সিলেট ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি
প্রকাশিত: ২:৩৬ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ১৫, ২০১৭
নিজস্ব প্রতিবেদক : গত বোরো মৌসুমের ধান অকালে পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পর এবার চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতেই হাওরের পানি ধীর গতিতে হ্রাস পেয়ে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
হাওরপাড়ের বিভিন্ন এলাকার বোরো কৃষকরা জানিয়েছেন, গত বছর এই সময়ে যেসব বীজতলায় চারা তৈরি করা হয়েছিল; এই বছর ওইসব বীজতলা থেকে পানি নামছে না। এতে করে বোরো জমি চাষাবাদ পিছিয়ে যাওয়ার আশংকা করছেন তারা।
হাওরের পানি ধীর গতিতে হ্রাস পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ও সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (ওয়ান) এর নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন এবার অসময়ে বেশী বৃষ্টি হওয়ায় হাওরের পানি কম হ্রাস পাচ্ছে। যার কারণে বোরো বীজতলা তৈরিতে কিছুটা দেরী হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (ওয়ান) এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিকি ভুঁইয়া জানিয়েছেন গতকাল রবিবার জেলার সুরমাসহ পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোতে ৫.৩ মিটারে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জের বোরো জমির প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর। গত বছর বোরো জমি চাষাবাদ করা হয়েছিল ২ লাখ ২৩ হ্জাার ৮৫ হেক্টর। এই বছর বোরো বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৩০০ হেক্টর। গত বছর বোরো বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর। গত বছরের চেয়ে এই বছর বোরো জমি ও বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা প্রাথমিকভাবে বেশী নির্ধারণ করা হলেও হাওরের পানি ধীর গতিতে হ্রাস পাওয়ায় বোরো চাষাবাদ পিছিয়ে যেতে পারে।
এই বছর জেলার ১১ হাজার ৩০০ হেক্টর বীজতলার জন্য বিএডিসি ৫ হাজার ৫৬৫ মে.টন বীজ ধান ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রির জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। বরাদ্দকৃত ওই বীজ ধানের মধ্যে ১৮০০ মে.টন বীজ ধান ব্রি-২৯ জাতের। অন্য সব বীজ ব্রি-২৮ জাতের। এসব বীজ ধানের পাশাপাশি সরকারিভাবে ৩ লাখ কৃষককে পুনর্বাসনের জন্য প্রত্যেককে ব্রি-২৮ জাতের ৫ কেজি করে ১৫০০ মে. টন বীজ বিনামূল্যে সরবরাহ করছে। ইতোমধ্যে জামালগঞ্জ ও শাল্লা ছাড়া জেলার অন্য উপজেলাগুলোতে সরকারি বীজ ধান বিতরণ শুরু হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পাউবো অফিস সূত্রে জানা যায়, এই বছর সুনামগঞ্জের হাওরের চেয়ে নদীতে পানির পরিমাণ অনেক বেশী রয়েছে। বর্তমানে হাওরের পানির পরিমাণ ২ বা ২.৫ মিটারে থাকলেও নদীর পানির পরিমাণ গড়ে ৫.৩ মিটার । যার কারণে হাওরে পানি বের হতে দেরী হচ্ছে। তবে সুনামগঞ্জে এখন নদীর পানি প্রতিদিন ১০ সেন্টিমিটার করে কমছে। এভাবে নদীর পানি কমলে চলতি নভেম্বর মাসের শেষ দিকে হাওরের পানি দ্রুত হ্রাস পাবে এবং জানুয়ারির মধ্যে হাওরের সব পানি বের হয়ে যাবে।
কালীয়াকুটা হাওরের মির্জাপুর গ্রামের কৃষক এনামুল হাসান বলেন,‘ হাওরের পানি আশানুরুপ কমছে না; যার কারণে এবারের বোরো মৌসুম অন্তত সপ্তাহ-দশদিন পিছিয়ে গেছে। বীজতলায় এখনও হাটু পানি রয়েছে। ওই পানি যদি কমে তাহলে আমরা চারা তৈরি করব। ’
দক্ষিণ সুনামগঞ্জের জয়কলস ইউনিয়নের কাই হাওর পারের তেঘরিয়া গ্রামের গৃহস্থ অবনী কান্ত দাস বলেন,‘এই বছর হাওরের পানি খুব ধীর গতিতে কমছে। এভাবে পানি কমলে জমিতে ধান রোপণ পিছিয়ে যাবে। গত বছর এই সময়ে বীজতলায় চারা তৈরির ধুম ছিল; কিন্তু এই বছর পানিই নামছে না।’
জামালগঞ্জের বেহেলী ইউনিয়নের হালীর হাওর পারের হরিনগর গ্রামের কৃষক জালাল মিয়া বলেন,‘ গত বছর হাওরের সব ধান পানিতে গেছে। এইবার সবার প্রস্তুতি ছিল গতবারের আগেই হাওর ধান চাষাবাদ শুরু করার; কিন্তু চারা তৈরিতেই দেরী হচ্ছে। বীজতলায় এখনও পানি রয়েছে। আরো সপ্তাহখানেক পর বীজতলা ভাসবে। এরপর চারা তৈরির কাজ শুরু হবে।’
শাল্লা ছায়ার হাওরপাড়ের ডুমরা গ্রামের কৃষক খিরেন্দ্র তালুকদার গতকাল রবিবার বিকালে দৈনিক সুনামগঞ্জের খবরকে জানিয়েছেন, প্রতিদিন এক আঙ্গুল-আধ আঙ্গুল করে হাওরের পানি কমছে। কৃষকরা বোরো জমি চাষাবাদ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (ওয়ান) এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বকর সিদ্দিক ভুঁইয়া বলেন,‘এবছর অসময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে; যার কারণে এখনও হাওরে পানির পরিমাণ একটু বেশী রয়েছে। ’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. জাহেদুল হক বলেন,‘ হাওরের পানি ধীর গতিতে হ্রাস পাওয়ায় বোরো বীজতলা তৈরিতে কিছুটা দেরী হচ্ছে।’
Sharing is caring!
………………………..
Design and developed by best-bd