সিলেট ১৯শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ১৯শে শাবান, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১:৪৮ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ১, ২০১৮
শিক্ষামন্ত্রী তাদের বাড়ি ফিরে যাওয়ার আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করে শিক্ষকরা বলছেন, আমাদের দিকে কেউ নজর না দিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নজর দেবেন।
এমপিওভুক্তির দাবিতে গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে আসা এ নন-এমপিও শিক্ষকরা এ দাবিতে আমরণ অনশন, অবস্থান ধর্মঘট, শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর বিভিন্ন সময়ে স্মারকলিপি দিয়েছেন। এরপরও ২০১৬-১৭ এবং চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে নন-এমপিও শিক্ষকদের এমপিওভুক্তি অথবা বাড়তি ভাতার ব্যবস্থা করতে কোনো বরাদ্দই রাখা হয়নি। সরকারের শেষ বছরের বাজেটে শিক্ষকদের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখার জন্য আগে থেকেই রাজপথে নেমেছেন শিক্ষক কর্মচারীরা। সাত হাজারেরও বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও কর্মচারীরা এই অবস্থান কর্মসূচি ও অনশনে যোগ দিয়েছেন। কেউ কেউ প্ল্যাকার্ডে লিখেছেন, ‘বেতন দেন, না হয় গুলি করেন’, ‘এমপিও না হলে বাড়ি ফিরে যাবো না’, ‘মা ভাত দাও’, মা ‘এমপিও চাই’ ‘করুণা নয়, নিজেদের অধিকার চাই’ এমন বিভিন্ন স্লোগান লেখা হাতে ও শরীরের সাদা টি-শার্টে লিখে প্রেস ক্লাবের সামনে বসে আমরণ অনশন করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন, টানা পাঁচ দিন আন্দোলন চালিয়ে গেলেও আমাদের দিকে কেউ মুখ তুলে দেখছেন না। আমাদের দাবি আদায় হয়নি। তাই আমরণ অনশন কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হয়েছি। দাবি আদায় না হলে ঘরে ফিরে গিয়ে আমদের না খেয়ে থাকতে হবে। তাই এখানে আমরণ অনশন করে মরে যেতে চাই। তিনি বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীরা পরিবার-পরিজনের কাছে শেষ বিদায় নিয়েছে। যতদিন পর্যন্ত আমাদের এপিওভুক্তি না করা হবে ততদিন আমাদের এ আন্দোলন চলবে। প্রয়োজনে প্রাণ গেলে যাবে, তাও রাজি আছি। শিক্ষকদের দাবি, সরকার স্বীকৃত ৫ হাজার ২৪২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করতে হবে। অন্যথায় তারা ঘরে ফিরবেন না। বেগম গঞ্জের একটি বেসরকারি কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, তাদের প্রতিষ্ঠানটি ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত। আর তিনি শিক্ষকতা করছেন ২০০৪ সাল থেকে। কিন্তু এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সরকার থেকে কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এভাবে বাঁচা যায় না। ঝিনাইদহ জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হাজী বিশারদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ২০০৩ সাল থেকে একই স্কুলে শিক্ষকতা করছি। গ্রামের স্কুলে ছেলে-মেয়েরা স্বল্প বেতন কিংবা বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ পায়। কিন্তু তাতে তো একজন শিক্ষকের তেমন বেতন হয় না। তবুও বছরের পর বছর পাঠদান করিয়ে যাচ্ছি। ছেলে-মেয়েরা অন্তত শিক্ষা বঞ্চিত না হোক এই লক্ষ্যেই এ কাজ করি। কিন্তু বিনা বেতনে আর কতদিন শিক্ষকতা করতে পারবো সেটাও অজা না। অভাবের সংসারে আছে দুই ছেলে-মেয়ে। তাদেরও এই করুণ অবস্থায় পড়ালেখা বন্ধ রাখিনি। তিনি আরো বলেন, আমার স্ত্রীও একজন শিক্ষিকা। তার উপার্জনে কোনো রকম সংসার চলে। ধারকর্য করায় এখন আত্মীয়ের বোঝা হয়ে গেছি। আশা করছি প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য কিছু একটা করবেন। খুলনার তেরখাদা সোনারতরী নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সাগরিকা মজুমদার বলেন, দীর্ঘ ১৪বছর ধরে শিক্ষকতা করছি। স্কুলের প্রতি এক প্রকার মায়া জন্মে গেছে বলেই এর সঙ্গে এতদিন থাকা। এতদিন ধরে বিনা বেতনে পাঠদান করে আসছি। আশা ছিল সরকার আমাদেরকে দেখবে। তিনি আরো বলেন, ‘স্বামী সন্তানকে ঘরে রেখে ঢাকায় এসে আন্দোলন করছি। আশা একটাই, কেউ না দেখলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দেখবেন। কারণ তিনি শিক্ষাবান্ধব। শিক্ষামন্ত্রী শুধু আশা দিয়ে আসছেন। কিন্তু কিছুই করছেন না। এই আশায় থেকে আমরা এখন সমাজের বোঝা। অন্য কোথাও যে চাকরি করবো তারও কোনো বয়স নেই। সংসার চালাতে প্রতিবছর একটা করে গরু বিক্রি করতে হয়। মাঝে মধ্যে মনে হয় আত্মহত্যা করি।
বগুড়ার শিবগঞ্জের রায়নগর আদর্শ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা নুরুন্নাহার বলেন, শুরু থেকেই আন্দোলনে আছি। টাকা ধার করে ঢাকায় এসেছি। আশা এবার যদি কেউ আমাদের কথা শুনে। কিন্তু এবারও আশাহত হয়ে পড়ছি আমরা। শিক্ষামন্ত্রীর আশাবাদ এখন আমাদের কাছে অভিশাপ মনে হয়। এলাকার লোকজন এখন ব্যঙ্গ করে বলে, হাজী সাহেবের মেয়ে বিনা বেতনে চাকরি করে। গত ২৬শে ডিসেম্বর থেকে প্রেস ক্লাবের সামনে নতুন প্রতিষ্ঠানের এমপিও দাবিতে অবস্থান কর্মসূচির পর গতকাল থেকে আমরণ অনশনে রয়েছেন তারা।
এদিকে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক-কর্মচারীর ব্যানারে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণসহ ১১ দফা দাবিতে এবার লাগাতর আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। এসব দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। এ কারণে আগামী ২২শে জানুয়ারি থেকে সকল এমপিওভুক্ত স্কুল, কলেজ ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী টানা আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগামী ৯ই জানুয়ারি উপজেলা শহর পর্যায়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল এবং ইউএনও’র মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। ১৪ই জানুয়ারি জেলা শহরগুলোতে একই কর্মসূচি পালিত ও একইদিন রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। পরে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। আগামী ২১ থেকে ২৭শে জানুয়ারি স্থানীয়ভাবে জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক, সাংবাদিক, পেশাজীবী ও বুুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হবে। এর মধ্যে দাবি আদায় না হলে ২২শে জানুয়ারি থেকে অবিরাম ধর্মঘটে নামবে সরকার সমর্থিত শিক্ষক-কর্মচারীরা। এপিওভুক্ত ৯টি সংগঠনের শিক্ষক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ কারিগরি কলেজ শিক্ষক সমিতি রয়েছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd