি সংগঠন তৈরি করেন আরিফা। বর্তমানে তিনি এ সংগঠনের সভাপতি।
সম্প্রতি কথা হয় আরিফা ইয়াসমিন ময়ূরীর। বলেন, তার জীবনের পথচলা থেকে শুরু করে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা। আরিফা বলেন, ২০০০ সালে এসএসসি পাশ করার পর পরিবার থেকে আলাদা হয়ে যাই, এরপর একটি বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থায় কাজ পাই। সেখানে আমি সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখি।
তিনি বলেন: নিজেকে সমাজে আরো এগিয়ে নেওয়ার জন্য ২০০৬ সালে ময়মনসিংহ পলিটেকনিকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হই। ২০১০ সালে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে চাকরি খুঁজি। কিন্তু আমি একমাত্র তৃতীয় লিঙ্গের বলে আমাকে চাকরি দেওয়া হয়নি।
‘আমি বেশকিছু সরকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন করি, বেশ কয়েকবার করেছিলাম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে। তারা আমাকে বলেছিল আপনি তৃতীয় লিঙ্গের হয়ে কিভাবে মেয়ের মতো পোশাক পড়ে কাজ করবেন। একমাত্র তৃতীয় লিঙ্গের হওয়ার জন্য যতোটুকু অপমানিত হতে হয় তা আমাকে হতে হয়েছে’, বলেন আরিফা ইয়াসমিন।
‘সিঁড়ি সমাজ-কল্যাণ সংস্থা’ সংগঠনটি সমাজে কী ভূমিকা রাখছে? এমন প্রশ্নের জবাবে আরিফা ইয়াসমিন বলেন: জামালপুর জেলায় সমাজ উন্নয়ন কাজ করছে এই সংগঠন। এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ শেষে আমরা হস্তশিল্পের সঙ্গে যুক্ত হই। ৬০-৭০ জন হিজড়া নিয়ে জামালপুরে হস্তশিল্পের কাজ শুরু করি, আমাদের মতো অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছে, আমরা স্বাবলম্বী হচ্ছি।
‘সিঁড়ি সমাজকল্যাণ সংস্থা’র সদস্য ৭০ জন হিজড়া। তারা সংগঠনে বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি করছেন। এজন্য তারা পারিশ্রমিক পান। এতে কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি নামক সংগঠন।
তিনি বলেন: আমার এলাকায় বন্যায় কবলিত মানুষকে ত্রাণ বিতরণ করি, ঈদুল আযহায় গরীবের মাঝে কোরবানীর মাংস বিতরণ করি। শীর্তাত মানুষের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করি।
এসব করতে কোন প্রতিবন্ধকতা আসে কিনা জানতে চাইলে আরিফা বলেন: এগুলো করতে গেলেও আমাদের অনেক হোঁচট খেতে হয়। নানা ধরনের বাজে কথা শুনতে হয়।
দেশে প্রথমবারের মতো হিজড়া সম্প্রদায় থেকে ২০১৬ সালে (পুরস্কার প্রদান করা হয় ২০১৭) ঢাকা বিভাগের ‘সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী’ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ ‘জয়িতা’ পুরস্কার পান আরিফা। জয়িতা পুরস্কার পাওয়ার পর নিজের কাজের গতি অনেকগুণ বেড়েছে বলে জানান তিনি।
‘দেশকে এগিয়ে নিতে সমাজ উন্নয়নে নিজে কাজ করছেন, তবে অনেক শ্রেণীর হিজড়ারা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টিসহ নানা অসামাজিক কাজ করছে’ এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আরিফা ইয়াসমিন ময়ূরী বলেন: সরকারের প্রতি আমার অনুরোধ সারাদেশ থেকে আমাদের মধ্যে একটা কমিটি করা হোক। সেই কমিটি সারা দেশের হিজড়া সম্প্রদায়কে নিয়ন্ত্রণ করবে। তবে আমাদের দেখভাল করতে হবে সরকারের, পুলিশের।
আক্ষেপের সুরে আরিফা বলেন: এমন অনেক হিজড়া সর্দার রয়েছে যাদের অধীনে বেশ কিছু হিজড়া কাজ করে। তারা সারাদিনে ভিক্ষাবৃত্তি করে সর্দারকে রাতে এক বড় অঙ্কের টাকা তুলে দেয়। সেখান থেকে সর্দার অর্ধেক টাকা রেখে বাকিটা তাদের মাঝে দেয়।
তিনি বলেন: কেউ যদি ঘরে বসে দিনে বিশ হাজার টাকা আয় করে তাহলে তো তাদের কোন কাজ করতে হবে না। আর আমরা হস্ত শিল্পের দোকানে বস্ত্র তৈরি করি, বেচা কেনা হলে তারপর সেখান থেকে লাভের টাকা নিজেকে নিয়ে সংসার চালাই।
‘এখন এই এই ভিক্ষাবৃত্তিসহ নানা অপকর্মে জড়িত হিজড়াদের সঙ্গে আমরা একা কিছু করতে পারবো না, কারণ খারাপদের সংখ্যা বেশি। এ ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপ অবশ্যই দরকার।’
সরকারের সমাজ কল্যাণ সংস্থা এ ব্যাপারে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জানতে চাইলে তিনি বলেন: সমাজ কল্যাণ সংস্থা পাঁচ’শ টাকা ভাতা দিচ্ছে কিংবা উপবৃত্তির সর্বোচ্চ হাজার টাকা।এছাড়া ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু এটা দিয়ে সব সমস্যা সমাধান হয় না।
সমাজ উন্নয়নে কাজ করে নিজেকে ভালো অবস্থানে তুলে ধরতে চান জানিয়ে জয়িতা বিজয়ী আরিফা বলেন: সারাদেশ থেকে আমাদের একটা কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হলে আমাদের অনেক উন্নয়ন হবে। আমাদের ভালো মন্দ আমরা যেভাবে দেখব তা বাইরের কেউ জানবে না।-চ্যানেল আই
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd