গোলাপগঞ্জে ধর্ষণ ও আত্মহত্যা দিয়ে নতুন বছর শুরু

প্রকাশিত: ৫:৫৫ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৩, ২০১৮

ফাহাদ হোসাইন গোলাপগঞ্জ থেকে : একাধিক চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ভয়াবহ সংঘর্ষ, মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা, হস্যজনক মৃত্যু, আত্মহত্যা, খুন-গুমসহ নানা ধরনের ঘটনার মধ্য দিয়ে চলে গেল ২০১৭। ২০১৮ সাল আসাতেই মানুষজন পেছনের সব গ্লানী ভুলে নতুনত্বের সাথে আনন্দ-উল্লাস-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে কাটাতে চায়। কিন্ত নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহেই একজন হবধুর আত্মহত্যা, ছেলের সাথে অভিমান করে মায়ের আত্মহত্যা, এক লম্পট কর্তৃক ১৬ বছরের শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় আবারও মানুষের মধ্যে আতংক আর হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনা গুলো উপজেলা জুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। তাহলে কি নতুন বছর গেল বছরের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, আতংক আর উদ্বেগের মধ্যে পার করতে হবে এমনই আশংকা সুশীল সমাজের। গৃহবধুর আত্মহত্যা : ২০১৮ সালের ২ জানুযারী নিজ ঘরের তীরের সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে এক গৃহবধু ত্মহত্যা করেছেন এমন খবর পাওয়া যায়। নিহত গৃহবধুর উপজেলা ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের দত্তরাইল গ্রামের প্রবাসী অনুপ দেব টিটনের স্ত্রী প্রিয়াংকা দেব (২৫)। নিহতের স্বামীর পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রিয়াংকা অজানা কারণে নিজ ঘরেই আত্মহত্যা করেন। তবে এ ব্যাপারে নিহতের বাবা বিশ্বনাথ উপজেলার জামাইয়া গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ দেব প্রিয়াংকার আত্মহত্যা মানতে নারাজ। দিলীপ দেবের দাবী, তার মেয়েকে স্বামীর পরিবারের সদস্যরা খুন করে বাঁচতে আত্মহত্যার নাটক তৈরি করেছে। স্বামীর পরিবারের সদস্য কর্তৃক তার মেয়ে প্রায় সময় নির্যাতন শিকার হতেন। একটি সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১২ই অক্টোবর উভয় পরিবারের সম্মতিক্রমে প্রিয়াংকা আর টিটন দেবের বিবাহ হয়। বিয়ের এক বছর পর তাদের ঘরে একটি পুত্র
সন্তান জন্ম হয়। বর্তমানের তার বয়স ৩ বছর। স্বামী দুবাই যাওয়ার পর থেকে শাশুড়ী ও ননদের হাতে প্রায় সময় নির্যাতন হতেন প্রিয়াংক দেব। পারিবারিক কলহের কারণে আত্মহুতি করেছেন বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে এ ঘটনার মূল রহস্য
এখনও উন্মেচন হয়নি।

এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম ফজলুল হক শিবলী জানান, ঘটনাটি আত্মহত্যা না হত্যা তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ময়না তদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত প্রিয়াংকার আত্মহত্যার রহস্য উদঘাটন হবে না। এ ব্যাপারে পুলিশ বাদী হয়ে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে। মায়ের আত্মহত্যা : প্রিয়াংকা দেবের আত্মহত্যার ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নে আরেক মায়ের আত্মহত্যার খবর পাওয়া যায়। এক দিনের ব্যবধানে দু’গৃহবধুর  ত্মহত্যার ঘটনায় উপজেলা জুড়ে চাঞ্চ্যলের সৃষ্টি হয়েছে। আপন পুত্রের সাথে অভিমান করে আত্মহুতি দিয়েছেন বলে একটি সূত্র
থেকে খবর পাওয়া যায়। নিহত গৃহবধুর নাম সুজেলা বেগম (৫২)। তিনি উপজেলার ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের রায়গড় এলাকার আলাউদ্দিনের স্ত্রী। ঘটনার পর তার লাশ সিলেটে ওসমানী হাসপাতালে ময়না তদন্তের পর লাশ হিমঘরে রাখা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, প্রবাসী পুত্র বদরুল ইসলাম দেশে আসার পর থেকে সুজেলা বেগমের সাথে মনমালিন্য চলছিল। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় তাদের মধ্যে বিবাদের সুত্রপাত হত। গত বুধবার সন্ধ্যায় এ কারনে গৃহবধু কিটনাশক প্রাণ করে আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা যায়। বিষয়টি টের পেয়ে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা তাৎক্ষনিক তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ময়না তদন্তের পর আইনী জটিলতার কারণে লাশ  হিমঘরে রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম ফজলুল হক শিবলী জানান, সিলেট ওসমনাী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হওয়ায় সিলেট কতোয়ালী থানার অধীনে লাশ তদন্ত করা হবে। কিশোরী ধর্ষণ : ৪ জানুয়ারী গোলাপগঞ্জ উপজেলার হেতিমগঞ্জে ১৬ বছরের এক কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে লিটন ওরফে সাদ্দাম(২৫) নামের এক লম্পটকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধর্ষণের স্বীকার কিশোরী সুনামগঞ্জ জেলার সোনাপুর গ্রামের জনৈক ব্যক্তির কন্যা। ওই কিশোরীসহ তার পরিবারের লোকজন দীর্ঘদিন থেকে উপজেলার তিমগঞ্জে বাজারস্থ একটি কলোনীতে বসবাস করতেন বলে জানা যায়। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হেতিমগঞ্জের মোল্লাগ্রামের সোজা মিয়ার কলোনীতে ভিকটিমের পরিবার বসবাস করতেন। একই কলোনীর পাশ্ববর্তী রুমের আব্দুল্লাহর পুত্র লিটন ওরফে সাদ্দাম বসবাসের সুবাদে ১৬ বছরের কিশোরীকে জোরপূর্ব রুমে নিয়ে ধর্ষণ করে। ওই কিশোরীর চিৎকার শুনে কলোনীর আশপাশ লোকজন তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করেন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। বর্তমানে কিশোরী হাসপাতালের ফরেন্সি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা যায়। পরদিন শুক্রবার কিশোরীর বড় ভাই ওয়াহিদ
আহমদ বাদী হয়ে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে-৯ এর (১) ধারায় একটি মামলা (মামলা নং-৩) দায়ের করেন। শনিবার দুপুরে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার এসআই শংকর দেব একদল পুলিশ নিয়ে হেতিমগঞ্জ বাজার থেকে লিটনকে গ্রেফতার করে। এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ একেএম ফজলুল হক শিবলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মামলার পরিপ্রেক্ষিতে আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামীকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

Sharing is caring!

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

বিজ্ঞাপন


আর্কাইভ

সর্বশেষ খবর

………………………..