সিলেট ২৩শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৯ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | ২২শে রজব, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ১২:৪৪ পূর্বাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭
ক্রাইম ডেস্ক : সিলেটের বিশ্বনাথে অলংকারী ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক নাজমুল ইসলাম রুহেল প্রদান করা ‘গুম-খুন’ হুমকির আতংকে বাড়ি ছাড়া হয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী হারুন মিয়া ইরন (৪৫)। তিনি উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের বড় খুরমা গ্রামের মৃত আছলম আলীর পুত্র। গত ৫ ডিসেম্বর দেশে আসলেও সেই আতংকে বাড়িতে বসবাস না করে সিলেট শহরে বসবাস করছেন তিনি (হারুন)।
সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনের সময় অলংকারী ইউপি নির্বাচনের ব্যয় মেটাতে প্রবাসী হারুন মিয়া ইরনের কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন ইউপি চেয়ারম্যান বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক নাজমুল ইসলাম রুহেল। চাঁদা দাবির সেই ১০ লাখ টাকা প্রবাসীকে হুমকি দেন চেয়ারম্যান রুহেল। আর চেয়ারম্যান রুহেলের প্রদান করা ‘গুম-খুন’ করার হুমকির আতংকে নিজের নিরাপত্তার জন্য বাড়ি ছাড়েন প্রবাসী হারুন।
এছাড়া জাল দলিল করে উপজেলার পনাউল্লাহ বাজারস্থ প্রবাসী হারুন মিয়া ইরনের মালিকাধীন ২২নং দোকান ঘরটি ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেল দখল করার পায়তারা করছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ‘১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি ও দোকান কোঠা দখলের অভিযোগ এনে’ ১৮ ডিসেম্বর চেয়ারম্যান রুহেলের নাম উল্লেখ ও আরোও ৫/৬ জনকে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত করে সিলেটের পুলিশ সুপার (এসপি) বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন প্রবাসী হারুন। এরপূর্বে একই ঘটনায় ১১ ডিসেম্বর বিশ্বনাথ থানায় এজাহারটি দায়ের করে ছিলেন প্রবাসী। কিন্তু ওই এজাহারটি থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) দীর্ঘ এক সপ্তাহেও আমলে না নিয়ে সময় কালক্ষেপন করায় পরবর্তীতে প্রবাসী পুলিশ সুপার বরাবরে এজাহারটি দাখিল করা হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যানের সৃষ্ট জাল দলিল উদ্ধার ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠ বিচার ও নিজের নিরাপত্তার দাবি প্রসাশনের কাছে করেছেন প্রবাসী।
এজাহারে প্রবাসী ইরন উল্লেখ করেন, ২০১৬ সালে অসুস্থ পিতাকে দেখতে দেশে আসেন তিনি। এসময় অভিযুক্ত নাজমুল ইসলাম রুহেল ‘ইউপি নির্বাচনে’ প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী ব্যয় মিটানোর জন্য প্রবাসীর বাড়িতে গিয়ে তার (প্রবাসী) কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদার টাকা দিতে প্রবাসী অস্বীকার করায় রুহেল তাকে (প্রবাসী) উচিৎ শিক্ষা দিবে মর্মে হুমকি দিলে ভয়ে দেশ থেকে যুক্তরাজ্যে চলে যান প্রবাসী হারুন। সেখানে যাওয়ার পর প্রবাসী ২৪/০১/২০১৭ তারিখে স্থানীয় পনাউল্লাহ বাজারে থাকা তার মালিকানাধীন ২২নং দোকান ঘরটি রক্ষনাবেক্ষনের জন্য বড়তলা গ্রামের রুকন মিয়াজী’কে লিখিত আমমোক্তার নিয়োগ করেন।
যুক্তরাজ্যে থাকাবস্থায় প্রবাসী হারুন জানতে পারেন অভিযুক্ত নাজমুল ইসলাম রুহেল বাদী হয়ে হয়রানী করার জন্য প্রবাসীর বড় ভাই শিব্বির আহমদ বাবুল ও তার নিযুক্ত আমমোক্তার রুকন মিয়াজী অভিযুক্ত করে বিশ্বনাথ থানায় সাধারণ ডায়েরী (৮৪২, তাং ১৮/০২/১৭ইং) দায়ের করেছেন। পরবর্তিতে বিশ্বনাথ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতে নন.জিআর মামলা নং ৪২/২০১৭ বিচারাধীন থাকা অবস্থায় অভিযুক্ত চেয়ারম্যান রুহেল প্রবাসীর মালিকানাধীন পনাউল্লাহ বাজারস্থ ২২নং দোকান ঘরটি তার (রুহেল) নিকট প্রবাসী বিক্রি করেছেন মর্মে ভূয়া বিক্রয় রশিদের ফটোকপি দাখিল করে। নির্বাহী আদালত কর্তৃক বার বার নিদের্শ দেয়া স্বত্ত্বেও শুনানীকালে চেয়ারম্যান রুহেল বিক্রয়ের মূল রশিদ আদালতে দাখিল করতে পারেন নাই। বরং মূল রশি হারিয়ে গেছে জিডি (নং ১২৬২, তাং ২৬/০২/১৭ইং) দায়ের করেছেন। পরবর্তিতে ২৪.০৯.১৭ইং তারিখে রুহেল চেয়ারম্যান সৃষ্ট মামলা খারিজ করে নথিজাতের আদেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিশ্বনাথ আদালত। পরবর্তিতে বিষয়টি মিমাংশা করার জন্য এলাকার মুরব্বীরা উদ্যোগ গ্রহন করলে সালিশ কমিটির সভাপতি বশির আহমদের কাছে ‘অভিযুক্ত রুহেল চেয়ারম্যানের সৃষ্ট জাল বিক্রয় রশিদ ও দোকান ঘরের চাবি’ জমা দেওয়া হয়। যা অদ্যবধি বশির আহমদের কাছে জমা আছে বলে এজারে উল্লেখ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান রুহেলর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী, খুন, ঘর জ্বালানো, মাদক ব্যবসা’সহ বিভিন্ন মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে এজাহারে।
নিজের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন বিশ্বনাথ উপজেরা অলংকারী ইউপি চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম রুহেল।
পুলিশ সুপারের কাছে প্রবাসীর দেয়া এজাহারটি তদন্ত করছেন ওসমানীনগরের সার্কেল মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম। তিনি বলে, ইতোমধ্যে সরেজমিনে একবার তদন্ত করেছেন। শিগগিরই তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd