বড়লেখায় মাদ্রাসা অধ্যক্ষকে বরখাস্তের জেরে সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের আহত ১০

প্রকাশিত: ১:১৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০১৮

বড়লেখা প্রতিনিধি :: মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার চান্দগ্রাম আনোয়ারুল উলুম ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোস্তাক আহমদ চৌধুরীকে বরখাস্তের জেরে দুই পক্ষের সংর্ঘষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।

শনিবার দুপুর ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্তিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় মাদ্রাসার স্বাভাবিক শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চান্দগ্রাম আনোয়ারুল উলুম ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোস্তাফ আহমদ চৌধুরীকে (সদ্য বরখাস্ত হওয়া) নিয়ে মাদ্রাসায় দীর্ঘদিন থেকে বর্তমান গভর্নিংবডির সভাপতি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক ও সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিনের মধ্যে বিভক্তির সৃষ্টি হয়। যার ফলে প্রায় মাদ্রসার
মধ্যে বিশৃঙ্খলা হয়। এতে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে। সম্প্রতি গভর্নিংবডির নির্বাচনের ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও দাতা সদস্যদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্তি নিয়ে নতুন করে তাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। গত ১৮ জানুয়ারি মাদ্রসার দাতা সদস্যদের তহবিলের টাকাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে অধ্যক্ষ মোস্তাফ আহমদ চৌধুরীকে
বরখাস্ত করা হয়।

এদিকে আগামী ২৯ জানুয়ারী মাদ্রাসার ৬০তম বার্ষিক জলসা উপলক্ষ্যে শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকালে উপাধ্যক্ষের কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা চলছিল। এসময় সদ্য বরখাস্ত হওয়া অধ্যক্ষ মোস্তাফ আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে কতিপয় ব্যক্তি অতর্কিতভাবে কক্ষে ঢুকে আসবাবপত্র ও ফাইলপত্র তছনছ করতে থাকে এবং উপাধ্যক্ষ ওহীদুজ্জামান চৌধুরীকে মারধর করে। এরপর মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে এলাকার দুইটি পক্ষের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।

এতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওহীদুজ্জামান চৌধুরী, আরবি প্রভাষক আসাব উদ্দিন, শিক্ষক আমিনুল ইসলাম ও পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে ইট পাটকেলের আঘাতে এসআই দেবাশীষ সূত্রধর ছাড়াও উভয়পক্ষের অন্তত ১০ ব্যক্তি আহত হন। আহত বাকিদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি। আহতরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এ বিষয়ে গভর্নিংবডির সভাপতি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ময়নুল হক বলেন, ‘অর্থ আত্মসাতসহ বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির কারণে গত ১৮ জানুয়ারি মাদ্রাসার গভর্নিংবডি প্রিন্সিপাল (অধ্যক্ষ) মোস্তাক আহমদ চৌধুরীরকে বিধিমোতাবেক সাময়িক বরখাস্ত করে। এরপর থেকে মাদ্রাসা গর্ভনিংবডি ভাইস প্রিন্সিপাল ওহীদুজ্জামান চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এভাবেই মাদ্রাসা চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে আজকে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলাল উদ্দিন ও সাময়িক বহিস্কৃত অধ্যক্ষ মোস্তাক আহমদ চৌধুরীর নেতৃত্বে অতর্কিতভাবে লোক নিয়ে কক্ষে ঢুকে ভাংচুর ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে (উপাধ্যক্ষ) মারধর করেন। এসময় তাকে বাঁচাতে গিয়ে দুইজন শিক্ষকও আহত হন। আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। অন্য একটি জায়গায় বৈঠকে ছিলাম। ঘটনার খবর শুনে মাদ্রাসায় যাই। পরে পুলিশকে খবর দেই। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে।’

গভর্নিংবডির সাবেক সভাপতি আলাল উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ আজকে মাদ্রাসার জলসা কমিটির সভা ছিল। আমি কমিটিরএকজন সদস্য হিসেবে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওহীদুজ্জামান চৌধুরী চিঠি পেয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি মারামারি চলছে। এসময় হামলাকারীদের হাত থেকে উপাধ্যক্ষকে (ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওহীদুজ্জামান চৌধুরী) রক্ষা করতে গিয়ে আমি নিজেও আহত হয়েছি। আমি হামলা করিনি। বিষয়টি সঠিক নয়।’

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মোস্তাক আহমদ চৌধুরী (সদ্য বরখাস্ত হওয়া) বলেন, ‘কয়েকদিন থেকে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু এরকম কোনো লিখিত কাগজ পাইনি। এছাড়া গত কয়েকদিন থেকে আমি কর্মস্থলে ছিলাম না। হামলা ভাংচুরের নেতৃত্ব দেওয়ার প্রশ্নই উঠে না। শনিবার সকালে সাময়িক বরখাস্তের চিঠির
খোঁজ করতেই আমি মাদ্রাসায় গিয়েছিলাম। অফিসে তালা থাকায় আমি শিক্ষক মিলনায়তনে বসেছিলাম। এর মধ্যে মাদ্রাসায় ঝামেলা শুরু হলে আমি কোনমতে বেরিয়ে আসি। এসময় সাবেক গভর্নিংবডির সাবেক সভাপতি আলাল উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন ব্যক্তি মাদ্রাসায় ঢুকেছিলেন।’

মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওহীদুজ্জামান চৌধুরীর সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁর মুঠোফোনেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) দেবদুলাল ধর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘সংঘর্ষের খবর পেয়েই একদলপুলিশ নিয়ে উপস্থিত হয়ে চেষ্টা চালিয়ে বিকেলের দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে একজন পুলিশ অফিসার আহত হয়েছেন।বর্তমানে পরিস্থিতি শান্তরয়েছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন

আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..