সিলেট ৯ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | ২৪শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৫ হিজরি
প্রকাশিত: ১০:১০ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৭
এম. শামীম আহমেদ : সুরমা নদীর উপর নির্মিত হয় কাজির বাজার সেতু। ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্রীজের উদ্বোধন করেন। ৩শ’ ৯১ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৮ দশমিক ৯০ মিটার প্রস্তের (উভয় পার্শ্বে) এই সেতুর শহরের প্রান্তে ২৩০ মিটার দৈর্ঘ্য ও দক্ষিণ সুরমা এলাকায় ৬৩৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে এপ্রোচ দিয়ে সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ১৮৯ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সিলেটবাসীর বহুল প্রত্যাশিত ‘কাজির বাজার পিসি গার্ডার সেতু’ উদ্বোধনের শুরুতে খুব জাকজমক পূর্ণ ছিল। যদিও নগরীর যানজট নিরসনের লক্ষ্যে সেতুটি স্থাপন করা হয়েছিল কিন্তু উদ্বোধনের পর এটি পর্যটন স্পট হিসেবে পরিচিত লাভ করে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পর্যটকরা এখানে এসে সৌন্দর্য উপভোগ করতেন। উপরে লাল-নীল আলোকবাতি সেতুটিকে আরো সৌন্দর্যমন্ডিত করে গড়ে তুলেছিল। প্রতিদিন বিকালে, ঈদ ও পূজার সময়ে বিশেষ করে প্রতিটি সরকারি বন্ধের দিনে এ ব্রীজে পর্যটকরা ভীড় জমায়। এতোই সুন্দর ছিল এ সেতুটি দেখলে যে কারো মন জুড়িয়ে যায়।
আবেদনময়ী মানুষের প্রাণ খুলে ঘুরে বেড়ানোর একটি স্পট হলো এ সেতু। যান্ত্রিক জীবন থেকে বেড়িয়ে এসে খোলা আকাশের নিচে একটু প্রশান্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ করে দিয়েছে এ সেতু। বৃহত্তর সিলেটে এমন প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা নেই বললেই চলে। উদ্বোধনের পর থেকেই যানবাহনের চেয়ে মানুষের পদচারণায় মুখর ছিল ব্রীজটি। সুযোগ পেলেই মানুষ পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বন্ধব নিয়ে ঘুরতে আসছেন এখানে। আর সেই সাথে চলছে সেলফীবাজি।
সেতুটি উদ্বোধনের শুরু থেকে প্রবেশমুখ থেকে শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ছিল মানুষের ভীড়। সবাই আসতেন শান্ত বিকেল, সূর্যাস্থ, আর কোমল পরিবেশ উপভোগ করার জন্য। আর মানুষের পদচারণা দেখে অনেক চটপটি আর ফুসকা ব্যবসায়ীরাও ভিড় করছেন সেখানে। বাদ পরেনি আইস ক্রীম, চটপটি-চানাচুর আর বাদাম ওয়ালারা। ভ্রাম্যমান চা ওয়ালা ছাড়াও ভ্যানগাড়ি দিয়ে চা বিক্রি করছেন অনেকে। আর ক্রেতাদের বসানোর জন্য চেয়ার-টেবিল সাজিয়ে রেখেছেন এসব ক্ষুদ্র দোকানিরা। তরুণ তরুণী, শিক্ষক, সাংবাদিক, সামাজিক ও সংস্কৃতি কর্মী, ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি চাকুরীজীবিরাও আসছেন পরিবার নিয়ে ঘুরতে। আর আনন্দের মুহুর্তগুলোর স্মৃতি ধরে রাখতে তুলছেন একের পর এক ছবি। তাই এ ব্রীজ সেলফী ব্রীজ নামে পরিচিত লাভ করে।
কিন্তু বর্তমানে কাজীর বাজার ব্রীজের সেই মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য আর নেই। একসময় ব্রীজের দেয়াল ঘীরে ছিল পর্যটকদের ভীড়। আর এখন সেই দেয়ালে আঁকা হয়েছে বিভিন্ন প্রতিচ্ছবি। দেয়ালে আকা রংতুলি এক সময় পর্যটকদের মানুষের মন জয় করতো কিন্তু এখন সে সৌন্দর্যটা আর নেই। দেয়ালে দেয়ালে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের পোষ্টার লাগানো হয়েছে। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ, ইসলাম শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র মজলিস, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ (মার্কসবাদী), ছাত্র মৈত্রী, যুব মৈত্রী, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়া সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের লেখনি, পোস্টার লাগানো হয়েছে। যাতে দিন দিন ব্রীজের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তাছাড়া স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যা পড়ে এলাকার যুব সমাজ ব্রীজে আড্ডা দিতে যায়। তারা তাদের বন্ধু বান্ধব নিয়ে সেখানে বিভিন্ন জন্মদিনের পার্টি, অনুষ্ঠান করে থাকে। গত ২ দিন আগেও এক যুব সংগঠক স্থানীয় পথশিশুদের নিয়ে জন্মদিনের পার্টি করেন। কিন্তু সম্প্রতি ঐ ব্রীজকে পুঁজি করে একটি কুচক্রি মহল তাদের অশুভ ফায়দা হাসিল করছে। সন্ধ্যা পড়েই একটি মাদক চক্র এখানে এসে ইয়াবা ফেনসিডিল বিক্রি করতে থাকে। এ চক্রের সদস্যরা ছন্মবেশে চলাফেরা করে। স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিন সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সাথে মাদক ব্যবসায়ীরা এখানো জড়ে হয় এবং ইয়াবা, ফেনসিডিল সহ মাদকদ্রব্য বিক্রি করতে থাকে। যেটা এক সময় দর্শনীয় স্পট ছিল সেটা এখন মাদক বিক্রেতাদের স্পটে পরিণত হয়েছে। মাদক চক্রের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ঐ এলাকার যুব সমাজ ধ্বংসের মুখে পতিত হবে খুব শ্রীঘ্রই।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ফুসকা, আইস ক্রীম, চটপটি-চানাচুর বাদামওয়ালা আর ভ্রাম্যমান চা ওয়ালারা ব্রীজের অর্ধেক রাস্তা জুড়ে আছে। জনসাধারণের চলাচলের জন্য ব্রীজের পাশে যে জায়গাটুকু রাখা হয়েছে ঐ জায়গায় এখন চটপটিওয়ালার দখলে। এতে পথচারীরা চলাচলে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। চটপটিওয়ালার দোকান অতিক্রম করে যেতে হলে রাস্তার মাঝমাঝিতে চলাচল করতে হয়। পর্যটক, শিশু বাচ্চা সহ পথচারীরা চলাচলে যেকোন সময় বড় ধরণের দূঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এব্যাপারে চটপটিওয়ালাদের সাথে কথা বললে তাদের এই আধিপত্য বিস্তারের আসল রহস্য উঠে আসে। জানা যায়, দৈনিক ও মাসিক হারে প্রতিটি ভাম্যমান ব্যবসায়ীরা চাঁদা প্রদান করে আসছেন। পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতারা গুণছেন অবৈধ এ টাকা। তাই ভাম্যমান এ ব্যবসায়ীরা এভাবেই দাপট খাটিয়ে ব্যবসা করে আসছে।
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd