সিলেট ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ১৮ই জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ১১:০৭ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ২৪, ২০১৮
ক্রাইম সিলেট ডেস্ক : পুন্যভূমি সিলেট নগরীর উন্নয়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে বৃহৎ ১০টি প্রকল্প। বর্তমান সরকারের চার বছরের মেয়াদে বাস্তবায়িত হচ্ছে এসব প্রকল্প। এসব প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৮শ’ ৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৪ কোটি ২৮ লাখ টাকা অনুদান হিসেবে দিয়েছে ভারত। সিলেট সিটি কর্পোরেশন সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব সিলেটের ডাককে জানান, নগরবাসীর কল্যাণেই এসকল প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এর ফলে নগরীর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন আসবে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দশটি প্রকল্পে ১০৬ দশমিক ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ আর সিসি রোড- সিসি রোড নির্মাণ , ১২৩ কিলোমিটার কার্পেটিং রোড নির্মাণ, ১৪ কিলোমিটার এস ফল্ট রোড নির্মাণ, ১৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ১৪২ দশমিক ২২ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ, ৬টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, ১ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ, ১ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ অবকাঠামোগত আরো অনেক নির্মাণ কাজ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭৫ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ২৫ ভাগ কাজ বর্তমান সরকারের মেয়াদকালেই সম্পন্ন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সিলেট সিটি কর্পোরেশন ‘২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এই প্রকল্পসমূহকে বর্তমান সরকারের সাফল্য ও অর্জন’ বলে অভিহিত করেছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রাইমারি ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, নগর ভবন নির্মাণ ও অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় (১ম সংশোধিত) প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৪৪ কোটি ৫০ লাখ ৪৮ হাজার ৬শ টাকা। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনে ৫ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার আর সিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, ৪টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। ১৭ টি অত্যবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয় এবং ১২তলা ভিত্তি বিশিষ্ট ৫ম তলা পর্যন্ত নগর ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পে, ব্যয় করা হয় ২শ ৩৬ কোটি ৭৭ লাখ ২ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের অধীনে ১২ কিলোমিটার এসফল্ট রোড, ৭০ কিলোমিটার কার্পেটিং রোড, ৬৯ দশমিক ৭০ কিলোমিটার আরসিসি রোড-সিসি রোড নির্মাণ, ৭ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল, ৫৫ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন, ১২ টি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, ১ দশমিক ৪৮ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ, ৬তলা ভিত্তি বিশিষ্ট ক্লিনার কলোনির ৪তলা পর্যন্ত নির্মাণ ও ১ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ‘সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অনুন্নত এলাকা কাঁচা রাস্তা, ড্রেন নির্মাণ, রিটেইনিং ওয়াল ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পে’ ব্যয় হয়েছে ১শ ৫৩ কোটি ১৩ লাখ ২১ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের অধীনে ৫০ কিলোমিটার কার্পেটিং রোড, ৩৭ কিলোমিটার আরসিসি রোড/সিসি রোড নির্মাণ, ৩ কিলোমিটার রিটেইনিং ওয়াল, ৮৬ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন, ৫টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। ইতোমধ্যে এই প্রকল্প শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
হযরত গাজী বোরহান উদ্দিন (রহঃ) মাজার ও তৎসংলগ্ন এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১৮ কোটি ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার ২শ টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় হযরত গাজী বোরহান উদ্দিন (রহঃ) মাজার মসজিদ নির্মাণ, মহিলা ইবাদাতখানা নির্মাণ, ২কিলোমিটার রাস্তা এসফল্ট দ্বারা উন্নয়ন, ৩ কিলোমিটার রাস্তা কার্পেটিং দ্বারা উন্নয়ন, ১ দশমিক ২২ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন ও ১টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। এই প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যে শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
‘সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে’ ব্যয় ধরা হয় ২৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের অধীনে ৮ দশমিক ৪৪ একর জমি অধিগ্রহণ ও ভূমি উন্নয়ন, ৭৩১ মিটার আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ, এপ্রোচ রোড নির্মাণ, পার্কিং এরিয়া উন্নয়ন, কাউন্টার বিল্ডিং নির্মাণ, আভ্যন্তরীণ ড্রেন ও পাইপ ড্রেন নির্মাণ ও বিদ্যুতায়ন কাজ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের কাজ ৯৫ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
‘সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত ১১ টি প্রধান প্রধান ছড়া সংরক্ষণ ও আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ প্রকল্পে’ ব্যয় ধরা হয়েছে ২শ’ ৩৬ কোটি ৪০ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় মালনীছড়া, গোয়ালীছড়া, গাভিয়ারখাল, কালীবাড়ীছড়া, হলদিছড়া, যোগনীছড়া, বুবিছড়া, মঙ্গলীছড়া, বাবুছড়া, রতœারখাল/জৈন্তারখাল, বসুখাল খনন ও পুন:খনন এবং ১১টি ছড়ার পার্শে¦ আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ছড়া খনন ও পুন:খনন কাজ ১৩ ভাগ ও ওয়াল নির্মাণ কাজ হয়েছে ১৯ ভাগ। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
‘উন্নত পরিবেশ ও শিক্ষার মান উন্নয়নে সিলেট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে’ ব্যয় ধরা হয় ২৪ কোটি ২৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এ প্রকল্পের অধীনে মজলিস আমিন চারাদিঘীরপার এলাকায় ৫তলা কিন্ডারগার্টেন এবং উচ্চ বিদ্যালয় নির্মাণ কাজ, কাষ্টঘর এলাকায় ৬তলা ক্লিনার কলোনী নির্মাণ কাজ ও উন্নত-নির্মল পরিবেশের জন্য ধোপাদিঘীর চতুর্দিকে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের কাজ হয়েছে ২২ ভাগ। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের অর্থায়ন করেছে ভারত। অনুদান হিসেবে ভারত এই অর্থ দিয়েছে।
এদিকে ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ৪তলা ভিত্তি বিশিষ্ট ভোলানন্দ নৈশ বিদ্যালয় নির্মাণ, ৪তলা ভিত্তি বিশিষ্ট বর্ণমালা স্কুল ভবন নির্মাণ, ১০তলা ভিত্তি বিশিষ্ট স্টাফ কোয়ার্টার এর ২য় তলা পর্যন্ত নির্মাণ ও বন্দরবাজারে ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের কাজ হয়েছে শতভাগ।
দুুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের অধীনে মালনীছড়া/ খাল খনন পুন:স্থাপন, ধোপাছড়া/ খাল খনন পুন:খনন, হলদিছড়া/খাল খনন পুন: খনন ও আর সিসি বক্স ড্রেন, ইউ টাইপ ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় করা হয় ৭ কোটি ৭১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
মিউনিসিপ্যাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস প্রজেক্ট (এম.জি.এস.পি) এর আওতায় বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৮ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মধ্যে ইতোমধ্যে ২ দশমিক ৫ কিলোমিটার রাস্তা, ৩ কিলোমিটার ড্রেন, ১ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের বাকি কাজ হয়েছে ৫৭ দশমিক ৫ ভাগ।
সিটি কর্পোরেশন সূত্র জানায়, উন্নয়নের এই হিসেব ইতোমধ্যে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করেছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সিলেট সফর উপলক্ষে উন্নয়নের এই হিসেব বিলবোর্ড আকারে নগরীতে স্থাপন করবে সিটি কর্পোরেশন। সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়নে এই ১০ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সিলেট নগরবাসী এর সফুল ভোগ করবেন বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীসহ কর্পোরেশনের কাউন্সিলরগণ-কর্মকর্তাবৃন্দ সার্বক্ষণিক এসকল প্রকল্পের দেখভাল করছেন।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব এ বিষয়ে সিলেটের ডাককে বলেন, ১০ উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়নের মাধ্যমে নগরীর অবকাঠামোগতভাবে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। উন্নত রাস্তাঘাটের পাশাপাশি জলাবদ্ধতা থেকেও মুক্তি পাবেন নগরবাসী। শিক্ষা, পরিবেশ এমনকি জনজীবনেও অনেক পরিবর্তন আসবে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd