সিলেট ২৬শে জানুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই মাঘ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ | ১২ই জমাদিউস সানি, ১৪৪২ হিজরি
প্রকাশিত: ২:২৩ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৮
Sharing is caring!
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলা তদন্তের আরেকটি নিষ্ফল বছর পার হলো। আজ ১১ ফেব্রুয়ারি রবিবার চাঞ্চল্যকর এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের অর্ধযুগ পূর্ণ হলো। গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ‘ব্যর্থতায়’ আদালত র্যাবকে তদন্তভার দিলেও তারা পাঁচ বছর ১০ মাসেও দৃশ্যমান কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি। এই সময় তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে আদালতের কাছে ৫৪ বার সময় প্রার্থনা করেন র্যাবের তদন্ত কর্মকর্তা। সর্বশেষ গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য থাকলেও তা করা হয়নি। আগামী ১৩ মার্চ প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে। নথিপত্রে দেখা গেছে, নির্ধারিত তারিখে বারবার অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে ‘গুরুত্বসহকারে তদন্ত চলছে’ বলে আদালতকে জানান তদন্ত কর্মকর্তা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, তিন বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ডিএনএ পরীক্ষায় ঘটনাস্থলে ‘অজ্ঞাত’ দুজনের উপস্থিতির আলামত পাওয়া যায়। সাগর-রুনির স্বজনসহ কজনের ডিএনএ নমুনার সঙ্গে যাচাই করেও র্যাব সন্দেহভাজন ঘাতকদের শনাক্ত করতে পারেনি। সন্দেহভাজন হিসেবে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাদের কারো সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলেনি। নিহতদের বাসা থেকে খোয়া যাওয়া ল্যাপটপটিও উদ্ধার করতে পারেনি র্যাব।
ছয় বছর তদন্ত নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্ধকারে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাগর-রুনির স্বজন ও সহকর্মীরা। তাঁরা বলছেন, প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবেই এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচিত হচ্ছে না। আজও বিচারের দাবিতে কর্মসূচি পালন করবেন সাংবাদিকরা।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্ত চলছে। আদালতে সময়মতো অগ্রগতি প্রতিবেদন দেওয়া হচ্ছে। তদন্ত শেষ হলে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এর আগে কিছুই বলা যাবে না।’
মামলার বাদী রুনির ভাই নওশের আলম রোমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এখন কী তদন্ত হচ্ছে তা আমাদের জানা নেই। গত প্রায় এক বছর তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগও নেই। আমাদের কিছু জানানোও হচ্ছে না।’
সাংবাদিক সাগরের মা সালেহা মনির বলেন, ‘আমার দুই সন্তান হত্যার রহস্য বের হবে না কেন? প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন, বিচার হবে। ছয় বছর পার হয়েছে। কিছুই তো হলো না!’
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির লাশ। এ সময় বাসায় ছিল তাঁদের একমাত্র সন্তান মাহির সরওয়ার মেঘ। ঘটনাস্থলে গিয়ে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ‘৪৮ ঘণ্টার’ মধ্যে খুনিদের গ্রেপ্তার করা হবে। দুই দিন পরে তৎকালীন পুলিশের আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছিলেন, ‘প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি’ হয়েছে। সেই ৪৮ ঘণ্টার অগ্রগতি ছয় বছরেও আর জানা যায়নি।
ঘটনার সময় পাঁচ বছরের মেঘের বয়স এখন ১১ বছর। রাজধানীর একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে মেঘ। স্বজনরা জানায়, চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁরা মেঘকে মা-বাবার স্মৃতি আঁকড়ে থাকতে দেন না। সে স্বাভাবিকভাবে অন্য শিশুদের মতো বেড়ে উঠছে। তবে ডানপিটে মেঘ মাঝেমাঝেই মা-বাবার কথা মনে করে চুপ মেরে যায়।
তদন্ত ও আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ৫৪টি অগ্রগতি প্রতিবেদনেই ‘গুরুত্বসহকারে তদন্ত চলছে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দেড় শতাধিক সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। সন্দিগ্ধ আসামিদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের নাম ও ঠিকানা যাচাই এবং পূর্ব ইতিহাস জানার জন্য গতিবিধি, চালচলন পর্যবেক্ষণের কথা বলা হয়েছে। ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার কথা বলা হলেও চুরি যাওয়া ল্যাপটপ পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারি দাখিল করা এক প্রতিবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতকে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্টগুলো পাওয়া গেছে। সে রিপোর্ট ও অপরাধচিত্রের প্রতিবেদন (ক্রাইম সিন রিপোর্ট) পর্যালোচনায় দুজন পুরুষের ডিএনএ পূর্ণাঙ্গ প্রফাইল পাওয়া গেছে। গ্রেপ্তার করা আট আসামি, নিহত দুজন এবং স্বজন মিলে মোট ২১ জনের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছিল। এসব পরীক্ষায় সন্দেহভাজন খুনি শনাক্ত হয়নি।
এই মামলায় গ্রেপ্তার করা আটজনের মধ্যে পাঁচজন রফিকুল, বকুল, সাইদ, মিন্টু ও কামরুল হাসান ওরফে অরুণ মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণচন্দ্র রায় হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তার দেখানো হয় পারিবারিক বন্ধু তানভীর এবং বাসার নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও হুমায়ূন কবীরকে। এঁদের মধ্যে তানভীর, মিন্টু ও পলাশ হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। বাকিরা কারাগারে আছেন।
সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল আদালতে ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে তদন্ত সংস্থা ডিবি পুলিশ। এরপর আদালতের নির্দেশে র্যাবের কাছে তদন্তভার স্থানান্তর করা হয়। ওই বছরের ২৬ এপ্রিল ভিসেরা আলামতের জন্য সাগর-রুনির লাশ কবর থেকে উত্তোলন করে র্যাব। সেই ভিসেরা পরীক্ষায় বিষক্রিয়ার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। এদিকে র্যাবও তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করে। ২০১৬ সালে জ্যেষ্ঠ পুলিশ সুপার ওয়ারেস আলী মিয়ার কাছ থেকে সহকারী পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন আহম্মেদের কাছে তদন্তভার হস্তান্তর করা হয়।
………………………..
Design and developed by best-bd