সিলেট ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ৪ঠা রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:০৪ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১, ২০১৮
এক বছর থেকে আরেক বছরে এই যে যাত্রা- এ কেবল পঞ্জিকার বদলই নয়। প্রগতির পথে এগিয়ে চলছে দেশ। আজ বছর শুরুর দিনটিতে বই উৎসব হবে। লক্ষাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটিতেই উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হবে নতুন বই।
গতকাল রবিবার প্রধানমন্ত্রী ২৮টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন যশোরে। সেখানে জনসভায় বলেছেন, ২০২১ সালে এ দেশের প্রতিটি ঘর আলোকিত হবে। পুরনো বছর ও নতুন বছরের ফারাকের মধ্যেও এ দেশে শত উদ্যোগ মানুষকে আশাবাদী করে তুলছে।
গত বছর ছন্দে পতন ঘটায় উত্তরের বন্যা, হাওরে ফসলডুবি, পাহাড়ে প্রাণহানি। রোহিঙ্গা সংকট আমাদের জন্য আরো বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। সমস্যাটির দ্রুত সমাধান আমাদের কাম্য। রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরা ও নিরাপদে অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে। চালের দাম সহনীয় স্তরে আনা, মাদকের আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণ, খুনখারাবির লাগাম টেনে ধরাও বছরের বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। তবে খাদ্যঘাটতি মেটাতে আমদানি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া অতীতে অনেক বড় বিপত্তি আমরা সামাল দিয়েছি, ভবিষ্যতেও পারব। ৪৬ বছরের স্বাধীন বদ্বীপ এই ভূখণ্ডে না খেয়ে আজ মানুষ মরছে না। উত্তরে মঙ্গা জয় করেছে মানুষ। দুর্যোগ মোকাবেলায় সক্ষম দেশের উদাহরণ হয়েছে দেশটি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় থেকে শুরু করে চার নেতা হত্যাকাণ্ড, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার, চাঞ্চল্যকর অনেক মামলার দ্রুত বিচারের সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে যেন নীরব আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। উন্নয়নের অর্ধেক অংশ নারীরাই প্রতিরোধ গড়ছে সামাজিকভাবে। চলার পথের প্রকৃতি এভাবেই পাল্টে গেছে। আরো সামনে চলার প্রত্যয় দৃঢ় হয়েছে নানা কারণে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সূচকে একসময়ের শোষক রাষ্ট্র পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে এগিয়েছে দেশ। স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ উচ্চতায় উঠেছে। মানুষের জীবনমানের উন্নতি ঘটছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সূচকে এগিয়েছে দেশ। বিশ্বব্যাংকসহ কোনো উন্নয়ন সহযোগীর কাছে হাত না পেতেই নিজস্ব অর্থায়নের ওপর ভর করে পাখা মেলছে ছয় কিলোমিটারের বেশি দীর্ঘ পদ্মা সেতু। বিদ্যুত্ ও গ্যাসের ব্যবহারকারী বেড়েছে। গত বছর দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, তথ্য-প্রযুক্তি, অবকাঠামো, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়।
এরই মধ্যে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের একটি এ দেশ। দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। মানুষের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। মাথাপিছু আয়ও বেড়েছে। এ আয় এখন এক হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার। রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
সরকারি হিসাবে গত বছরই দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। কর্মের যজ্ঞে বদলে গেছে গ্রামের পর গ্রাম। গ্রামে আজ আর আগের মতো অসুখী মুখের দেখা মেলে না। অজপাড়ায়ও পাকা হয়েছে চলাচলের পথ। তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে হাতে হাতে মোবাইল ফোন, ঘরে ঢুকে গেছে ইন্টারনেট। পাঁচ কোটি মানুষ নিম্ন আয়ের স্তর থেকে মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে-এই তথ্যও আশা বাড়িয়ে দেয়।
দেশে এখন সাক্ষরতার হার ৭২ শতাংশের বেশি। এরই মধ্যে আজ সারা দেশে নতুন বই গন্ধ ছড়াবে। শিশু-কিশোররা হাসবে নতুন স্বপ্নে। ৮৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। দরিদ্র মানুষেরা বিনা মূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ পাচ্ছে। গড় আয়ু বেড়ে ৭১ বছর আট মাস হয়েছে।
এত অর্জনের পর এই নতুন বছরের শুরুতে প্রত্যাশার জায়গাটাও বড় হয়েছে। নতুন ইংরেজি বছর উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নতুন বছরের বাণীতে আশা প্রকাশ করে বলেছেন, ‘সময় থেমে থাকে না। এগিয়ে চলাই সময়ের ধর্ম। ’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসী, প্রবাসী বাঙালিসহ বিশ্ববাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক, উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, নতুনের আহ্বানে পুরাতন সব জঞ্জাল ধুয়ে-মুছে নতুন সূর্যের আলোয় আলোকিত হোক আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd